স্বাস্থ্যের ‘বিতর্কিত’ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলই যথেষ্ট নয়: টিআইবি
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:১০
ব্যাপক ঘুষ লেনদেন ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশের প্রায় ছয় মাস পর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও কার্ডিওগ্রাফার পদে ১৮০০ জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ‘খাতায় অস্পষ্টতা পাওয়া গেছে’— এমন কারণ দেখিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি কেবল বাতিল করার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি এ ঘটনায় আনীত অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ঘুষ লেনদেন ও অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এ দাবি জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলছে, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কেবল নিয়োগ পরীক্ষাটি বাতিল করার প্রক্রিয়াটি কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে কেবল ‘খাতায় অস্পষ্টতা পাওয়া গেছে’ উল্লেখ করায় প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনায় আদৌ দুর্নীতি হয়েছে কি না, কিংবা হয়ে থাকলে তাদের পরিচয় ও জবাবদিহিতা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে— এসব বিষয় অমীমাংসিত থেকে গেছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত যে প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো, সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা ঘুষ প্রস্তাব করার অভিযোগ ছিল। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে কি না কিংবা জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নগুলো অবান্তর নয়। বরং আমরা মনে করি, দুর্নীতির যে ভয়াবহ বিস্তারের ইঙ্গিত সেই প্রতিবেদনে ছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য তদন্তের ভিত্তিতে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপই প্রত্যাশিত ছিল। আমাদের আশঙ্কা, অনিয়মের তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ায় নিয়োগ বাতিল করে আপাতত বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কার্যত দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকেই টিকিয়ে রাখা হলো। পাশাপাশি এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কথিত ‘উওপর মহলে’র যোগসাজশের সন্দেহটিও ঘনীভূত হলো।
স্বাস্থ্য খাতে বিগত বছরগুলোতে যে পরিমাণ অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ পেয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এই পুরো খাতটি ঢেলে সাজানোর জোর দাবি জানিয়েছে টিআইবি। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কেউ স্বাস্থ্য খাতে বড় কোনো দুর্নীতি দেখাতে পারেনি’— এমন সব মন্তব্য করে দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আর নেই। পক্ষ-বিপক্ষের বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিটি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। বিশেষ করে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাত নিয়ে যত ধরনের অভিযোগ, এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর নানামুখী স্বার্থ ও সংশ্লিষ্টতার কথা আলোচিত হয়েছে— এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সামগ্রিক শুদ্ধি অভিযান এখন সময়ের দাবি।
টিআইবি আশা করছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষিত ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির যথাযথ বাস্তবায়নের শুরুটা হবে এই স্বাস্থ্য খাত থেকেই। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সামগ্রিকভাবে সরকারের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
সারাবাংলা/টিআর