সংস্কারের জন্য সাময়িক বন্ধ হচ্ছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
৩ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাংস্কৃতিক বলয়ের আওতায় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পুরনো আদল ঠিক রেখে সংস্কার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে গণপূর্ত অধিদফতর। এজন্য জাতীয় দিবস পালনসহ শহীদ মিনারকেন্দ্রিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে একটি বিকল্প শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। আপাতত নগরীর কে সি দে রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পরিবর্তে বিকল্প শহীদ মিনারে কার্যক্রম চালু থাকবে।
রোববার (৩ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বিষয়টি জানিয়েছেন। শহীদ মিনারের কার্যক্রম সাময়িকভাবে অন্যত্র সরানোর ক্ষেত্রে সংস্কৃতিকর্মীরা মেয়রের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কে সি দে রোডে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভেঙে একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স বা সাংস্কৃতিক বলয় নির্মাণ করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এর কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অধীনে আছে, মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরির অংশের পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও আটতলা অডিটরিয়াম ভবন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কার, ২৫০ জন ধারণক্ষমতার একটি উন্মুক্ত গ্যালারিসহ মুক্তমঞ্চ এবং ক্যাফে ও মিনি মিউজিয়াম।
গত জুনে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদফতর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে শহীদ মিনাকেন্দ্রিক কার্যক্রম দেড় বছরের জন্য অন্যত্র সরানোর প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে এ-ও বলা হয়, মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গনে তারা সাময়িক কার্যক্রমের জন্য একটি বিকল্প শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেবে, যাতে জাতীয় দিবসগুলো পালনে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়। মেয়র চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিককর্মীদের মতামত নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছিলেন।
নির্মাণাধীন সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সাংস্কৃতিককর্মীদের জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান যে অবয়ব আছে, সেটা ঠিক রেখেই সংস্কার করা হবে। মূল নকশায় কোনো পরিবর্তন হবে না। আগামী নয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০২২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে কে সি দে রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ শেষ করে সেটি খুলে দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র।
একইসঙ্গে মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গণে বিকল্প শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শুরুর নির্দেশনা দিয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ চলাকালীন ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৬ই ডিসেম্বরসহ জাতীয় দিবসগুলোর পালনে যাতে কোনো ব্যাঘাত না হয়, সেজন্য সিটি করপোরেশনের স্কুল প্রাঙ্গণে বিকল্প শহীদ মিনার তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে স্কুল প্রাঙ্গনে বিদ্যমান যে শহীদ মিনার আছে সেটি কোনো অবস্থাতেই ভাঙা যাবে না। সেটিও ঠিক রাখতে হবে।’
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়, মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গনে বিকল্প শহীদ মিনারটি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরি হবে। বিজয় দিবসের আগেই সেটি চালু হবে। তবে বিকল্প হলেও সেটিও হবে স্থায়ী শহীদ মিনার।
সভায় মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক বলয় প্রকল্প বাস্তবায়নের একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রসঙ্গটি যখন আসে, তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এই সিদ্ধান্ত সাংস্কৃতিককর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া হবে। আমি শহীদ মিনারের সংস্কার চাই। তবে মূল নকশা ঠিক রাখতে হবে। এটি ভেঙে ফেলা বা অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে আমি নই।’
বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকমাস আগে একটা কথা বলা হয়েছিল যে, শহীদ মিনার সরিয়ে নেওয়া হবে। আজকের (রোববার) সভায় গিয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আসলে শহীদ মিনার নয়, শহীদ মিনারকেন্দ্রিক যে কার্যক্রম সেটা সাময়িকভাবে অন্যত্র করতে হবে। যেহেতু আদল ঠিক রেখে শহীদ মিনারের সংস্কার করা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সময়টুকু তো দিতে হবে। তবে আমরা বলেছি যে, সময় নয় মাস যেন ঠিক থাকে, এর মধ্যেই যেন দ্রুততার সঙ্গে কাজটা শেষ করা হয়। মিউনিসিপ্যাল স্কুলের গেইট খুবই অপ্রশস্ত, আমরা সেটা ঠিক করতে বলেছি। এছাড়া সাংস্কৃতিক বলয়ে চট্টগ্রামের আন্দোলন-সংগ্রামের যে ইতিহাস আছে, সেটা তুলে ধরার প্রস্তাব আমি দিয়েছি।’
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘শহীদ মিনারের কার্যক্রমটা যেহেতু কয়েক মাসের জন্য সরানোর কথা বলা হয়েছে, সেটাতে কেউ আপত্তি করেননি। তবে আমার প্রস্তাব ছিল, মিনি মিউজিয়ামের পরিবর্তে শহীদ মিনারের পাশে ও লাইব্রেরির সামনে যাতে উন্মুক্ত প্রাকৃতিক প্রাঙ্গণটা ঠিক থাকে। সাংস্কৃতিক বলয়ের কারণে যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া সাংস্কৃতিক বলয়ের আওতায় একটি ডরমেটরি নির্মাণের কথাও বলা হয়েছে।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন- গণপূর্ত অধিদফতরের চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রকৌশলী ওম প্রকাশ নন্দী। মতবিনিময়ে আরও অংশ নেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, কবি অভীক ওসমান, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, কাউন্সিলর রুমকী সেনগুপ্ত, সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, চসিকের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আহমেদ সাকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির, দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ, আব্দুল হালিম দোভাষ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, গ্রুপ থিয়েটার সমন্বয় পরিষদের শেখ শওকত ইকবাল, শহীদ পরিবারের সদস্য প্রদীপ বড়ুয়া, জাসদ নেতা ইন্দুনন্দন দত্ত, নুরুল আলম মন্টু, জসিম উদ্দিন বাবুলসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম