Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শহরে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ভালো, গ্রামে কম

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:৫৭

ঢাকা: করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রমে বেশ ভালো সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে মফস্বল বা গ্রামে শিক্ষার্থী উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত কম।

গেল এক সপ্তাহে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামের ২০টিরও বেশি বিদ্যালয়ে ঘুরেছেন এই প্রতিবেদক। শহর লাগোয়া বেশ কয়েকটি গ্রাম ও মফস্বলের বিদ্যালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে শহরের তুলনায় অনেক কম শিক্ষার্থীর ক্লাসে ফিরেছে। আর বড় শহরের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতি নিয়ে কড়াকড়ির জন্যই উপস্থিতি বেশি বলে জানিয়েছেন তারা।

তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন ভিন্ন কথা। সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের যেসব অভিভাবকের কথা হয়েছে তাদের প্রায় সবাই বলেছেন, মাহামারির সময়ে দীর্ঘ বন্ধ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে গ্রামাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীই ঝরে পড়ার দিকে। অনেকে আবার পড়াশোনা বাদ না দিলেও, কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে। তাই ক্লাসে ফিরতে পারছেন না।

সিলেটের ভোলাগঞ্জের এরশাদ মিয়া। প্রাথমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই কাজ নিয়েছে নৌকায়। দিনে ৫০ টাকা মজুরিতে মাঝির সহযোগী হিসেবে কাজ করছে সে। করোনায় বিদ্যালয় বন্ধের আগে সে ছিল চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। শেষ কয়েকমাসে এই কাজে সে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে এরশাদ নিজেই আর স্কুলে ফিরতে চাচ্ছেন না।

সিলেটের এই ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় সব স্কুলের চিত্র একই। এসব এলাকায় করোনার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ায় শিশুরা বাধ্য হয়ে স্কুল ছেড়েছে। তবে সিলেট শহরের চিত্র ভিন্ন। সেখানে প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থী উপস্থিতি ভালো। ব্লু বার্ড, মুরারি চাঁদ, মদন মোহন ও সিলেট ক্যাডেটের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উৎসবের আমেজে ক্লাস করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

মুরারি চাঁদ কলেছের অধ্যক্ষ মো. সালেহ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস খুলে দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল। প্রতিটি ক্লাসেই প্রায় সব শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে। দুয়েকজন অবশ্য রয়েছে যারা এখনও ক্লাসে নিয়মিত হতে পারেননি। আমরা তাদের খোঁজ নিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম কলজের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ঢাকার ভিকারুননিসা, হলিক্রস, নবকুমার, নটরডেমের মতো কলেজগুলোর চিত্রও প্রায় একই রকম। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও উপস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট।

ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখার প্রধান শাহরিমা চৌধুরী সারাবাংলাকে, ‘আমার শাখায় প্রায় সব শিক্ষার্থীই উপস্থিত থাকছে। যে কয়জন আসছে না তারা স্বাস্থ্যবিধি সতর্কতার জন্য আসছে না। ভ্যাকসিন পেয়ে গেলে আসবে।’

তবে গ্রামে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে বোর্ডপ্রধানরা বেশ চিন্তিত। সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. রমা বিজয় সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামে বা মফস্বলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে সেই অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এদের ফের শ্রেণি কার্যক্রমে ফেরাতে হবে। সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।’

 

এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ও শিখন ঘাটতি পূরণ করতে ইতোমধ্যেই শিক্ষকদের ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শিক্ষকরা অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তাদের বাড়ি যেতে হবে।’

এ বিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘স্কুলে আসছে না এমন শিক্ষার্থীদের ফের বিদ্যালয়ে ফেরাতে হলে তাদের প্রতি সহমর্মী হতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে হবে। তবেই অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালয়মুখী করতে সহযোগী হবে।’

তবে গ্রামে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাওয়া বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্তব্য করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনা সংক্রমণ ঝুঁকিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর দেড় বছর বন্ধ থাকে এসব প্রতিষ্ঠান, যা খুলে দেওয়া হয়েছে গেল ১২ সেপ্টেম্বর। প্রথম দফায় কেবল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিষ্ঠানগুলো খুলেছে। এছাড়া খোলার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও।

সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম

গ্রামের স্কুল শহরের স্কুল শিক্ষার্থী উপস্থিতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর