নারীবাদ বিষয়ক অনুষ্ঠান অন্যপক্ষ’র পথ চলার ৬ বছর
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:২৮
দেশে সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে মেয়েদের নিয়ে নানারকম অনুষ্ঠান হলেও শুধুই নারী অধিকার বিষয়ে টক শো তেমন নেই। তবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসির ‘অন্যপক্ষ’ নারী অধিকার বিষয়েই টক শো। সাংবাদিক ইশরাত জাহান উর্মির সঞ্চালনায় প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল সাড়ে দশটার সময় এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। ২০১৬ সালে ডিবিসি চ্যানেলের সূচনা থেকেই এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে।
অন্যপক্ষের প্রতি পর্বেই দু’জন করে অতিথি থাকেন, যারা নারী অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন। সঞ্চালক ইশরাত জাহান উর্মি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে নারীর জন্য ডেডিকেটেড অনেক অনুষ্ঠান থাকলেও আমাদের অনুষ্ঠান নারীবাদ বিষয়ক- এটিই একে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।’
‘অন্যপক্ষ’ নামকরণ কেন, জানতে চাইলে উর্মি বলেন, ‘নারী অন্যপক্ষ না কিন্তু সমাজ সাধারণত নারীকে অন্যপক্ষ হিসেবে দেখে। সেই ভাবনা থেকেই এই নাম। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা বলতে চাই, নারীকে অন্যপক্ষ হিসেবে না দেখা। নারী সমাজেরই অংশ তাই তার সমস্যা নিয়ে আলোচনাটা মেইনস্ট্রিম হওয়া দরকার।’
ন্যাশনাল টেলিভিশনে নারীবাদ, নারী অধিকার নিয়ে একটি টক-শো এতদিন চালানো কম কথা নয়। এটি চালাতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তেমন একটা আর্থিক সুবিধা ছাড়াই শুধুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তারা এই অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠান থেকে যে প্রত্যাশা ছিল তা পূরণ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সপ্তাহে দুইদিন নারীর ইস্যু নিয়ে টানা কাজ করে যাওয়ার আনন্দ যেমন ছিল চ্যালেঞ্জও ছিল। নারীর প্রতি সহিংসতা সমাজের বাস্তবতা। তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কিছুটা সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে পারলেও সেটি তার জন্য আনন্দের। অনেক ভালো স্মৃতি যেমন আছে তেমনি আতঙ্কের ঘটনাও আছে। একটি পর্বে অতিথি হয়ে আসা রোকেয়া কবীর ধর্মকে নারীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে মন্তব্য করলে সেটি নিয়ে বিতর্কের ঢেউ ওঠে। সঞ্চালক উর্মিসহ অতিথিরা সবাই হুমকিসহ সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। পরে আরিফা রুমা হুমকিদাতার বিরুদ্ধে মামলাও করেন।’ এতসব বাধা স্বত্বেও মেয়েদের জন্য সচেতনতা তৈরিতে সাধ্যের মধ্যে যেটুকু করতে পারছেন তাতেই কর্তৃপক্ষ, দর্শক, অতিথিসহ শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
উর্মি বলেন, ‘অনুষ্ঠান সস্পর্কে অতিথি এবং দর্শকরা এর স্বতস্ফূর্ততার প্রশংসা করেন। কিন্তু কোনভাবেই অনুষ্ঠানের বিষয় বা অতিথি নিয়ে আপোষ করিনি। যে বিষয়ের জন্য যে অতিথিকে প্রয়োজন, তাকেই আনার চেষ্টা করেছেন। না পাওয়া গেলে প্রয়োজনে অনুষ্ঠান চলেনি, তাও দায়সারা ভাবে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাননি।’
এদিকে অন্যপক্ষ সম্পর্কে দর্শক এবং শুভানুধ্যায়ীদের একটি অভিযোগ যে, এতে শুধুই মধ্যবিত্ত বা শহুরে নারীদের সমস্যা আর সংকটের কথা বলা হয়। উর্মি বলেন, ‘অভিযোগ একেবারে অসত্য নয়। সত্যতা আছে। আমার মনে হয়েছে, একটি আধঘণ্টার অনুষ্ঠান দিয়ে বিপ্লব করে ফেলা সম্ভব নয় বা সবার কথা বলাও সম্ভব নয়। তাই আমরা যদি পার্টিকুলার একটা শ্রেণির কথাও বলি, সমস্যাগুলো তুলে ধরি, সমাধান সর্ট আউট করার চেষ্টা করি সেটিও কম নয়। মধ্যবিত্ত শহুরে নারীদের সব সমস্যা তো সলভড না, তাদের কথা বললে অসুবিধা কী?’
‘তবে অভিযোগ আংশিক সত্য। ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন তো সবসময় ক্লাস মেপে হয় না- অন্যপক্ষ সবার কথা বলেছে। গার্মেন্টস এর নারীদের কথা বলেছে, তৃণমূলে রাজনীতি করা নারীর কথা বলেছে, প্রান্তিক নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেছে’, যোগ করেন তিনি।
সারাবাংলা/আরএফ/