নববর্ষের উৎসব রাত ৮টা পর্যন্ত রাখার দাবি সাংস্কৃতিক জোটের
৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:২৮
।। ঢাবি করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: নিরাপত্তার নামে নববর্ষের উৎসব দ্রুত বন্ধ না করে রাত আটটা পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা।
জোটের নেতারা বলেছেন, পহেলা বৈশাখের উৎসবে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নিরাপত্তা দেওয়া, উৎসব বন্ধ করা নয়। নিরাপত্তার নামে উৎসব বন্ধ করা চলবে না।
বুধবার (৪ এপ্রিল) সাড়ে ১১টার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কেন্দ্রে (টিএসসি) সংগঠনটির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা জানানো হয়।
উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে- প্রশাসনের এমন নির্দেশে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৬ সাল থেকে রাজধানীতে নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরত ছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। পুলিশের কাছ থেকে নিরাপত্তার ‘প্রতিশ্রুতি’ পেয়ে দুই বছর বিরতির পর এ বছর আবারও রাজধানীতে নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। রবীন্দ্র সরোবরে বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের অনুষ্ঠান চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। উপস্থিত ছিলেন, জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, জোটের দপ্তর সম্পাদক ফয়জুল আলম পাপ্পু, সদস্য হানিফ খান, শাহনেওয়াজ, আবুল ফারা পলাশ ও ফকির সিরাজসহ অনেকে।
লিখিত বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। জাতীয় জীবনে এর তাৎপর্য নতুন করে ব্যাখ্যা করার অবকাশ রাখে না। বিগত কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত সতর্কতা ও কড়া নিরাপত্তা বজায় রাখতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থাসমূহ মানুষের স্বাভাবিক উৎসব উদযাপনকে সংকুচিত করে ফেলেছে। সাংস্কৃতিক প্রবাহকে প্রাণহীন করে ফেলেছে, যা আমাদের ঐতিহ্য বিরোধী।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, ‘বর্তমানে দেশে সাংস্কৃতিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করেছে। হত্যা, ধর্ষণ, গুমের ঘটনা বেড়ে চলেছে। স্বাভাবিক দেশে এসব অস্বাভাবিক ঘটনা ক্রমাগত ঘটতে পারে না। দেশে নৈতিকতার অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। এর মূলে রয়েছে সাংস্কৃতিক বিপর্যয়। এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতি চর্চা উম্মুক্ত করতে হবে। সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য সংস্কৃতিতে বাজেট বাড়াতে হবে।’
গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর ফকির আলমগীর বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তার নামে মানুষের উৎসাহ দমিয়ে দিলে চলবে না। এটি সার্বজনীন উৎসব। সার্বজনীন উৎসব সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। নববর্ষের উৎসব পাঁচটার মধ্যে শেষ করতে হবে, নিরাপত্তার জন্য এটি নিতান্তই অমূলক। এর মাধ্যমে উৎসবের প্রতি মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সর্বসাধারণের এই অনুষ্ঠান রাত আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখতে হবে।
জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্জনে ঢাকা উৎসবের শহরে পরিণত হয়। কিন্তু এই উৎসব গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছায় না। তাহলে সাফল্যের বার্তা, আনন্দ, অনুভূতি কি গ্রামের মানুষ পাবে না? আনন্দ উৎসব দেশের এই সিংহভাগ মানুষকে ছাড়া কখনই হতে পারে না। আনন্দ উৎসবকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে হলে সংস্কৃতি চর্চা উম্মুক্ত করতে হবে। সকলের সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সারাবাংলা/এমআইএস/এমআই