Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি গ্রামীণ ব্যাংক, ফাঁকি দিয়েছে ৬৭ কোটি টাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:৫৫

ঢাকা: গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে প্রায় ৬৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিবন্ধন না নিয়ে ভ্যাটযোগ্য সেবা দেওয়ায় আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন রাজস্ব বিভাগের ভ্যাট গোয়েন্দারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সারাবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম তদন্ত করে এসব অনিয়ম পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর বলছে, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ‘এস ০৫৬’ সেবা কোডের আওতায় ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনো ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিবন্ধন নেয়নি। অথচ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন ১৯৯১-এর ধারা-১৫ উপধারা (১) অনুযায়ী করযোগ্য পণ্যের সরবরাহকারী বা করযোগ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন নিতে হয়।

ড. মইনুল খান আরও জানান, গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কিস্তি সুবিধায় ঋণ দিয়ে থাকে। তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খরচের বিপরীতে চার্জ, ফি ও কমিশন নিয়ে থাকে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩’-এর ধারা ২-এর দফা (খ)-এর উপধারা (অ)-এর আওতাভুক্ত। এনবিআরের এসআরও ১৮৩/২০১২ ও এসআরও ১৬৮/২০১৩ অনুযায়ী ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং নির্বিশেষে এ ধরনের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেই নিবন্ধন নিতে হয়। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের এসব সেবার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য। এছাড়াও ভ্যাট বিধিমালা ১৯৯১-এর বিধি ১৮(ক) অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনকারী প্রতিষ্ঠান ও সে অনুযায়ী বিভিন্ন খরচের বিপরীতে গ্রামীণ ব্যাংকের উৎসে কর কর্তনের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাট গোয়েন্দা জানিয়েছে, সিএ ফার্মের মাধ্যমে দাখিল করা গ্রামীণ ব্যাংকের বার্ষিক নিরীক্ষার প্রতিবেদনসহ তাদের জমা দেওয়া অন্যান্য নথি অনুসন্ধানে পর্যালোচনা করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এসময় তাদের দেওয়া তথ্য ও বক্তব্যও আমলে নেওয়া হয়েছে। সার্বিক তদন্তে উঠে এসেছে— গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত মেয়াদে (২০১১ থেকে ২০১৬ সাল) তাদের বিভিন্ন সেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিপরীতে ৩৪ হাজার ৯১০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু এই সময়ে তাদের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এর ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে জরিমানা প্রযোজ্য হবে ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭০৬ টাকা।

তদন্তে গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন খরচের বিপরীতে উৎসে কর কর্তনের ক্ষেত্রেও বড় অঙ্কের ফাঁকির তথ্য উদঘাটন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত মেয়াদে উৎসে কর বাবদ ৮ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু এই সময়ে তাদের ওপর প্রযোজ্য করের পরিমাণ ছিল ২৩ কোটি ৯ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা। অর্থাৎ তারা ১৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। মাসিক ২ শতাংশ হারে এর ওপর প্রযোজ্য সুদের পরিমাণ ৭ কোটি ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭৭ টাকা।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের হিসাব বলছে, সব মিলিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক মোট ৪৫ কোটি ৭৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৬ টাকা ভ্যাট দেয়নি সরকারকে। এর ওপর মোট প্রদেয় সুদের পরিমাণ ২১ কোটি ২৩ লাখ ২২ হাজার ৬৮৩ টাকা। সব মিলিয়ে তাদের কাছে সরকারের আদায়যোগ্য করের পরিমাণ ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ৬২৯ টাকা।

ড. মইনুল বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের এই ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে আইনি কার্যক্রম গ্রহণ করতে তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলা সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যেন প্রতি মাসের সব আয়-ব্যয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করে, তা মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

গ্রামীণ ব্যাংক ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর ভ্যাট ফাঁকি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর