Wednesday 04 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচনি ইশতেহারে বিশুদ্ধ বায়ুর অঙ্গীকার চান পরিবেশবিদরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:৪২ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:০৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বায়ু দূষণ [ফাইল ছবি]

ঢাকা: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অন্যতম উদ্বেগের বিষয় বায়ু দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন এই অঞ্চলের পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, আঞ্চলিকভাবে দেশগুলো একসঙ্গে কাজ না করলে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। আগামী বছর তিনেকের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। বায়ু দূষণ রোধ করে বিশুদ্ধ বায়ুর অঙ্গীকার এসব নির্বাচনেই রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশবিদরা।

মার্কিন দূতাবাসের আয়োজনে ‘সাউথ এশিয়া ফর ক্লিন এয়ার অ্যান্ড হেলথ’ শিরোনামের এক অনলাইন ওয়েবিনার থেকে বক্তারা এই দাবি তোলেন। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের পরিবেশবিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও পরিবেশবিদরা এই আয়োজনে অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, বায়ু দূষণ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদ্বেগের বিষয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকারের কাছে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, বায়ু দূষণ বা পরিবেশ দূষণ রোধের বিষয়টি ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ু দূষণের ফলে নানা ধরনের প্রাণঘাতী রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে তেমন সচেতনতা নেই। শুষ্ক মৌসুমের পাঁচ-ছয় মাস বায়ু দূষণ নিয়ে কিছুটা আলোচনা হলেও বছরের বাকি সময়ে এর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যায়।

পরিবেশবিদরা আরও বলেন, বায়ু দূষণ এমন একটি বিষয় যা নির্দিষ্ট দেশের সীমানার মধ্যে আটকে থাকে না। একটি দেশের একটি শহর আক্রান্ত হলে কাছাকাছি অবস্থিত অন্যান্য দেশের বায়ুও দূষিত হয়। তাই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বায়ু দূষণ নিরসন করতে হলে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।

ওয়েবিনারে বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশবিদদের নানা সংগঠন সক্রিয়। সরকারও যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত বায়ু দূষণ করে যাচ্ছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রাজধানী ঢাকায় নানা সমাবেশ হচ্ছে, সেখান থেকে কয়লাচালিত কারখানা বন্ধের আহ্বান জানানো হচ্ছে। সরকার চাচ্ছে পরিবেশবাদীরা আরও চাপ বাড়াক, যেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের হাইকোর্টও বিভিন্ন সময় বায়ু দূষণ রোধে বেশকিছু রুল জারি করেছেন। তারপরও বায়ু দূষণ পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি নেই বলেই জানান তিনি।

ড. মজুমদার এসময় ঢাকার বায়ু দূষণের জন্য পাঁচটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেন। এগুলো হলো— অতিরিক্ত জনসংখ্যা; চলাচলের অনুপযুক্ত যানবাহনের আধিক্য, যেগুলো কার্বণ দূষণের জন্য দায়ী; আবর্জনা পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড; আইন থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকা; এবং ঢাকার চার দিকে চারটি নদী থাকলেও ঢাকার অবকাঠামোর কারণে ঢাকার মধ্যে বাতাসের বাধাপ্রাপ্ত হওয়া।

ওয়েবিনারে ভারত থেকে যোগ দেন লাং কেয়ার ফাউন্ডেশনের ডা. অরবিন্দ কুমার। তিনি বলেন, বায়ু দূষণের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। বায়ু দূষণের ফলে সরাসরি ফুসফুস আক্রান্ত হয়। এর ফলে অ্যাজমা, ওবেসিটিসহ নানা ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব বিষয়ে অবগত নন।

বায়ু দূষণের প্রকৃত ঝুঁকি তুলে ধরতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. অরবিন্দ বলেন, আপনারা রোগীদের বায়ু দূষণের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি যথাযথভাবে অবহিত করুন। এর মাধ্যমেই বায়ু দূষণ নিরসনে জনমত গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আগামি নির্বাচনে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান নয়, নির্বাচনি ইশতেহারে যুক্ত হোক বায়ু দূষণ নিরসন। কারণ, ভাত-রুটি-ঘরের চেয়েও বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ বায়ুর প্রয়োজন বেশি। ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রতিও তিনি এই আহ্বান জানান।

নেপাল থেকে যুক্ত হয়ে পরিবেশবিদ ভূষণ তুলাধার অভিযোগ করেন, সরকারগুলো অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিলেও পরিবেশ উন্নয়নে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, তারা অবকাঠামো উন্নয়ন করছে যার মধ্যে আছে রাস্তা, একাধিক লেনযুক্ত হাইওয়ে, ফ্লাইওভার ইত্যাদি। কিন্তু পর্যাপ্ত ফুটপাথ নেই, সাইকেল চালানোর রাস্তা নেই। অন্যদিকে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা থাকলেও নীতিগত পরিবর্তন আনার মতো চাপ তারা সরকারগুলোকে দিতে পারছে না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট একই থাকার কারণে বায়ু দূষণ রোধে তিনি চলচ্চিত্র বা ক্রীড়াজগতের তারকাদের কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা হেলথ কেয়ার উইদাউট হার্মের জেনিফার ওয়াং বলেন, বায়ু দূষণ মানুষের স্বাস্থ্য অধিকারের পাশাপাশি মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন। বিশুদ্ধ বায়ুর অভাবে আগামী প্রজন্ম টিকে থাকতে পারবে না। আর যদি মানুষই না থাকে তাহলে উন্নত দেশ দিয়ে মানুষ কী করবে?

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ দেশ গড়তে বায়ু দূষণ নিরসনে পর্যবেক্ষণ, রাষ্ট্র, পরিবেশবিদ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীসহ সবাইকে একে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নয়নের গুরুত্ব দেন জেনিফার ওয়াং। পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারগুলো দূষণ ঠেকাতে যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে বায়ু দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরার ওপর জোর দিতে হবে। শুধু সংখ্যা ও উপাত্ত দিয়ে এই সচেতনতা তৈরি হবে না, এর জন্য বায়ু দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাগুলো গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে হবে।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

টপ নিউজ নির্বাচনি ইশতেহার বায়ু দূষণ বায়ু ‍দূষণের ভয়াবহতা রাজনৈতিক অঙ্গীকার