ঢাকা: দেশজুড়ে আয়োজন করা উরস আর ওয়াজ মাহফিলে আসা ভক্তদের নৌকার মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাত এবং নারীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে আব্দুল মুত্তালিব চিশতী নামে এক ভন্ড পিরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি।
মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মশিউর রহমান সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আব্দুল মুত্তালিব চিশতিকে ভক্তরা চেনেন ‘পির চিশতি’ নামে। দেশজুড়ে উরস আর মাহফিল করে জুটিয়েছেন হাজারও মুরিদ। উরসে তার পরনে থাকে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা। কখনও পরেন মুজিব কোট, মাথায় লম্বা টুপি। আত্মার প্রশান্তিতে তোলেন জিকিরের হিড়িক। সেই হিড়িকে সাদা কাফনের কাপড় পরে অংশ নেন মুরিদ নারী-পুরুষরা। বয়ানের পাশাপাশি পিরের লম্বা মোনাজাতে পাগল হয়ে যান ভক্তরা।
তিনি আরও বলেন, লোক দেখানো এসব কর্মকাণ্ডের আড়ালে মূলত আব্দুল মুত্তালিবের চোখ থাকে শিকারের সন্ধানে। খুঁজে ফেরেন গে অ্যাক্টিভিজমের প্যাসিভ পার্টনার। পিরবাদ, চিশতিয়া ত্বরিকাকে যৌন হয়রানি আর ব্যবসার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন পির চিশতি।
শুধু তা-ই নয়, সরকারি চাকরি আর স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা বা সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেওয়ার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। গত ৯ বছর ধরে চলে তার এমন প্রতারণা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়েন গোয়েন্দা পুলিশের জালে।
ডিএমপি (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, কথিত এ ভণ্ড পির গে অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে সক্রিয়। তার রয়েছে ‘গে কমিউনিটি’ পেজ।
রাজনীতিকে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভণ্ড পির আব্দুল মোত্তালেব চিশতি তৈরি করেন আওয়ামী নির্মাণ শ্রমিক লীগ। বাগিয়ে নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি পদও। এটি ব্যবহার করে ভক্তদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
মশিউর রহমান বলেন, প্রতি সপ্তাহে তার বাসায় বসে উরস মাহফিল। যেখানে জিকিরের হিড়িক পড়ে ভক্ত নারী- পুরুষদের মাঝে। অংশ নেওয়া সবাই আসেন কাফনের সাদা কাপড় পরে। লম্বা বয়ানে মুগ্ধতা ছড়ান তিনি। ভক্ত-আশেকানদের মধ্যে আবেগে মূর্ছনা ছড়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ভক্ত-মুরিদরা অশ্রু বিসর্জন দিলেও আব্দুল মুত্তালিব থাকেন সুযোগের সন্ধানে, চোখ তার ঘুরেফিরে শিকারের খোঁজে।
মশিউর রহমানের দাবি, পবিত্র কোরআনের সর্বসাকুল্যে তিনটি সুরা জানা এ কথিত পির আব্দুল মোত্তালিবের জন্য পিরবাদ ও চিশতিয়া ত্বরিকা যৌন হয়রানি আর ব্যবসার একটা কৌশল মাত্র।
তিনি দাবি করে বলেন, মূলত যেসব মন্ত্রণালয় সারা দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মকাণ্ড চালায়, সেসব মন্ত্রণালয়ে তার আনাগোনা থাকে বেশি। কখনও মন্ত্রী, কখনও-বা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো ব্যবহার করেন ক্ষমতা বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে। একদিকে পীরবাদের বয়ান, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণার জন্য সফর করেন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। এসব সফরে পীরবাদ ও রাজনৈতিক পদবি ব্যবহার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মাস্টার রোলে চাকরি দেওয়া, রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট স্বল্প মূল্যে বরাদ্দ দেওয়া, দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর অথবা মেয়র প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেওয়ার নামে একেকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ছয় থেকে ১০ লাখ টাকা।