Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে দেশের অর্ধেকেরও বেশি প্রবীণ

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ অক্টোবর ২০২১ ০৮:১৫

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ১১ শতাংশ প্রবীণ যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এর মাঝে ২৩ শতাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের এক চতুর্থাংশ (২৫ দশমিক ৬ শতাংশ) প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন। তুলনামূলকভাবে পুরুষের চাইতে নারীদের মাঝে অপুষ্টির হার বেশি। বর্তমানে অর্ধেকেরও বেশি (৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ) প্রবীণ পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে আছেন। বিষণ্নতা, মানসিক অসুস্থতা, অক্ষমতা, মুখগহ্বর ও দাঁতের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়াকে প্রবীণদের অপুষ্টির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই গবেষণায়।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের এক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া যায়। গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক জার্নাল বিএমসিতে প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটিতে প্রধান গবেষক হিসেবে ছিল ডা. কে এম তৌহিদুর রহমান। এছাড়াও ফাহমিদা আফরোজ খান, শারমিন এমদাদ রায়না, শারাফ সামিন, মো. হাসান ও সৈয়দ শরিফুল ইসলাম এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।

গবেষণা কাজে অপুষ্টির প্রধান কারণ চিহ্নিত করার জন্য রাজধানীর উত্তরখানের তিনটি স্থানের ৫৯ জন পুরুষ ও ৬৬ জন নারীসহ মোট ১২৫ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় পুষ্টির হার, মানসিক স্বাস্থ্য ও মুখগহ্বর ইনডেক্স বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর মাঝে দেখা যায়, ৭৩ জন প্রবীণ পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন; যা মোট সংখ্যার ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ৩২ জন প্রবীণের মাঝে অপুষ্টিতে ভোগার তথ্য দেখা যায়, যা মোট সংখ্যার ২৫ দশমিক ছয় শতাংশ। মাত্র ১৬ শতাংশ প্রবীণকে পাওয়া যায়, যাদের পুষ্টিহীনতার কোনো সমস্যা নেই।

বিজ্ঞাপন

আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটসহ তাদের অন্যান্য রোগের ইতিহাস এবং খাদ্যাভাসকেও বিবেচনায় নেওয়া হয় গবেষণায়। এই গবেষণায় ইথিক্যাল অ্যাপ্রুভাল দেয় বিএসএমএমইউর রিভিউ বোর্ড।

গবেষণায় দেখা যায়, ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশের কখনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ হয়নি। এর মাঝে ২২ শতাংশ পুরুষ বর্তমানে অপুষ্টিতে ভুগছেন। এছাড়াও ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ নারীর মধ্যে অপুষ্টির হার পাওয়া যায়। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি। এর আগে আরেক গবেষণায়ও প্রায় একই রকমের ফলাফল দেখা যায়, যেখানে নারীদের অপুষ্টির হার (২৯ শতাংশ) পুরুষের অপুষ্টির হারের (২২ শতাংশ) তুলনায় বেশি।

এছাড়াও জীবনসঙ্গী বিহীন (বিধবা, বিপত্নীক, অবিবাহিত) ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবীণদের মাঝে অপুষ্টির হার দেখা যায়। একইসঙ্গে ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবীণদের মাঝে পুষ্টিহীনতার ঝুঁকির হার দেখা যায়। বিষণ্নতায় ভোগা প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন বলে গবেষণায় জানানো হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, স্বাভাবিকের তুলনায় বিষণ্ণতায় ভোগা প্রবীণদের অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা ১৫ দশমিক ৬ গুণ বেশি। প্রবীণদের মাঝে যাদের মুখগহ্বর ও দাঁতের পরিস্থিতি খারাপ তাদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভুগছেন অপুষ্টিতে। এক্ষেত্রে যাদের মুখগহ্বর ও দাঁতের পরিস্থিতি ভালো তাদের তুলনায় বিপরীত দিকে থাকা মুখগহ্বর ও দাঁতের অবস্থা খারাপ থাকা প্রবীণদের অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি।

মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, এবং ডিম জাতীয় খাবার পরিহার করায় প্রবীণদের মধ্যে অপুষ্টি এবং পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানানো হয় গবেষণাপত্রে।

এতে উল্লেখ করা হয়, ৩১ দশমিক তিন শতাংশ অপুষ্টিতে ভোগা প্রবীণ তেলযুক্ত খাদ্য পরিহার করে, ২৫ শতাংশ প্রবীণ মাংস ও দুগ্ধজাত খাদ্য পরিহার করে।

গবেষণাপত্রে জানানো হয়, বৈশ্বিক এক জরিপে দেখা গেছে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান, সুইডেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নত দেশে অপুষ্টিতে ভুগে মাত্র পাঁচ দশমিক আট শতাংশ প্রবীণ। তুলনামূলকভাবে প্রবীণদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাভাসের গাইডলাইন কঠোরভাবে পালন করার কারণে উন্নত দেশে পুষ্টিহীনতার সংখ্যা কম হতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের।

গবেষণাপত্রে আরও জানানো হয়, সারাবিশ্বেই অন্যান্যদের তুলনায় প্রবীণদের মধ্যে অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা আনুমানিক দেড় কোটি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে সংখ্যাটি ৩.৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

এসব বিবেচনায় নিয়ে গবেষকরা জানান, প্রবীণদের অপুষ্টি দূর করতে পুষ্টিবিষয়ক সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এই কর্মসূচিতে নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির দিকে জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে মুখগহ্বর ও দাঁতের যত্ন নেওয়ার জন্য জোর দিতে হবে। সঠিক খাদ্যাভাস নিশ্চিত করে প্রবীণদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।

বিএসএমএমইউ’র পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, প্রবীণদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য নেওয়া প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেটা বাস্তবায়ন করা। একইসঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করে সেটার উন্নতির বিষয়ে ভাবতে হবে। অনেকেই দেখা যায়, পর্যাপ্ত পুষ্টিশিক্ষার অভাবে থাকেন। তাদের সচেতন করে তুলতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

উল্লেখ্য, ১ অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হচ্ছে। ‘ডিজিটাল সমতা সকল বয়সের প্রাপ্যতা’ এ প্রতিপাদ্যে এবার দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

১৯৯০ সালে জাতিসংঘ প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে দিবসটি পালন করা শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদফতর বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এ বছর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল সমতা সকল বয়সের প্রাপ্যতা’।

সারাবাংলা/এসবি/এএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর