Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৭৭’র সেনাহত্যা: জিয়ার বিচারে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৫৭

ঢাকা: ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর জিয়াউর রহমান কর্তৃক সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা, লাশ গুম, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুতির ঘটনার বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন সে সময় হত্যা ও গুমের শিকার এবং চাকরি হারানো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।

শনিবার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড’ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

সভায় বক্তারা ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা, লাশ গুম, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুতির ঘটনায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরোণত্তর বিচার দাবি করেন।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে বেশ কয়েকটি কলঙ্কজনক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তার মধ্যে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবরের ঘটনা অন্যতম। প্রতিটি কলঙ্কময় দিনের মূল কুশিলব ছিলেন খুনি জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেই সে খান্ত হয়নি। এরপরেও অসংখ্য দেশপ্রেমিককে হত্যা করা হয়েছে। গত চারশ বছরের ইতিহাসে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম খুনি জিয়াউর রহমান। তার হাত ছিল রক্তে কলঙ্কিত। তার হাতে রক্তের দাগ ছিল।’

তিনি বলেন, ‘সে সময়ে ফাঁসি দেওয়ার পরে রায় দেওয়া হয়েছে- এমন নজির সারা বিশ্বে কোথাও খুঁজে পাবেন না। ফাঁসি দেওয়া হলে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু জিয়া সেটিও হতে দেয়নি। এতেই বোঝা যায় সে কতটা নিষ্ঠুর ও নির্মম ছিল। লাশ কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে তাও কেউ জানে না। সেদিন কি ঘটেছিল তা কিন্তু এখনও দেশের মানুষ জানে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘প্রহসনের বিচারের নামে জিয়া সেদিন দুই হাজার ২০০ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল। কর্নেল তাহের হত্যা মামলার বিচারের সুযোগ আমার হয়েছিল। সেখানে বহুলোক আমার আদালতে সাক্ষী দিয়ে বলেছিল, জিয়া প্রহসনের বিচারের নামে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রভুদের নির্দেশে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে।’

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘দেশের কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করে জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। এর পেছনে অনেক যুক্তি রয়েছে। মানুষ পঁচাত্তর সালের পর জয় বাংলা স্লোগান বাতিল ও রাজাকারদের ক্ষমতায় বসানোসহ মুক্তিযুদ্ধে চিহ্ন মুছে ফেলার পাঁয়তারা করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়ার কর্মকাণ্ড খুশি হয়ে পাকিস্তান থেকে তাকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তাই সে মুক্তিযোদ্ধা নয়। সেটি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে প্রমাণিত।’

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান একেতো খুনি ছিল; তার ওপর ছিল পাকিস্তানি চর। সে পাকিস্তানে খবর পাচার করতো বলে তাকে রাজাকার ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বিচারের সময় দেখেছি, যে অপরাধে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল তাতে তার ফাঁসি হয় না। ঠিক একইভাবে জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল।’

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ডের দাবির সঙ্গে সঙ্গতি জানিয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘আপনাদের সাত দফা দাবির সঙ্গে আমিও একটি দাবি রাখতে চাই। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবরের ঘটনা জাতি জানতে চায়। তারা জানতে চায়, সেদিন কী হয়েছিল, কেন কীভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, তাদের কবর দেওয়া হয়েছিল কি না, কোথায় তাদের কবর সেসব চিহ্নিত করা এবং তাদের একটি তালিকা করতে একটি স্বাধীন শক্তিশালী তদন্ত কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। আমরা অবশ্যই খুনি জিয়ার মরণোত্তর ফাঁসি চাই এবং তার মুখোশ জাতির সামনে তুলে ধরার দাবি জানাই।’

প্রখ্যাত সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এক আদর্শহীন নায়ক। তিনি সকাল বেলা হত্যাকাণ্ডের খবর নিয়ে কাজ শুরু করতেন। তার একমাত্র বিশ্বাসের জায়গা ছিল পাকিস্তান। তার বিশ্বাসের জায়গা ছিল আইএসআই। তার ছাত্র ছিলেন রশিদ-ফারুক। ১৯৬৪-৬৫ সালে তাদের তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। আমি শুধু বলব, বাংলাদেশকে সত্যিকারভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিয়োজিত করতে হয়, তাহলে জিয়াউর রহমান কিংবা এরশাদের কোন চিহ্ন দেশের রাজনীতিতে রাখা চলবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বা যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে তাদের প্রত্যেকের মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত। তাই যত বিলম্বই হোক না কেন, হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।’

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ডের দাবিগুলো হলো- ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যারা খুনি জিয়ার সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের নির্দোষ ঘোষণা করা; যারা ফাঁসি-কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র‌্যাংকে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ সরকারি সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা; যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনা ও বিমান বাহিনী সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে শহিদ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা এবং কবরস্থান চিহ্নিত করে কবরস্থানে নামসহ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা; সেই সকল সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে তাদের পোষ্যদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া; সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিল এবং এখনও আছে কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাদের পাকিস্তানি বিভিন্ন বন্দি শিবিরে আটক করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন, তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা; এবং অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত করার অপরাধে খুনি জেনারেল জিয়ার মরণোত্তর বিচার করা।

আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, ১৯৭৭ সালে ২ অক্টোবর ঢাকা সেনানিবাসে সংগঠিত তথাকথিত অভ্যুত্থানের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এমনকি সেদিন কী ঘটেছিল সত্যিকার অর্থে আমরা এখনও তা জানি না। এখনও সত্যিকার তথ্য জানতে আমরা গভীরভাবে আগ্রহী।

সার্জেন্ট এনামুল হক এনামের সভাপতিত্বে এবং কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন বীর বিক্রম মাহবুব উদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক বজলুল হক, ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে নিহত সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের ছেলে নুরে আলম, মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী লায়লা আরজুমান বানু, সৈয়দ কামরুজ্জামান, গাজী গোলাম মাওলা, হাফিজুর রহমান প্রমুখ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

জিয়াউর রহমান বিচার বিভাগীয় তদন্ত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর