‘ইসি নিয়োগ আইন-২০২১’ নামে সুজনের খসড়া উপস্থাপন
৪ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৫৮
ঢাকা: ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২১’ নামে একটি আইনের খসড়া উপস্থাপন করলো সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সোমবার (৪ অক্টোবর) সুজনের পক্ষ থেকে ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শিরোনামে একটি অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার এই খসড়া পাঠ করেন।
আইনের খসড়ায় নির্বাচন কমিশনে নিয়োগে একজন জ্যেষ্ঠতম প্রধান বিচারপতিকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে নাগরিকদের কাছ থেকে নাম আহ্বান করবে। কমিটি যাচাই বাছাই করে ন্যূনতম ৫ জন নারীসহ ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা ও তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করার কথা খসড়ায় বলা হয়।
এরপর প্রাথমিক তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে অনুসন্ধান কমিটি গণশুনানির আয়োজন ও তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে সর্বসম্মতভাবে ন্যূনতম ২ জন নারীসহ ৭ জনের একটি প্যানেল প্রস্তুত করে রাষ্ট্রপতিকে জমা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। অনুসন্ধান কমিটির কর্তৃক প্রকাশিত ও পাঠানো প্যানেল থেকে রাষ্ট্রপতি তালিকা প্রাপ্তির ৭দিন পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন পদে নিয়োগ দেবেন বলে বলা হয়েছে খসড়ায়।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সংবিধান মেনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইনটি হতে হবে জনস্বার্থে; দলীয় বা কোটারি স্বার্থে নয়। এটি প্রয়োগও হতে হবে জনগণের স্বার্থে, যাতে কয়েকজন সৎ, নির্ভীক ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পান।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ধারাগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইনটি নিয়ে কাজ করতে হবে। এর আগেও ২০১১ সালে আমরা একটি খসড়া প্রস্তাব করেছিলাম, দুঃখজনক হলেও এটি নিয়ে পরবর্তীতে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি।’
ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম বলেন, ‘সংবিধানের ধারাগুলো অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের কাজটি করতে হবে। অন্যান্য দেশের প্র্যাকটিসগুলো কিভাবে হচ্ছে, আমরা সে বিষয়ে আবারও চিন্তা করতে পারি।’
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি উল্লেখ না করে আপিল বিভাগ কর্তৃক মনোনীত একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতি বলা যায়। কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে প্রথম চারজন নিয়োগ দিয়ে এক বছর পর আরেকজন কমিশনয়ার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটির ব্যাপারে তিনি বলেন, এটির মাধ্যমে জনগণকে ধোকা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে।’
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু নির্বাচন করা এবং সে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সেই লক্ষ্যে এ ধরনের একটি আইন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে আমি মনে করি। তবে এটাও সত্য যে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে না পারলে কোনো কমিশন দিয়েই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারব না।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘অবশ্যই একটি ভালো নিয়োগ আইন আমাদের দরকার। কিন্তু এই সরকার ব্যবস্থাই সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। গত তের বছর ধরে পুলিশ ও প্রশাসনকে যেভাবে সাজানো হয়েছে এতে কোনো শক্তিশালী কমিশনের পক্ষেও ফাংশন করা সম্ভব হবে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন করার পাশাপাশি সরকার ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলতে হবে।’
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের ধাপে ধাপে এগুতে হবে। এখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলাপ হচ্ছে এরপর নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলাপটাই ধাপে ধাপে করতে হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/এমও