সৌদি আরবে সব হারিয়ে দেশে এসে ‘পিরের খপ্পরে’
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীতে সৌদিআরব ফেরত এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কথিত পিরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি সৌদিআরবের ব্যবসায়িক পার্টনারের প্রতারণার শিকার হয়ে টাকাপয়সা খুইয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। সেই পার্টনারকে বাংলাদেশে এনে টাকা ফেরত পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কথিত পিররচক্র তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ২৮ লাখ টাকা।
প্রতারণার শিকার ব্যক্তি নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়েরের পর বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) কথিত পির ও তার ছেলেসহ তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার তিনজন হলেন কথিত পির আব্দুল মান্নান (৫৮) ও তার ছেলে জোবাইর হোছাইন রিজভী (২৩) এবং নগরীর হাজারি লেইনের স্বর্ণের দোকানি আবু তৈয়ব (৫৮)।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন সারাবাংলাকে জানান, আবুল হাছান সহিদ নামে এক ব্যক্তি ২২ বছর ধরে সৌদিআরবে ছিলেন। তিনি সেখানে সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদীর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পাঁচটি আবাসিক হোটেল পরিচালনা করতেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি ছুটিতে দেশে আসেন। আসার পর পাসপোর্টে দেখেন ‘সৌদিআরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ’ সিলমোহর দেওয়া। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, হোটেলগুলো আত্মসাতের জন্য সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদীর প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি হাজারী লেইনে যান স্ত্রীর স্বর্ণের গয়না বিক্রি করতে। দোকানি আবু তৈয়ব গয়না বিক্রির কারণ জানতে চাইলে সহিদ পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তখন তৈয়ব তাকে লালদিঘীর পাড়ে হোটেল আল ফাতাহ’র তৃতীয় তলায় কথিত পির আব্দুল মান্নানের কাছে নিয়ে যান। মান্নান তাকে বলেন- তিনি জ্বিন পোষেন। ধর্মীয় আধ্যাত্বিক শক্তি ও জ্বীনের বলে তিনি সৌদি নাগরিককে বাংলাদেশে আনতে পারবেন এবং টাকা ফেরত নিয়ে দিতে পারবেন।
শুরুতে কথিত পির মান্নান সহিদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা, ৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং এক হাজার মার্কিন ডলার নেন। লালদিঘী শাহী জামে মসজিদে সহিদকে নিয়ে শপথ করান এ কথা কাউকে বলবেন না। যদি বলেন, তাহলে মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে, জ্বিন তাকে গলাটিপে হত্যা করবে এবং সন্তানদের ক্ষতি করবে বলে ভয় দেখান। এভাবে সৌদি নাগরিককে এনে দেওয়ার কথা বলে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নগদে এবং বিকাশ ও নগদ নম্বরে ২৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা নেন। এরপর লালদিঘীর ওই হোটেল থেকে অবস্থান পরিবর্তন করে গা ঢাকা দেন।
কিন্তু গত দীর্ঘসময়েও সৌদি নাগরিককে আনার কোনো লক্ষণ না দেখে সহিদ আবার প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। পুলিশ কক্সবাজারের টেকনাফ থানার হোয়াইক্যং এলাকায় অভিযান চালিয়ে কথিত পীর ও তার ছেলে এবং হাজারি লেইন থেকে তৈয়বসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। তবে এই চক্রে তৈয়বের কর্মচারীও জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে ওসি নেজাম জানিয়েছেন।
ওসি নেজাম উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। একজনকে পির বা জ্বিনের বাদশা সাজিয়ে তারা প্রতারণার জাল পাতে। অভাব-অনটন বা সংকটে পড়ে যারা স্বর্ণের গয়না বিক্রি করতে আসে, তাদের টার্গেট করে। জ্বিনের চালান দিতে ডিম, চাউল, জ্বিনকাটা মেডিসিন, শুকরের পিত্তথলি, সাদা কাপড়, কালো কাপড়, লাউ, কবুতর- এভাবে নানা জিনিস কেনার কথা বলে দফায় দফায় টাকা নেয়। ফকির-মিছকিন-মাদরাসার এতিম ছাত্রদের খাওয়ানোর কথা বলে টাকা নেয়। এভাবে একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তারা কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কিছুদিন গা ঢাকা দেয়। পরে আবার অন্য কোথাও গিয়ে একই ফাঁদ পাতে।’
সারাবাংলা/আরডি/একে