Wednesday 23 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা নিপীড়নের জবাবদিহিতা জরুরি, জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:৫৬ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:১২

ঢাকা: রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত নিপীড়নের জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ধরনের জঘন্য অপরাধের কোনো প্রকার দায়মুক্তি দেওয়া উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর)নিউইয়র্ক সময় বিকেলে ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক (রোহিঙ্গা) সংকট: স্থায়ী সমাধান জরুরি’ শীর্ষক নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা নিপীড়নকারীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নিপীড়নের জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের জঘন্য অপরাধের দায়মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা নিপীড়নের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ আইসিজেতে চলমান আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এবং মানবাধিকার কাউন্সিলের তৈরি অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়াগুলোকেও সমর্থন করা উচিত।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে অবশ্যই এখনই কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এ সংকট সমাধানে পাঁচটি প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, আমাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা, এবং আমাদের অবশ্যই সেই লক্ষ্যে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা বিনিয়োগ করতে হবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও মিয়ানমারে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। তবু এই সংকট সমাধানে আমাদের চেষ্টা অব্যহত রাখা উচিত। তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, এই ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস করি আসিয়ানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আসিয়ানের বিশেষ দূত নিয়োগকে স্বাগত জানাই এবং আমরা আশা করি বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে এ সংকট সমাধানের বিষয়টি আসিয়ানের এজেন্ডায় বেশি গুরুত্ব পাবে। সহযোগী সদস্য হিসেবে আসিয়ানের উচিত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা যাতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে উৎসাহিত হয়।

বিজ্ঞাপন

চতুর্থ প্রস্তাবে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে মানবিক সহায়তা অপরিহার্য কিন্তু কোনোভাবেই স্থায়ী সমাধান নয়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে জাতিসংঘ এবং অংশীদারদের অবশ্যই বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ এবং প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা এরকম কোনো অগ্রগতি দেখিনি।

পঞ্চম ও শেষ প্রস্তাবে তিনি বলেন, মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নিপীড়নের জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের জঘন্য অপরাধের দায়মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ আইসিজেতে চলমান আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এবং মানবাধিকার কাউন্সিলের তৈরি অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়াগুলোকেও সমর্থন করা উচিত।

রোহিঙ্গা নাগরিকদের দুর্দশা লাঘবের আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আশা-পুনরুদ্ধারের আশা, টেকসই পুনর্গঠনের আশা’এই থিম নিয়ে ৭৬তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। আমার প্রতিনিধি দলও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘আশা’ নিয়ে অধিবেশনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের দুর্দশা লাঘবের আশা।

এতদিনেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়ায় শেখ হাসিনা বলেন, গত চার বছর ধরে আমরা খুবই আশাবাদী ছিলাম মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের নিজেদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাবে। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা বৈশ্বিক সমাবেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর আস্থা রেখেছিলাম।

এখনো সংকট সমাধানের আশা রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাই হোক আমাদের আহ্বান উপেক্ষিত হয়েছে এবং আমাদের আশা অপূর্ণ রয়ে যায়। আমরা এখন সংকটের পঞ্চম বছরে। তবুও আমরা এখনো এই সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা ধরে রেখেছি।

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে দুটো পথ ছিল- হয় তাদেরকে জীবন বাঁচানো অথবা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া এবং তাদের জাতিগত নির্মূলের মুখে ঢেলে দেওয়া। আমরা মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সাড়া দিয়ে তাদের জীবন বাঁচানোর পথটি বেছে নেই।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে এ সংকটের পর থেকে সকল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আমি এই সংকটের টেকসই সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়ে আসছি। আমার সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। আঞ্চলিক ফ্রন্টে চীন, ভারতসহ বড় শক্তিগুলোকে এই প্রচেষ্টায় সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা সব প্রচেষ্টার পাশাপাশি আসেমকেও আরও সক্রিয় ভাবে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। বহুপাক্ষিক ফ্রন্টে আমরা গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে যুক্ত করে জাতিসংঘের রেজুলেশনের মাধ্যমে ইস্যুটি টেবিলে রেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝুলে থাকা প্রত্যাবর্তন, আমাদের সম্পদ ও ভূমির সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমারের বিতাড়িত নাগরিকদের বাংলাদেশে নিরাপত্তা ও অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। জনবহুল এলাকায় এত বিপুল সংখ্যক মানুষের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান আশপাশের পরিবেশ ও বাস্তুশাস্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। আশ্রয়ের জন্য পাহাড় ও বনভূমি কেটে ফেলা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এমনকি এই কোভিড-১৯ মহামারীর চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার কথা ভুলে যাইনি। প্রত্যেকেই নিরাপদ না হওয়া পর‌্যন্ত কেউই নিরাপদ না- আমরা আমাদের এই প্রত্যয়ের প্রতি অবিচল থেকেছি। আমরা আমাদের নাগরিকদের সঙ্গে এই মানুষগুলোকে টিকা কর্মসূচিতে অন্তভূক্ত করেছি।

ভাসানচরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বীপটির যথাযথ অবকাঠামো রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সেখানে ১ লাখ মানুষের সাময়িকভাবে বসবাসের ভাল সুবিধা রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরের ১৮ হাজার ৫০০ জনকে স্থানান্তর করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় যারা সেখানে যেতে চেয়েছে তাদের স্থানান্তর করা হয়েছে। আমরা দ্রুতই ভাসানচরে জাতিসংঘের কার‌্যক্রম দেখতে চাই।

সারাবাংলা/এনআর/এনএস

জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর