Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্লিন ফিড ছাড়া বিদেশি চ্যানেল বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ অক্টোবর ২০২১ ১৫:০৫

ঢাকা: মানুষের বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম টেলিভিশন। তবে দর্শকদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে দেশীয় চ্যানেলগুলো। সে সুযোগেই দেশের আকাশ অনেকটাই দখল করে নেয় ভিনদেশি বহু চ্যানেল। সেসব চ্যানেলে সরকারের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দেদারছে প্রচার হচ্ছিল বিজ্ঞাপন। তাতে সরকার হারাচ্ছিল রাজস্ব। এ কারণেই বিজ্ঞাপনমুক্ত না হলে বিদেশি চ্যানেল চলবে না— কঠোর অবস্থান নিয়ে এ সংক্রান্ত আইন সরকার কার্যকর করেছে।

বিজ্ঞাপন

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী— শুক্রবার (১ অক্টোবর) থেকেই ‘ক্লিন ফিড’ বা বিজ্ঞাপনমুক্ত না হলেই চ্যানেল বন্ধের আইন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। সে কারণে গতকাল (শুক্রবার) থেকেই দেশে বন্ধ হয়েছে বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার। এ সব চ্যানেল খুললেই দর্শকদের দেখানো হচ্ছে অপারেটরদের দেওয়া জরুরি বিজ্ঞপ্তি— সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনযুক্ত কোনো বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার করা যাবে না। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাবল অপারেটররা বিজ্ঞাপন থাকা বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে। এর ফলে সৃষ্ট অসুবিধার জন্য তারা দুঃখিত।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনযুক্ত বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়েছে।

তিনি দর্শকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অনেকে মনে করছেন— ক্যাবল অপারেটরা কোনো কারণে বিদেশি চ্যানেল বন্ধ রেখেছেন। বিষয়টি তা নয়। সরকার চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে।’

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বাংলাদেশে চারটি ডিস্ট্রিবিউটর বা প্রতিষ্ঠান বিদেশি চ্যানেলের সঙ্গে কাজ করে। তাদের মাধ্যমেই ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক বা দুবাইভিত্তিক কিছু টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশে অনুষ্ঠান প্রচার করে। সরকার বলছে, এসব বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের মূল কনটেন্টের সঙ্গে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না।

২০০৬ সালের ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনেও স্পষ্টভাবেই বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারে বিজ্ঞাপন দেখানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ আইনের ১৯ (১৩) ধারায় বলা আছে, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না। অথচ এ আইনের তোয়াক্কা না করেই বিদেশি চ্যানেলগুলো মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত বিজ্ঞাপন প্রচার করে যাচ্ছিল।

এ পরিস্থিতিতে সরকার এর আগেও কয়েক দফায় বিদেশি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। দেশীয় বেসরকারি টেলিভিশনগুলোও বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে কঠোর হতে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছিল। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে চ্যানেলগুলো বলেছে, আইনটি কার্যকর হলে বিদেশি চ্যানেলগুলো যে রাজস্ব না দিয়ে বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে, সে প্রবণতা বন্ধ হবে। সেক্ষেত্রে দেশীয় বিজ্ঞাপনগুলো বিদেশি চ্যানেলে যাওয়া বন্ধ হবে। তখন দেশের বেসরকারি চ্যানেলগুলো সরকারকে রাজস্ব দিয়েও যে পর্যাপ্ত বিজ্ঞাপন পাচ্ছে না, সে প্রবণতাও অনেকটা কমবে।

দেশীয় গণমাধ্যমের স্বার্থ বিবেচনায় সরকার ২০০৬ সালের ওই আইন কার্যকর করতে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত গতকাল ১ অক্টোবর থেকে সেই আইন কার্যকর হয়েছে, দেশে বন্ধ রয়েছে বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার।

এ প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেন, বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড না। ফলে বিজ্ঞাপন বাবদ কয়েক হাজার কোটি টাকা দেশে লগ্নি হওয়ার যে সুযোগ ছিল, তা বিদেশি চ্যানেলে চলে যাচ্ছে। আইনভঙ্গ করে বিদেশি চ্যানেলে যদি বিজ্ঞাপন না দেখানো হতো, তাহলে দেশের গণমাধ্যম লাভবান হতো। ক্লিন ফিড না চলার কারণে দেশের অর্থনীতি, শিল্পী, শিল্প, সংস্কৃতি ও মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সে কারণেই আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি।

বিদেশি টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত বা ক্লিন ফিড সম্প্রচার বাস্তবায়নের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের টিভি চ্যানেল মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (এটকো) এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)। বিজেসি বিবৃতিতে বলছে, ২০০৬ সালের ক্যাবল নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনে এ বিধান থাকলেও এর আগে কখনোই এটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন এই উদ্যোগে দেশি টেলিভিশন চ্যানেল শিল্পের আর্থিক সংকট কমবে এবং উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সম্প্রচারকর্মীরাও এর সুফল পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিজেসি চেয়ারম্যান ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান, রেজোয়ানুল হক রাজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে এতে করে বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোর দুইটি সম্ভাবনা তৈরি হবে। প্রথমত, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আর্থিক সংকট কেটে যাবে। যদি তারা ক্লিনফিড ব্যবহার করে তাহলে দেশের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে যেতে পারবে না। অন্যদিকে দেশের বিজ্ঞাপন দেশের টেলিভিশনে প্রচারের পরিধি বাড়বে। দ্বিতীয়ত, দেশের টেলিভিশনগুলোতে যে অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে সেগুলোর দেশে দর্শক তৈরি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি আইন বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখে তাহলে দেশীয় টেলিভিশনগুলোও নতুন নতুন এবং ভিন্ন মাত্রার কন্টেন্ট তৈরি করার সুযোগ পাবে। কারণ এতদিন টেলিভিশনগুলোতে বিজ্ঞাপন কম থাকায় কাঙ্ক্ষিত আয় হতো না। যে কারণে এর প্রভাব সাংবাদিক ও অনুষ্ঠান বিভাগ দুই পর্যায়েই পড়ত।’

রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, ‘২০০৬ সালে প্রণয়ন করা যে আইনটা রয়েছে সেটা আমরা বিভিন্ন সময় বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে বলেছি। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম দেশের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে যাওয়ার মাত্রাটা বেশি বেড়ে গিয়েছিলঅ আমি বলছি না বিদেশি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাক। অবশ্যই চলবে তবে নিয়মনীতি মেনে।’

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

ক্লিড ফিড তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিদেশি চ্যানেল

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর