মেক্সিকোতে দিনে ১০ নারী ও শিশু হত্যা
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:০২
মেক্সিকোতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ জন নারী ও মেয়েশিশুকে হত্যা করা হয়। ভুক্তভোগীর পরিবার পুলিশের সহায়তা তো পায়ই না বরং প্রায়শই নিজ উদ্যোগে এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে হয় বলে সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার মাত্রা তুলে ধরার পাশাপাশি হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষের আগ্রহের অভাবের কথাও জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক ওই মানবাধিকার সংস্থা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেক্সিকো ধারাবাহিকভাবে ফেমিসাইডের ঘটনা তদন্তে ব্যর্থ হচ্ছে। এভাবে ভুক্তভোগীদের জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করতে না পারার সঙ্গেসঙ্গে তাদের প্রতি সহিংসতা রোধেও ব্যর্থ হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘উত্তর মেক্সিকোতে নারীরা সহিংসতার শিকার হয় এবং এ ধরনের ঘটনার তদন্ত করতে না পারা ও প্রতিরোধে ব্যর্থতা গল্পকথা নয় বরং বৃহত্তর বাস্তবতার অংশ।’
মেক্সিকোতে কয়েক দশক ধরে নারীবাদী ও নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে— যাকে বলা হচ্ছে ফেমিসাইড।
সবচেয়ে কুখ্যাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটে ১৯৯০ এর দশকে যখন সীমান্তবর্তী সিউদাদ জুয়ারেসে প্রায় ৪০০ নারীকে হত্যা করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং ক্রমবর্ধমান নারীবাদী আন্দোলন দমন, নারীদের হত্যাকাণ্ড বন্ধের পদক্ষেপে কর্তৃপক্ষের অনীহা প্রমাণিত সত্য।
কুয়েরেতারো রাজ্যের নারী অধিকারকর্মী মারিক্রুজ ওকাম্পো বলেন, প্রশ্নটি সবসময়ই রাজনৈতিক সদিচ্ছার। ফেমিসাইডের হার মাত্রাছাড়া উচ্চতায় পৌঁছালে স্থানীয় সরকারগুলোর কাছে তা বন্ধে যেসব ব্যক্তিরা তদবির করছিলেন তাদের একজন ওকাম্পো। ফেমিসাইড নিরসনে তিনি সচেতনতা বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু গভর্নররা তাদের রাজ্যের ভাবমূর্তি এবং বিনিয়োগ নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না, তাই এ ধরনের পদক্ষেপ নেননি। এমনকি তারা সমস্যা আছে সেটি স্বীকারও করতে চান না।
রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডরও সমস্যাটিকে উপেক্ষা করেছেন। তিনি চলতি বছর ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিক্ষোভরত নারীদের ‘রক্ষণশীল’ বলে চিহ্নিত করেন এবং বিক্ষোভের পেছনে একটি কালো হাতের হস্তক্ষেপের অভিযোগও করেন।
গত বছর মেক্সিকোজুড়ে নারীদের বিরুদ্ধে ক্রম:বর্ধমান সহিংসতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেক্সিকোর সকল নারীদের বলুন যে, তারা সুরক্ষিত এবং তাদের জন্য শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য যা যা করা সম্ভব তা করছি।’ কিন্তু রাষ্ট্রপতির এই দাবি স্বত্বেও গত বছর মেক্সিকোতে ৩ হাজার ৭২৩ জন নারী হত্যার রেকর্ড হয়েছে। সেই হত্যার মধ্যে ৯৪০ টির তদন্ত হয়েছে ফেমিসাইড হিসেবে।
অ্যামনেস্টির রিপোর্টে তিন পাশে ভয়ঙ্কর শহরতলী ঘেরা মেক্সিকো রাজ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যেটি গত দশকে ফেমিসাইডের জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্টই নন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং মেক্সিকো রাজ্যের সাবেক গভর্নর এনরিক পেনা নিটোও তার শাসনামলে সমস্যাটি উপেক্ষা করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়াদের পরিবারের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা নিয়োগ করলে সরকারি তদন্তকারীরা তাদের সহায়তা করেনি। অনেক ক্ষেত্রে, অপরাধস্থলের দৃশ্য ও আলামত নষ্ট করার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা প্রায়ই ভিকটিমদের মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া ভৌগলিক অবস্থানের তথ্যও গুরুত্ব দেয়নি।
হত্যাকাণ্ডের শিকার জুলিয়া সোসার সন্তানদের বিশ্বাস তাদের মা তার সঙ্গীর হাতে হত্যার শিকার। মেয়ে দুটো সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির সম্পত্তির মধ্যে পুতে রাখা তাদের মায়ের লাশ আবিষ্কার করে। কিন্তু, ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার এবং তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তাদের কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এক বোন পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকার বলে যে তদন্ত প্রক্রিয়া চলার সময় পুলিশ অফিসার ঘুমিয়ে পড়েছিল।
সোসার সঙ্গী ফাঁসিতে ঝুলে পুলিশকে মামলা বন্ধ করতে প্ররোচিত করেছিল। যদিও পরিবারের দাবি পুলিশ চাইলে অন্য পথ ধরেও তদন্ত চালাতে পারত। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি যেসব রাজ্যে মাদক সংশ্লিষ্ট সহিংসতা বেশি যেখানে ফেমিসাইডের ঘটনাও বেশি ঘটে।
সারাবাংলা/আরএফ/একেএম