Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গতি নেই ৫ হাসপাতাল উন্নয়ন প্রকল্পে

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপনডেন্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:২৮

ঢাকা: গতি নেই পাঁচ হাসপাতাল উন্নয়ন প্রকল্পে। অনুমোদনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যয় হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ অবস্থায় ভারতীয় ঋণের অর্থ বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল ও এনসিলারি ভবন ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ এবং জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল, নোয়াখালী’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গত ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত স্টিয়ারিং কমিটির সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। ওই সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয় গত ১২ সেপ্টেম্বর।

কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, সভায় অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) জানিয়েছেন, প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২২ মে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এর অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় ২ হাজার ১০৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬৬৩ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং প্রকল্প সহায্যে (ভারতীয় এলওসি) ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটির গত জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, যা প্রকল্পের মোট প্রাক্কলনে শূণ্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। প্রকল্পটি থেকে ভারতীয় এলওসি বাদ দেওয়ার জন্য প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ২ হাজার ৭৮১ কোটি ৭৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। অনুমোদিত প্রাক্কলনের ব্যয়ের তুলনায় প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনের প্রাক্কলিত ব্যয়ের পরিমাণ ৬৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ২২ হাজার টাকা বেশি, যা অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) প্রাক্কলনের চেয়ে ৩২ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। সংশোধনীতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।

সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সভার সভাপতি বলেন, প্রকল্পের কাজের মানের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না। সিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বেশি কাজ করার প্রয়োজন নেই। তবে চুক্তির চেয়ে কম কাজ যেন না করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, হাসপাতালগুলিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে জায়গার সাশ্রয় হবে। এতে ভবন নির্মাণেও ব্যয় কমে আসবে এবং হাসপাতাল প্রিমিসিসে বেশি সংখ্যক বৃক্ষরোপণ করে সৌন্দর্য বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বাড়বে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, অনুমোদিত মূল ডিপিপিতে উল্লিখিত ২১টি বিভাগের সঙ্গে সংশোধিত ডিপিপিতে ১০টি নতুন বিভাগ চাহিদার ভিত্তিতে সংযুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনুমোদিত প্রাক্কলন গণপূর্ত বিভাগের ২০১৪ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী করা হয়েছিল। বর্তমানে ২০১৮ সালের রেট সিডিউল প্রযোজ্য। সে অনুযায়ী সকল ভবনের নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপির ওপর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যত তলা ভিত্তি তত তলা বিল্ডিং নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া বিভাগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচ বেড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে সংশোধিত আরডিপিপিতে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে। সভাপতি ১০টি বিভাগ বাড়ানো চাহিদার ভিত্তিতে করার গুরুত্ব দেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) মতামত নিয়ে দ্বিতীয় এলওসির অর্থায়ন প্রকল্প হতে বাদ যাওয়ায়ও প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ।

প্রকল্প পরিচালক জানান, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের চাহিদার ভিত্তিতে ১০টি নতুন বিভাগ ও যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। এত বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার জন্য ঢাকায় আসার প্রবণতা হ্রাস পাবে। ফলে ঢাকার হাসপাতাল গুলোতে রোগীর চাপ কমবে।

কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, আসবাবপত্র কেনার খাতে ডিপিপি অনুযায়ী ৩৫ কোটি ২২ লাখ ৪২ হাজার টাকা ছিল এবং আরডিপিপিতে ১০২ কোটি ৭০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ধরা হয়েছে, যা অনুমোদিত ডিপিপির তুলনায় ১৯১ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ১০টি নতুন বিভাগ সংযোজন করার ফলে আসবাবপত্রের আইটেম বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়েছে। আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে রোগীর প্রফাইল, চিকিৎসা, পরীক্ষা নিরীক্ষা ডাটাবেইজের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। এজন্য ডাটাবেইজ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার প্রস্তুতের জন্য প্রায় ৩৩ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।

তিনি আরও বলেন, অনুমোদিত ডিপিপিতে ৫টি গাড়ির সংস্থান রাখা হয়। সংশোধিত আরডিপিপিতে ১৯টি গাড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে ডিপিপিতে ৩ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়।
সর্বমোট ১৯টি গাড়ির সংস্থান রাখা হয়েছে ।

এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বলেন, গাড়ির সংস্থানের ক্ষেত্রে গাড়িচালকের জন্য প্রকল্পের জনবল কমিটির সম্মতি ছাড়া কোনো সংস্থান রাখা যাবে না। তাছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী এবং হাসপাতাল পরিচালকদের অফিসিয়াল গাড়ি রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রকল্প থেকে অপ্রয়োজনীয় গাড়ীর সংস্থান রাখা ঠিক হবে না। প্রয়োজনে তাদের অফিসিয়াল গাড়ি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

সারাবাংলা/জেজে/এসএসএ

উন্নয়ন প্রকল্প

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর