মাঠে নামার আগে ‘হোমওয়ার্ক’ সেরে নিচ্ছে বিএনপি
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:২৯
ঢাকা: ২০১৫ সালের এপ্রিলের পর সেই অর্থে ‘মাঠে নেই’ বিএনপি। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে বস্তুত রাজপথে আন্দোলনের ইতি টেনে দিয়েছিল দলটি। এর পর সাড়ে ছয় বছর কেটে গেলেও সংলাপ, সমঝোতা, জাতীয় ঐক্য, গণঅভুত্থ্যান, কূটনীতি— কোনো কিছুরই দেখা পায়নি বিএনপি। এর ওপর গত দেড় বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ঘরবন্দি ছিল দলটি।
তবে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিএনপি। করোনা সংক্রমণ কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। প্রথম ধাপে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলীর সদ্যস্য এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে নির্বাহী সদস্য এবং সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক চলছে।
দলীয় সূত্রমতে, এসব বৈঠকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপিসহ বিরোধী দলের গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহারসহ বেশ কয়েকটি দাবি সামনে রেখে আন্দোলনের প্রস্তাব দিয়েছেন মাঠের নেতারা। তাদের এই প্রস্তাব মাথায় রেখে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
জানা গেছে, মাঠে নামার আগে সমমনা রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও পেশাজীবীদের নিয়ে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায় বিএনপি। অথবা যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে সমমনা ও সরকারবিরোধী পক্ষগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে চায় তারা। এ লক্ষ্যে আন্দোলনে নামার আগে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করবে দলটি। এ ক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে অটুট রেখে ডান-বামসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল, সুশীল সমাজ ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সঙ্গে চলমান দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে অন্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক এসব বৈঠক শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। সম্পাদকমণ্ডলী এবং দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। এখন আমরা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছি। এ বৈঠকগুলো শেষ হলে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ে ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করব।’
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, প্রথম দফায় তিন দিনের বৈঠকে যে ১১৮ জন নেতা বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই বলেছেন— ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো এবারও সরকারকে ওয়াকওভার দিলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আবার বিদ্যমান কাঠামোয় নির্বাচনে অংশ নিলে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই পরিণতি বরণ করতে হবে। এ অবস্থায় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন ছাড়া বিএনপির হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।
জানা গেছে, এমন বাস্তবতায় আন্দোলনে নামার আগে দলকে শক্তিশালী করতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে গত ২ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও আমান উল্লাহ আমানকে প্রধান করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর গত ২০ আগস্ট ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি (আংশিক)। শিগগিরই অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা করবে বিএনপি।
শুধু তাই নয়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ইসি গঠনের আগেই রাজপথে আন্দোলনের জন্য সংগঠন শক্তিশালী করার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা এবং দেশীয় মিত্র বাড়ানোর কাজ সেরে ফেলবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপও তৈরি করার কাজ চলমান। বিএনপি কী করতে চায় এবং কীভাবে করতে চায়— সে বিষয়টি আন্দোলন সহযোগীদের সামনে উপস্থাপন করবে দলটির হাইকমান্ড।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৈঠকে মাঠের নেতারা তাদের মতামত দিয়েছেন। তারা স্পষ্ট করে বলেছেন— নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া বিএনপি যেন নির্বাচনে না যায়। দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। বৈঠক এখনো চলমান। দলীয় বৈঠক শেষে অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হবে। তারপর পুরো বিষয়টি আমরা জাতির সামনে তুলে ধরব।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
আন্দোলনের প্রস্তুতি জাতীয়-নির্বাচন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন বিএনপি রাজপথে আন্দোলন