Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দুর্ভাগ্য আমাদের, রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনা করেন না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৫৬

ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো, রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনা করেন না। একজন রাজনীতিবিদকে সিকিউরিটি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তার নাম হলো শেখ হাসিনা। তাকে দিয়ে যত অরাজনৈতিক, গণবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী কাজগুলো করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এবং রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পরে জিয়াউর রহমান আমাদের বাক স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিল। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশালের মাধ্যমে চাপিয়ে দিয়েছিল। সে সময় চারটি সংবাদপত্র বাদে সমস্ত পত্রিকা নিষিদ্ধ করা হয়। এবং সংবাদ মাধ্যম পুরোপুরি দলীয়করণ করা হয়। আমরা জানি, ১৯৭৫ সালে সাংবাদিকরা কাজ হারিয়েছে, মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। সে সময় সাংবাদিকদের কেউ হকারি করেছেন এবং কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ দুঃসময় অতিক্রম করছি। এই দুঃসময়ের শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, শুধু বিএনপির জন্য নয়, এই দুঃসময় সমগ্র জাতির। এই সরকার জবর দখল করে ক্ষমতায় বসে আছে। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম একটা মুক্ত দেশ, মুক্ত সমাজ ও মুক্ত রাষ্ট্র পাব বলে। যেখানে আমরা আমাদের চিন্তার মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করতে পারব। কিন্তু আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটা ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ আগে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল, এখনও তারা সেই আঙ্গিকে একটা মুখোশ পরিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে আমাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১/১১-এর যে পরিবর্তন এসেছিল, সে পরিবর্তনের লক্ষ্য কী ছিল- রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হয়েছেন। তখন থেকেই বি-রাজনীতিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে এসেছিল তারা। রাজনীতি বাতিল। তখনকার কিছু বুদ্ধিজীবী যোগ্যপ্রার্থীর খোঁজ করছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের, দেশনেত্রীর অনড় ভূমিকার কারণে ১/১১-এর চক্রান্ত থেকে দেশ মুক্তি পেল। কিন্তু এখনও আমরা মুক্তি পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্টে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নেই। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে তারা একটা পার্লামেন্ট গঠন করেছিল। এবং ২০১৮ সালে আগের রাতে নির্বাচন করে। যে নির্বাচনে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। তারাই জালিয়াতি করে, নিজেরাই ভোট দিয়ে স্ব-ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। অনেক কথা হচ্ছে। আমাদের ৫২ জন বুদ্ধিজীবী ইসি গঠনের জন্য একটি আইন করতে বলেছেন। কিন্তু এই আইনটা করবে কে। আইন পাস করবে যে পার্লামেন্টে, সেই পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগ ছাড়া তো আর কিছু নাই। যারা এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, জনগণের সমস্ত অধিকার হরণ করে নিচ্ছে, তারাই এ আইনটা পাস করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুগে যুগে এটা চলে এসেছে যে, যারা সত্য কথা লিখতে চায়, বলতে চায় তাদের ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে এসেছে। কিন্তু তাই বলে কি কেউ থেমে থেকেছে, কেউ থেমে থাকেনি। এই সত্য কথা বলার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম চলেছে, আত্মাহুতি দিয়েছে এবং অবশেষে জয়ী হয়েছে। জয়ী হওয়ার পরেও দেখা যায়, আবার একই অবস্থা ফিরে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ভয়ংকর আন্দোলন করে ঐতিহাসিক ঐক্য সৃষ্টি করেছিলেন। এবং জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজ আমরা বিভক্ত; সাংবাদিক সমাজ বলেন, রাজনৈতিক দল বলেন, এমনকি পেশাজীবী সংগঠনগুলোর কথাই বলেন- সব জায়গাতেই বিভক্তি এসে গেছে। বিভক্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে অত্যন্ত সচেতনভাবে। সরকারের এজেন্সিগুলো অত্যন্ত অ্যাক্টিভ। আমরা যারা গণতন্ত্র চাই, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চাই- তাদের ঐক্য বিনষ্ট করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার পরিকল্পিতভাবে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন নতুন আইন তৈরি করছে। তার একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। যেটাকে তারা বলছে- ব্যক্তির সুরক্ষা আইন। এই ব্যাপারে আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি। এটা একটা নতুন কৌশল। যারা মিডিয়াতে লেখালেখি করেন, মতামত দেন তাদের নিয়ন্ত্রণ ও নির্যাতন করার জন্য এই আইন করা হচ্ছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী সাহেব ২১২টি অনলাইন পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছেন। এর মধ্যে আমরা বাকশালের আলামত দেখছি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, বাকশাল ভালোই ছিল। আপনারা পরিষ্কার করে বলেন, আমরা বাকশাল করছি, আমরা এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই।’ এ সময় তিনি সবাইকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার আহ্বান জানান।

ডিইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, এম আবদুল্লাহ, কবি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

টপ নিউজ ডিইউজে বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর