প্যালিয়াটিভ কেয়ারে ৬০ শতাংশেরও বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৩১
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা কম এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে থাকাদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি রোগীই ক্যান্সারে আক্রান্ত। এর মাঝে বেশিরভাগ রোগীরই প্রধান লক্ষণ ছিল ব্যথা।
বিএসএমএমইউ’র পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া হাসিনের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণাটি চলতি বছরের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক জার্নাল বিএমসিতে প্রকাশিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্রে পাওয়া তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণাটি মিক্সড মেথড পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয়েছে। ১০৪ জন রোগীর মেডিকেল রেকর্ড পর্যালোচনা করে এবং ২৪ জন প্যালিয়েটিভ কেয়ার টিমের সদস্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট, চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের সেবা পরিচর্যা কারীদের কাছ থেকে সাক্ষাতকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এটা সম্পন্ন করা হয়।
গবেষণায় জানানো হয়, জীবন সীমিত ও নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগী এবং তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক সেবা প্রদানের একটি সার্বিক প্রচেষ্টা ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ বা প্রশমন সেবা। এটি গুরুতর বা নিরাময় অযোগ্য অসুস্থ রোগীদের জন্যে এক ধরণের বিশেষ সেবা।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ নিরাময় অযোগ্য বা দীর্ঘ মেয়াদী নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয় গবেষণায়।
গবেষণায় জানানো হয়, প্যালিয়েটিভ কেয়ারে থাকাদের মধ্যে ৬২ শতাংশ রোগী চিকিৎসক বা হাসপাতাল দ্বারা রেফার হয়ে হোম কেয়ারের জন্যে এসেছেন। আর তাদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই লিম্ফিডিমা কেয়ার প্রয়োজন হয়। এছাড়াও রোগীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা ও দুশ্চিন্তার লক্ষণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশ রোগী মনোসামাজিক ও আধ্যাত্মিক সেবা পেয়েছেন।
গবেষণার ফলাফলে আরও বলা হয়, রোগীদের অর্ধেকেরও বেশির বয়স ৫০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ছিল। ৮৭ শতাংশ রোগী মহিলা। ৮৩ শতাংশ রোগী বিবাহিত। ৬৬ শতাংশ রোগী গৃহিণী/গৃহকর্তা। ৫২ শতাংশ রোগীদের জন্য চিকিৎসার খরচ নিজের এবং বন্ধুদের ও পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে অর্থায়ন করা হয়।
গবেষণাপত্রের সুপারিশে বলা হয়, হোম বেইসড প্যালিয়েটিভ সেবার জন্য নির্দিষ্ট প্রোটোকল প্রয়োজন। চিকিৎসকদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সেবা সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন। সেবাদানকারীদের জন্যে সঠিক ক্যারিয়ার পরিকল্পনা দরকার। জনসচেতনতা ও প্রচার প্রয়োজন। মান ও পরিধি বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত মানব সম্পদ ও উপকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গবেষণা ফলাফল জানানোর জন্য আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। এত আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, প্রিভেনটিভ অ্যান্ড স্যোসাল মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালসহ অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে বিএসএমএমইউয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ, হোমকেয়ার ও কমিউনিটি ভিত্তিক তিন ধরনের প্যালিয়েটিভ সেবা দিয়ে আসছে। ২০০৮ থেকে হোম সেইসড প্যালিয়েটিভ সেবা প্রদান করা হয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ার দল চিকিৎসক ও নার্সদের সহায়তায় বিএসএমএমইউর ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী নিরাময় অযোগ্য রোগীদের বাড়িতে গিয়ে হোম বেইসড প্যালিয়েটিভ সেবা প্রদান করে থাকেন।
বিএসএমএমইউতে দেওয়া সেবার মান ও সেবার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সব সেবাদানকারী প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ওপর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। সেবাদানের ক্ষেত্রে সামাজিক, মানসিক কিংবা আধ্যত্মিক যত্নের পাশাপাশি শারীরিক বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কর্মীরা সবাই নিজ নিজ কাজের প্রতি খুবই অনুপ্রাণীত। রোগীর পরিচর্যাকারীরা সবাই সেবা ও সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রোগীর তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও পারিবারিক মিটিংকে তারা সেবাদানের ক্ষেত্রে ভাল বলে উল্লেখ করেছেন।
এতে বলা হয়, রোগীর যত্ন সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্যালিয়েটিভ সেবার অন্যতম শক্তিশালী সহায়ক হচ্ছে প্যালিয়েটিভ কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিসিএ)।
সারাবাংলা/এসবি