কাবুলের মেয়েরা কেবল বাথরুম পরিষ্কারের চাকরি করতে পারবে!
২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:০৫
আফগানিস্তানের সরকার গঠনের পর থেকেই সুর বদলে গেছে তালেবানদের। ক্ষমতা দখলের পর নারী অধিকার নিশ্চিত করার কথা বললেও তালেবান এখন বলছে উল্টো কথা। এরই মধ্যে চাকরিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কাবুলের স্থানীয় সরকার। সেখানকার বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত মেয়েদের ঘরে থাকতে বলেছিল। এবারে সেই বিধিনিষেধ থেকে কিছুটা সরে এলেও সেটিকে ‘মন্দের ভালো’ বলার সুযোগও নেই। কেননা কাবুলের ভারপ্রাপ্ত মেয়র স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, বাথরুম পরিষ্কারের কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ মেয়েরা করতে পারবেন না!
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) কাবুলের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হামদুল্লাহ নোহমানি দিয়েছেন এই ঘোষণা। আর এই ঘোষণার মাধ্যমে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের স্থানীয় সরকারে মেয়েদের চাকরি নিষিদ্ধের ঘোষণা স্পষ্ট হয়েছে।
মেয়র নোহমানি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা তাদের (নারী কর্মীদের) সময়মতো কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু ইসলামিক আমিরাত (তালেবান সরকারের আনুষ্ঠানিক নাম) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিছু সময়ের জন্য তাদের কাজ বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এরপর আমরা কেবল সেই নারীদেরই কাজে আসার অনুমতি দিয়েছিলাম যাদের আমাদের প্রয়োজন ছিল।
এই ‘প্রয়োজনে’র বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নেহমানি বলেন, ‘এমন সব কাজের জন্য নারীদের আমাদের প্রয়োজন যেগুলো পুরুষরা করতে পারে না বা যেসব কাজ পুরুষের নয়।’ আর এই কাজের উদাহরণ দিতে গিয়েই মেয়র বলেন, বাজারে পাবলিক মহিলা টয়লেট রয়েছে যা পুরুষরা পরিষ্কার করতে পারবে না। তাই এই কাজের জন্য যেসব নারী কর্মী নিয়োজিত আছে, তারা কাজ চালিয়ে যাবে। বাকি কাজগুলোয় পুরুষ কর্মীরা নারী কর্মীদের স্থলাভিষিক্ত হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় না আসা পর্যন্ত তাদের (নারী কর্মী) বাড়িতে অবস্থান করতে বলেছি।
নোহমানি জানিয়েছেন, কাবুল সিটিতে চাকরিরত দুই হাজার ৯৩০ জনের ২৭ শতাংশ নারী কর্মী। সেই হিসাবে স্থানীয় সরকারের অধীন কর্মরত প্রায় আটশ নারী কর্মী চাকরিচ্যুত হবেন এই ঘোষণার মাধ্যমে।
নারীদের প্রতি তালেবান সরকারের এমন কট্টরপন্থি অবস্থানের বিষয়টি গত কয়েকদিন ধরেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শুরুতে তারা নারীদের পড়ালেখা ও চাকরির সুযোগ দেওয়াসহ নারী অধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই অবস্থান বদলে যেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে একা ঘরের বাইরে যেতে নিষেধাজ্ঞাসহ মুখসহ পুরো শরীর ঢাকার নিয়ম জারি করেছে তারা। কাবুলের মেয়র নেহমানির কথাতেও এটি স্পষ্ট— মর্যাদাপূর্ণ কোনো কাজ করার সুযোগই প্রকৃতপক্ষে আফগান নারীরা পাচ্ছেন না।
চাকরির সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি মেয়েদের পড়ালেখাও বন্ধের উপক্রম হয়েছে আফগানিস্তানে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী-পুরুষ সহশিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে কেবল ছেলে শিক্ষার্থী ও পুরুষ শিক্ষকদের যোগ দিতে বলা হয়েছে। ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত’ মেয়ে শিক্ষার্থীদের এসব স্কুলে যেতে না করা হয়েছে। নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, এর মাধ্যমে হয়তো মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধেরই পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
তালেবান সরকারের নারীবিরোধী এমন অবস্থানের বিষয়ে দেশটির নারী অধিকারকর্মীরা প্রতিবাদ-বিক্ষোভও চালিয়ে যাচ্ছেন। রোববার নেহমানি যখন স্থানীয় সরকার থেকে নারী কর্মীদের চাকরিচ্যুতির ঘোষণা দিচ্ছেন, ওই সময়ও কাবুলে সাবেক নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যেটিকে এখন নাম পাল্টে পাপ-পূণ্য মন্ত্রণালয় করা হয়েছে, সেই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন নারীরা।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
কাবুল স্থানীয় সরকার নারী কর্মী চাকরিচ্যুত বাথরুম পরিষ্কারের চাকরি মেয়র নেহমানি