ঢাকা: সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করা রিং আইডির মাধ্যমে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।
শনিবার (২ অক্টোবর) দুপুর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার) রেজাউল মাসুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গতকাল (১ অক্টোবর) সাইফুল ইসলামকে গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ (শনিবার) মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাটারা থানায় একটি মামলা (নম্বর-৫০) করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রিং আইডি প্রাথমিকভাবে একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে তারা এ প্লাটফর্মে বিভিন্ন সার্ভিস যোগ করে জনগণের কাছে থেকে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছে। এ সকল সার্ভিসের ভেতরে রয়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ, কমিউনিটি জবসসহ বিভিন্ন সার্ভিস, যার আড়ালে এ আমানত সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক জনগণ এ খাতে বিনিয়োগ করে। এর পূর্বেও তাদের করোনাকালীন ডোনেশনের মাধ্যমে জনগণের কাছে থেকে অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ পোষণ করা হয়েছিল। বর্তমানে সন্দেহের তালিকায় থাকা বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের মত তারাও অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে বিভিন্ন পোডাক্ট বিক্রি এবং ক্রেতাদের কাছে থেকে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করছিল।
রিং আইডিতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত একজন ভিকটিম ভাটারা থানা, ডিএমপিতে হাজির হয়ে ওপরে উল্লিখিত মামলা দায়ের করেন। এজাহারে রিং আইডির ১০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিআইডির শিডিউলভুক্ত হওয়ায় এ মামলাটি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ বিপুল পরিমাণ আমানত গ্রহণের কোনো অনুমোদন তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করেনি বলে জানায়। তাদের এ কার্যক্রমের সঙ্গে কারা কিভাবে জড়িত রয়েছে এবং এ বিপুল পরিমাণ অর্থ তারা কোথায়, কিভাবে সংরক্ষণ করছে তা বিস্তারিত জানতে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
তাদের এ সকল সন্দেহজনক কার্যক্রম লক্ষ্য করে বেশ কিছুদিন পূর্বেই সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডি হতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনুসন্ধানের জন্য একটি চিঠি পাঠানো হয়। বিএফআইইউ ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়াও রিং আইডির ইস্যুতে সাইবার পুলিশ সেন্টারে মানিলন্ডারিং বিষয়ে একটি অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাইবার পুলিশ সেন্টার ইতোমধ্যেই রিং আইডির অবৈধ কার্যক্রম সম্পর্কে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কমিউনিটি জবস খাতে এডভার্টাইজমেন্ট দেখে উপার্জনের কথা বলেই এ প্রতিষ্ঠান জনগণের কাছে থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিনে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে কেবল মাত্র কমিউনিটি জবস খাত হতেই গত মে মাসে ২৩ দশমিক ৯৪ কোটি, জুন মাসে ১০৯ দশমিক ১৩ কোটি এবং জুলাই মাসে ৭৯ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা অবৈধভাবে সংগ্রহ করেছে। আইনি প্রক্রিয়া চলাকালে যেন জনগণের কাছ থেকে আমানত অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাচার করতে না পারে সে জন্য ইতোমধ্যেই তাদের সকল ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এরইমধ্যে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে রিং আইডির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।