হৃদরোগের উন্নত চিকিৎসা হবে ৮ বিভাগে, পৌঁছাতে হবে জেলা পর্যায়েও
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:৪৯
ঢাকা: স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেছেন, সবার জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিতে দেশে চিকিৎসা সেবার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। দেশে এখনও হৃদরোগের চিকিৎসা ঢাকা-কেন্দ্রিক। সবার জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে হৃদরোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। এরপর ধীরে ধীরে তা জেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারের যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, সবার জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিতে দেশে চিকিৎসাসেবার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ৮ বিভাগীয় শহরে হৃদরোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। এরপর ধীরে ধীরে তা জেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক।
তিনি বলেন, দেশে স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত যে অবকাঠামো রয়েছে তা অত্যন্ত শক্তিশালী। এটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে হৃদরোগসহ অন্য যেকোনো রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। হৃদরোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
তিনি বলেন, অনেকের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না। সে জন্য হতদরিদ্রদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত। অন্যদিকে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করা যেতে পারে।
ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের দেশে ৪.৫ থেকে ৫ শতাংশ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। হৃদরোগের পেছনে সবচেয়ে বড় তিনটি কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ, তামাক ব্যবহার ও লিপিড প্রোফাইল (কোলেস্টেরল)। আমাদের হৃদরোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বেশি জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, এই রোগের জন্য অনেকগুলো ফ্যাক্টর দায়ী। কিন্তু তিনটা ফ্যাক্টরকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফাউন্ডেশন। এগুলোর প্রথমটি হলো হাইপার টেনশন (উচ্চ রক্তচাপ), অন্যটি হলো ধূমপান, আরেকটি হলো লিপিড প্রোফাইল (কোলেস্টেরল)। যদিও ডায়াবেটিস, ওবিসিটি থেকে শুরু করে আরও অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে, তবুও এই তিনটা ফ্যাক্টরকেই গুরুত্ব বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের দেশে শহর এবং গ্রামভিত্তিক হৃদরোগ চিকিৎসার সমতা নেই। আমাদের হৃদরোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করার বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সকল স্তরের মানুষকেই সচেতন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ১৯৬০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মৃত্যু নিয়ে একটা পরিসংখ্যান হয়েছে। ১৯৬০ সালে আমাদের প্রায় মৃত্যুর হার ছিল প্রতি লাখে ২০ জনের মত। সেটা পরবর্তীতে কমে এখন গড়ে ১১ তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও দেখেন অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার ৬৭ শতাংশ। যার মধ্যে হৃদরোগ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, আমরা অনেকে চিন্তা করি যে স্ট্রোকে মৃত্যু হয়ত বেশি, আসলে কিন্তু তা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের মাধ্যমে অথবা হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, হার্ট ফেলিওর এমন একটা জটিলতা, যা এতো ভয়ংকর যে, এটা ক্যান্সার থেকেও মারাত্মক। আপনারা যদি ক্যান্সারজনিত মৃত্যু, শ্বাসকষ্টজনিত মৃত্যু অথবা ডায়াবেটিসের জটিলতায় মৃত্যুর কথা বলেন, এগুলোর কোনটাই কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের মৃত্যুর কাছে কিছুই নয়।
তিনি বলেন, হৃদরোগ চিকিৎসায় বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে। রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজের বিরুদ্ধে আমরা অনেক ভালোভাবে জয়লাভ করতে পেরেছি। আমাদের অসংখ্য কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ আছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা জয়লাভ করতে পেরেছি। কিন্তু আমরা যেখানে পিছিয়ে আছি সেটা হল ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ। এ জন্য এই দিবসটিকে অন্যান্য দিবসের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা করা হয়েছে এবং এই যে প্রতিপাদ্য দেওয়া হয়েছে এটার অত্যন্ত গুরুত্ব ছিল বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, হৃদরোগসহ অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বর্তমান সরকার ২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। হৃদরোগ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে বর্তমানে সিলেট বিভাগ এবং জামালপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার ৫৪টি উপজেলায় উচ্চ রক্তচাপ কর্মসূচি চলমান, যেখানে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। সারাদেশের সব উপজেলায় ধীরে ধীরে এই কর্মসূচি বিস্তৃত করা হবে।
আমাদেরকে হৃদরোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বেশি জোর দিতে হবে। হৃদরোগসহ অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বর্তমান সরকার ২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। হৃদরোগ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে বর্তমানে সিলেট বিভাগ এবং জামালপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার ৫৪টি উপজেলায় উচ্চ রক্তচাপ কর্মসূচি চলমান, যেখানে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবারহ করা হচ্ছে। সারা দেশের সব উপজেলায় ধীরে ধীরে এ কর্মসূচি চালানো হবে—যোগ করেন অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ হৃদরোগের চিকিৎসা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। সারা দেশে এ ফাউন্ডেশনের ৪৫টি অ্যাফিলিয়েটেড বডি রয়েছে, যারা তৃণমূল পর্যায়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে কাজ করছে।
সারাবাংলা/এসবি
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট হৃদরোগ