শেখ হাসিনার ‘মিরাকল’ উন্নয়নের প্রশংসা জাতিসংঘ মহাসচিবের
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:৪৫
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিস্ময়কর (মিরাকল) উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বাংলাদেশের সার্বিক অর্জন নিয়েও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় বিকেলে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে) জাতিসংঘ সদর দফতরে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিনি প্রশংসা করেন। বৈঠকের পরে লোটে নিউইয়র্ক প্যলেস হোটেলে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানবিকতার ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। তিনি (গুতেরেস) বাংলাদেশের ‘মিরাকল’ উন্নয়ন অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, এই সাফল্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ (ইউএন) মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে স্বাগত জানান। জাতিসংঘ মহাসচিবও প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘ওয়েলকাম টু ইওর হোম’।
জাতিসংঘ বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলোকে গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মতো বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলো জাতিসংঘেরও অগ্রাধিকার।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের উচ্চপদে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আরও বেশি সদস্য নিযুক্ত করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে জাতিসংঘের সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুতেরেস শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সুনাম অর্জনের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন এবং তিনি এটিকে ন্যায্য মনে করেন। তিনি বাংলাদেশের জন্য আরও কিছু করতে চান।
জাতিসংঘ বাংলাদেশকে ‘সম্মান করে’ মন্তব্য করে আবদুল মোমেন বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সিতে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেয়। পাশপাশি বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্য পদ পাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ড. মোমেন বলেন, একটি গতিশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশকে জাতিসংঘ ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে এদিন নেদারল্যান্ডের রানি ম্যাক্সিমা, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়ান ফুক ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মাদ সলিহ’র সঙ্গেও বৈঠক করেন। নেদারল্যান্ডের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে তার সরকার ইনস্যুরেন্স ব্যবস্থা চালু করার চিন্তাভাবনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মাদ সলিহ’র মধ্যেকার বৈঠকের বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, মালে ও চট্টগ্রামের মধ্যে বাণিজ্যিক জাহাজ চালু করার বিষয়ে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে।
ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়ান ফুকের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে ফুককে অনুরোধ জানান।
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
এর আগে, দেশের উন্নয়ন ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থাপ্রধানরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
নিউইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনের জন্য ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন), গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনিস্টিউট ও সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট যৌথভাবে এ পুরস্কার দিয়েছে।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
অ্যান্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা