Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তালেবানের কর্মকাণ্ড ইসলামি মূল্যবোধবিরোধী

রোকেয়া সরণি ডেস্ক
২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:৩৯

আফগান নারীদের সঙ্গে তালেবান যা করছে তা ইসলামি মূল্যবোধ সমর্থিত নয় বলে দাবি করেছেন নারী অধিকার কর্মী ফওজিয়া কূফি।

রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কর্মস্থলে ফেরার দাবিতে আফগান নারীদের এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

সেদিনই কাবুলের মেয়র কয়েকশ মেয়ে কর্মীকে স্থানীয় সরকারের দফতরের কর্মস্থলে ফিরে যেতে নিষেধ করেন। মেয়েরা শুধুমাত্র নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু পাবলিক টয়লেট পরিষ্কার ছাড়া আর কোনো কাজ করতে পারবে না বলে ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে, শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও শিক্ষকদের ফিরে যেতে বলা হলেও নির্দেশনায় মেয়েদের কোন কথাই উল্লেখ ছিল না। এক সপ্তাহ আগে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থাকা আফগান অর্থ মন্ত্রণালয় তার নারী কর্মচারীদের উপযুক্ত ‘কর্ম পরিবেশের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত’ কর্মস্থলে ফিরে না যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়াও পোশাকে বিধিনিষেধ, একা বাইরে যেতে নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পোশাকসহ নানান নিষেধাজ্ঞা জারির প্রেক্ষিতে ওই সমাবেশ করছিলেন নারী অধিকারকর্মীরা।

আফগানিস্তানের বাইরে থেকে সিএনএনের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে কূফি বলেন, ‘আলোচনার সময় এবং তার আগে তালেবান তাদের বিবৃতিতে বলেছিল যে নারীদের ইসলামী আইন অনুযায়ী কাজ করার এবং পড়াশোনার অধিকার আছে, কিন্তু আজ আফগানিস্তানে যা চলছে তা তালেবানদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিই শুধু নয়, ইসলামি মূল্যবোধেরও বিরুদ্ধে।’ আপনি কীভাবে একটি প্রজন্মকে পড়া ও লেখা থেকে বঞ্চিত করছেন- একদল মানুষকে লেখাপড়া, জীবন এবং স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা শুধুমাত্র একটি সামাজিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়’, যোগ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নারী ও মেয়েদের ওপর তালেবানের জারি করা আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা পর এই প্রতিবাদ হয়। আফগানিস্তানের সাবেক আইন প্রণেতা, শান্তি আলোচক এবং নারী অধিকার কর্মী ফওজিয়া কূফির নেতৃত্বে নারী নাগরিক সমাজের আন্দোলন মুভমেন্ট ফর চেঞ্জ পার্টি রোববার ওই পদযাত্রার আয়োজন করে। সাবেক নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভবনের সামনে ওই বিক্ষোভ করছিলেন তারা। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এই ভবনে পাপপুণ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় শুরু করে তালেবান।

শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র এবং শিক্ষকদের শনিবার স্কুলে ফিরে আসার নির্দেশ দিলেও সেই ঘোষণায় ছাত্রীদের কথা উল্লেখ করেনি। এর ফলে আফগান মেয়েরা মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বাদ পড়বে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তালেবান সরকার মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করে, ছাত্রীদের ক্লাসরুমে ফেরানোর আগে তাদের জন্য একটি ‘নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা’ স্থাপন করা দরকার।

শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সিএনএন’র কাছে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ মেয়েদের পড়াশোনার অনুমতি দেওয়া হবে বলে দাবি করেন। ‘নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ছাত্রীদের ক্লাসের সময় কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে’, বলেন তিনি। তালেবানদের আগের বিবৃতি পুনরাবৃত্তি করে মুজাহিদ আরও বলেন, ‘আমরা নারীদের অধিকারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ তবে তা শরীয়া আইনের তালেবানের নিজস্ব ব্যাখ্যা অনুসারে।

এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে নারী অধিকারকর্মী কূফি বলেন, ‘তালেবানের কর্মকান্ড এখন পর্যন্ত ইঙ্গিত দেয় যে, তারা এখনও নারীর অধিকারে বিশ্বাস করে না’। একথা বলে তিনি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তালেবানকে তার কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসতে চাপ দিতে অনুরোধ করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজ আমরা শুনছি মেয়েদের শিক্ষার অনুমতি নেই, তাদের মুখের উপর কর্মস্থলের দরজা বন্ধ করা হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বে কোনো নারী প্রতিনিধি নেই।’ ‘তাদের জানা উচিত যে শুধুমাত্র নারীদের সম্মান এবং অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা শান্তিতে এবং এই পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।

এদিকে জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনের প্রাক্কালে ইউএন নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থা প্রধান অ্যান্টেনিও গুতেরেস আফগান সরকারে সব জাতির প্রতিনিধি থাকার ব্যাপারে জোর দেন।

একইসঙ্গে, নারীদের কাজে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি মেয়েদের সর্বস্তরে শিক্ষা যেন নিশ্চিতের ওপরও জোর দেন তিনি।

সারাবাংলা/আরএফ/একেএম

আফগান তালেবান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর