‘আগারগাঁও ছাড়া অন্য অফিসে আবেদন করলে আগে পাসপোর্ট পাবেন’
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:১০
ঢাকা: পাসপোর্টের জন্য রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে সক্ষমতার চেয়ে বেশি চাপ পড়ে বলে জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী। এ কারণে তিনি আগারগাঁও অফিস বাদ দিয়ে নিজ জেলা কিংবা ঢাকাতেই উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করতে উৎসাহ দিচ্ছেন পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের।
মহাপরিচালক বলেন, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট তৈরি যে সক্ষমতা রয়েছে, প্রতিদিন তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি পাসপোর্টপ্রত্যাশী আবেদন করছেন। ফলে এখান থেকে পাসপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। আবার নানারকম ভুল-ভ্রান্তির কারণেও পাসপোর্ট আটকে থাকছে। তাই আপনারা যারা পাসপোর্ট করতে চান, তারা আগারগাঁও বাদ দিয়ে নিজ জেলা বা অন্য অফিসে আবেদন করতে পারেন।
মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে পাসপোর্ট অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে ডিআইপি-পাসপোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। ফোরামের নেতাদের সঙ্গে ডিজির মতবিনিময়ের সময় সাধারণ জনগণের পাসপোর্ট সংক্রান্ত নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। ডিজি সবার সমস্যার কথা শোনের শোনেন এবং ভবিষ্যতে এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে এই মুহূর্তে প্রতিদিন পাসপোর্ট দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে প্রায় দুই হাজার। কিন্তু প্রতিদিন আবেদন পড়ছে কয়েকগুণ বেশি। আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়াও কম্পিউটারে অটোমেটেড করা রয়েছে। এ কারণে কেউ যখন আবেদন করছেন, ওই দিনের স্লট শেষ হয়ে থাকলে তার আবেদনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরের দিনের স্লটে চলে যাচ্ছে। কিংবা পরের দিনের স্লট পূরণ হয়ে থাকলে তার পরের দিনে চলে যাচ্ছে। এভাবে আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত যারা আবেদন করেছেন, তাদের আবেদনে আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত স্লট পূরণ হয়ে গেছে। এই প্রক্রিয়াটি কারও হাতে নেই।
ডিজি বলেন, আগারগাঁওয়ে যারা আবেদন করবেন তারা এভাবেই অনেক দিন পরে স্লট পাবেন। কিন্তু তারা যদি আগারগাঁওয়ে না এসে যাত্রাবাড়ী বা উত্তরাতেও যান, তাহলে কিন্তু এখানকার চেয়ে আগে পাসপোর্ট হাতে পাবেন। আবার কেউ যদি নিজ জেলায় আবেদন করেন, সেখান থেকে আরও আগে পাসপোর্ট হাতে পেতে পারেন।
উদাহরণ দিয়ে পাসপোর্ট অধিদফতরের ডিজি বলেন, আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে যারা আবেদন করেছেন তারা স্লট পেয়েছেন ৬ অক্টোবরের। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ীতে যারা আবেদন করেছেন তারা স্লট পেয়েছেন ৩ অক্টোবরের। আর জেলাগুলোতে আবেদনের পরদিনই ফরম জমা করা ও ছবি তোলার দিন পাওয়া যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতির কারণেই পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের নিজ নিজ জেলা পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করতে বলছেন মহাপরিচালক। অন্যদিকে যাদের পাসপোর্ট আটকে আছে, তাদের আবেদনে বা কাগজপত্রে কোথাও না কোথাও সমস্যা আছে বলেও জানান তিনি। সেক্ষেত্রে অফিসে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করে দিলে তবেই পাসপোর্ট মেশিন সেগুলো প্রিন্টের জন্য নিয়ে নেবে বলে জানান তিনি।
পাসপোর্ট অফিসে মানুষের ভিড় নিয়ে মহাপরিচালক বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে একেবারে কয়েক গুণ লোক পাসপোর্ট করতে চলে এসেছেন। যারা আসছেন তাদের মধ্যে কেউ ই-পাসপোর্টধারী, কেউ এমআরপিধারী। অন্য কিছু মানুষ আসেন সমস্যা সমাধান ও তথ্য জানতে আসেন। আবার অনেকে আসেন ভুল আবেদন ও এনআইডির পরিবর্তে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে। সব মিলিয়ে পাসপোর্ট অফিসে ভিড় লেগেই থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল আইয়ূব চৌধুরী বলেন, যতদিন পর্যন্ত শতভাগ ই-পাসপোর্ট দেওয়ার ক্যাপাসিটি অর্জন সম্ভব হবে না, ততদিন এমআরপি চালু থাকবে। তবে বাংলাদেশে আমরা এমআরপি নিরুৎসাহিত করছি। এখন যেসব এমআরপি দেওয়া হচ্ছে তার ৯৯ ভাগ প্রবাসী। প্রবাসীদের এজন্য দেওয়া হচ্ছে যে ৭৫টি মিশনে এখনো ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করা যায়নি। করোনা এই কাজটি অনেকখানি পিছিয়ে দিয়েছে। এখনো অনেক দেশ অনুমতি দেয়নি আমাদের টিম পাঠানোর জন্য। বর্তমানে মাত্র পাঁচটি মিশনে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১১ লাখ ই-পাসপোর্ট জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ অবস্থা তৈরি না হলে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো। একইসঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ এমআরপি পাসপোর্টও দেওয়া হয়েছে।
পাসপোর্ট অফিসে এজেন্ট নিয়োগের উদ্যোগ থেকে অধিদফতর পিছিয়ে এসেছে বলেও জানালেন ডিজি। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম যারা পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে পারেন না তাদের সহযোগিতার জন্য প্রত্যেক অফিসে একজন করে বাইরে থেকে এজেন্ট নিয়োগ করা যায় কি না। কারণ বাইরে যারা এই কাজ করছেন, তারা একেক গ্রাহকের কাছে একেকরকম টাকা আদায় করছে। তাদের জবাবদিহিতার আওতায়ও আনা সম্ভব হয় না। তাই একটি ফি নির্ধারণ করে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে কেউ প্রতারণার শিকার হতো না। কিন্তু মিডিয়া নেতিবাচক রিপোর্ট করায় আমরা এই বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে আর ভাবছি না।
রোহিঙ্গারা যেন পাসপোর্ট না পায় সে বিষয়ে অধিদফতর উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে ডিজি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট বন্ধে নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছি। গত এক বছরে আর কোনো রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করতে পারেননি। এ নিয়ে কোনো রিপোর্টও প্রকাশ হয়নি কোনো মিডিয়ায়।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিআইপি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু, পরিচালক (প্রশাসন) শিহাব উদ্দিন খান, উপপরিচালক (ই-পাসপোর্ট) কর্নেল নুর উজ সালাম, উপপরিচালক (প্রশাসন) ইসমাইল হোসেন, উপপরিচালক (অর্থ) আল আমিন মৃধা, পাসপোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আছাদুজ্জামান, সহসভাপতি জামিউল আহসান সিপু, সেক্রেটারি আতাউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক নেহাল হাসনাইন, অর্থ সম্পাদক উজ্জল জিসান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জামিল খান।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
পাসপোর্ট অধিদফতর পাসপোর্ট ডিজি পাসপোর্ট রিপোর্টার্স ফোরাম মেজর জেনারেল আইয়ূব চৌধুরী