Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএসএমএমইউ’র গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৪৮

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বর্তমান প্রশাসন গবেষণা কার্যক্রমকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে এবং আন্তর্জাতিক-মানের গবেষণা কর্মকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিএসএমএমইউ’র ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক অনুষ্টানে এ কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। শুক্রবার (১ অক্টোবর) বিশ্ব প্রবীণ দিবস উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গবেষণা কার্যক্রমকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে এবং আন্তর্জাতিক-মানের গবেষণা কর্মকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বয়স্ক রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় করোনায় অপেক্ষাকৃত মৃত্যুহার কম। এবার করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে যেসব দেশের মানুষের বয়স ৬৫ বছর বয়সের বেশি সেসব দেশে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। যেমনটি ইউরোপ-আমেরিকায় দেখা গেছে। আমাদের দেশে ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী রোগী ৬০ শতাংশ হওয়ায় মৃত্যুহার কম হয়েছে। আর অন্যান্য দেশে ষাটোর্ধ্ব রোগী ৬০ শতাংশেরও বেশি। ফলে সেসব দেশে করোনায় অপেক্ষাকৃত বেশি মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইক্যুয়িটি মেইনটেইন করছে। যে যে অবস্থায় হোক, সেটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কিংবা বয়স্কদের ক্ষেত্রে, কীভাবে তাদের অসুস্থতা কমানো যায় সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যারা আছি, সবাই সব বয়সী রোগীকে সমানভাবে সেবা দিতে চাই। করোনা আমাদের শিখিয়েছে বয়স্কদেরই শুধু ডিমেনশিয়া হয় না, মানসিক অসুস্থতা শুধু বয়স্কদেরই হচ্ছে না, এই বিষয়গুলো সবার ক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক জার্নাল বিএমসিতে প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটিতে প্রধান গবেষক হিসেবে ছিল ডা. কে এম তৌহিদুর রহমান। এছাড়াও ফাহমিদা আফরোজ খান, শারমিন এমদাদ রায়না, শারাফ সামিন, মো. হাসান ও সৈয়দ শরিফুল ইসলাম এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।

গবেষণা কাজে অপুষ্টির প্রধান কারণ চিহ্নিত করার জন্য রাজধানীর উত্তরখানের তিনটি স্থানের ৫৯ জন পুরুষ ও ৬৬ জন নারীসহ মোট ১২৫ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় পুষ্টির হার, মানসিক স্বাস্থ্য ও মুখগহ্বর ইনডেক্স বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর মাঝে দেখা যায়, ৭৩ জন প্রবীণ পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন; যা মোট সংখ্যার ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ৩২ জন প্রবীণের মাঝে অপুষ্টিতে ভোগার তথ্য দেখা যায়, যা মোট সংখ্যার ২৫ দশমিক ছয় শতাংশ। মাত্র ১৬ শতাংশ প্রবীণকে পাওয়া যায়, যাদের পুষ্টিহীনতার কোনো সমস্যা নেই।

আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটসহ তাদের অন্যান্য রোগের ইতিহাস এবং খাদ্যাভাসকেও বিবেচনায় নেওয়া হয় গবেষণায়। এই গবেষণায় ইথিক্যাল অ্যাপ্রুভাল দেয় বিএসএমএমইউর রিভিউ বোর্ড।

গবেষণায় দেখা যায়, ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশের কখনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ হয়নি। এর মাঝে ২২ শতাংশ পুরুষ বর্তমানে অপুষ্টিতে ভুগছেন। এছাড়াও ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ নারীর মধ্যে অপুষ্টির হার পাওয়া যায়। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি। এর আগে আরেক গবেষণায়ও প্রায় একই রকমের ফলাফল দেখা যায়, যেখানে নারীদের অপুষ্টির হার (২৯ শতাংশ) পুরুষের অপুষ্টির হারের (২২ শতাংশ) তুলনায় বেশি।

গবেষণাপত্রে জানানো হয়, বৈশ্বিক এক জরিপে দেখা গেছে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান, সুইডেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নত দেশে অপুষ্টিতে ভুগে মাত্র পাঁচ দশমিক আট শতাংশ প্রবীণ। তুলনামূলকভাবে প্রবীণদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাভাসের গাইডলাইন কঠোরভাবে পালন করার কারণে উন্নত দেশে পুষ্টিহীনতার সংখ্যা কম হতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের।

গবেষণাপত্রে আরও জানানো হয়, সারাবিশ্বেই অন্যান্যদের তুলনায় প্রবীণদের মধ্যে অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা আনুমানিক দেড় কোটি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে সংখ্যাটি ৩.৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

এসব বিবেচনায় নিয়ে গবেষকরা জানান, প্রবীণদের অপুষ্টি দূর করতে পুষ্টিবিষয়ক সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এই কর্মসূচিতে নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির দিকে জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে মুখগহ্বর ও দাঁতের যত্ন নেওয়ার জন্য জোর দিতে হবে। সঠিক খাদ্যাভাস নিশ্চিত করে প্রবীণদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, প্রিভেনটিভ এন্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলালসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি

গবেষণা বিএসএমএমইউ উপাচার্য বিশ্ব প্রবীণ দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর