Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যতক্ষণ শ্বাস আছে, দেশের জন্য কাজ করে যাব: শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ অক্টোবর ২০২১ ২৩:২৯

ঢাকা: মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার যে লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্য পূরণে আমৃত্যু কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি— যতক্ষণ আমার শ্বাস আছে, দেশের জন্য কাজ করে যাব। যখন মৃত্যু আসবে, তখন মরে যাব! এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কাজেই দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি নিয়ে জাতির পিতার যে চিন্তাভাবনা ছিল, তা আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। লক্ষ্য একটাই— মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া— সেটাই করে যাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফেরার পর ওই সফর নিয়ে মতবিনিময় করতেই এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিকভাবে তৎপর হয়ে ওঠা নিয়ে একজন গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমি নির্বাচনে বিশ্বাস করি, জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। কারণ আমি কখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগি না যে আমি এত কাজ করেছি, আমার অপজিশন নেই। কাজেই আমি এখন বসে থাকলে খরগোশ-কচ্ছপের দৌড়ের মতো দশা হবে। কাজেই নির্বাচনকে আমরা নির্বাচন হিসেবেই দেখতে চাই। জনগণের ভোট যেন আমরা পাই, সেজন্য জনগণের কাছে যেতে চাই। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে জনগণের ভোটেই আমরা ক্ষমতায় ফিরে আসতে চাই। আর জনগণ যদি ভোট না দেয়, আসব না— পরিষ্কার কথা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

তিনি আরও বলেন, প্রতিপক্ষ কে কিংবা তাদের কোনো রাজনৈতিক আদর্শ আছে কি নেই— এগুলো তাদের বিষয়। কিন্তু আমরা দল হিসেবে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই। আওয়ামী লীগ বোধহয় বাংলাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে করে থাকে। কেবল সাংগঠনিক কার্যক্রম নয়; সেই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়, আমাদের পরিকল্পনা, ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা, দিকদর্শন, দেশকে নিয়ে চিন্তাভাবনা— সবকিছুই আমরা করে থাকি। আর সে কারণেই একদিকে দলকে সুসংগঠিত করা হচ্ছে, আরেকদিকে ভোটের রাজনীতিতে জনগণের কাছে যাওয়া বা জনগণের কাছে ভোট চাওয়া বা ভোটের প্রস্তুতি নেওয়াটাও হচ্ছে।

‘উন্নত বাংলাদেশের রূপরেখা করে দিয়ে গেলাম’

উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রূপরেখা আওয়ামী লীগ সরকারই করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দল সরকারে বা তিনি নিজে সরকারপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় না থাকলেও যেন দেশ সেই রূপরেখা অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে— সেই লক্ষ্যেই এই কাজগুলো করে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশটাকে উন্নত করার চেষ্টা করছি। কারণ আমাদের তো টার্গেট আছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য ছিল। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কেমন হবে, সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়েছি। কারণ ২০৪১ সাল পর্যন্ত তো আর বেঁচে থাকব না। কিন্তু হ্যাঁ, যারাই ক্ষমতায় আসুক, সময়ের বিবর্তনে সেগুলো সংশোধন করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেটা অনুসরণ করে যেন তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে দিয়ে গেলাম।

কেবল ২০৪১ সালের বাংলাদেশ নয়, একশ বছর পর বাংলাদেশ কোন অবস্থানে থাকবে, ব-দ্বীপ পরিকল্পনার মাধ্যমে তার রূপরেখাও প্রণয়ন করা হছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

‘জাতির পিতাকে এতটুকু সময়ও দেওয়া হয়নি’

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের আগেই ঘাতকের বুলেট কেড়ে নেয় জাতির পিতার প্রাণ। বাবার মৃত্যুর সেই ঘটনা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিতীয় বিপ্লবের যে কর্মসূচি জাতির পিতা দিয়েছিলেন, কেন দিয়েছিলেন সেটা আপনারা জানেন? ২৪ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে তিনি যুদ্ধ জয় করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর যে জাতির পিতা আমাদের মাঝে ফিরে আসেন, সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় পাওয়া। এরপর তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রায় দেড়শর মতো দেশের স্বীকৃতি পেল। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আমাদের সদস্যপদ দিলো। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তিনি গড়ে তুলছিলেন। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি কাজগুলো করে যাচ্ছিলেন। অথচ তাকে এতটুকু সময় দেওয়া হলো না!

শেখ হাসিনা বলেন, আমার মনে প্রশ্ন জাগে— কেন, এরা কারা? এরা কি সেই পাকিস্তানি যারা চেয়েছিল যে বাংলাদেশ সবসময় পাকিস্তানের প্রদেশ থাকুক? সারাজীবন পাকিস্তানের পদলেহন করে চলুক? সেই চিন্তার মানুষরাই কি সবকিছুতে জাতির পিতার বিরোধিতা করেছে? এত অল্প সময়ের মধ্যে যে মানুষটা তার জীবনের সবটুকু ঢেলে দিলেন, সেই মানুষটাকে গুলি করে মারল এ দেশেরই মানুষ!

১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের পেছনে গভীর চক্রান্ত ছিল বলে অভিযোগ তোলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তখন যিনি খাদ্য সচিব ছিলেন, তাকে তো জিয়াউর রহমান মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কেন বানিয়েছিল? একবার চিন্তা করেন, একটু গবেষণা করে দেখেন।

বাকশালের সমালোচনাকারীদের জবাব…

বাকশাল গঠন করা নিয়ে যারা জাতির পিতার সমালোচনা করেন, তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, তার হাতেই কিন্তু সব ক্ষমতা। ক্ষমতার ওনার অভাবটা কী ছিল! কিন্তু তিনি একটি সিস্টেমে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন, যেন করে পুরো দেশ একসঙ্গে উন্নত হতে পারে। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি সম্পর্কে আমার জানা আছে এবং যে গ্রাম সমবায়ের ড্রাফট তিনি করেছিলেন, সেই ড্রাফটও আমার কাছে আছে। আমি সেটা পড়েছি, দেখেছি। আজ আপনারা লক্ষ করবেন, এই যে আজকে মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি, সেটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লক্ষ্য ছিল। গুচ্ছগ্রাম দিয়েই তিনি শুরু করেছিলেন— তখনকার নোয়াখলী, এখনকার লক্ষীপুরের চর থেকে। সেজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না।

‘ষড়যন্ত্রকারীরা থাকবেই, যেকোনো সময় আমার মৃত্যু হতে পারে’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোসহ কৃষির যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যেটি করতে চেয়েছিলেন, সেই কাজগুলো আমি করে যাচ্ছে। আমি আমার মতো করে যাচ্ছি। প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন শহরের নাগরিক সুবিধা পায়, সেটিই আমার লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু যে গভর্নর সিস্টেম করেছিলেন, এর মাধ্যমে সেটিই করতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য এই কাজগুলো করে যাচ্ছি।

ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, জাতির পিতার হত্যাকারীরা, মুক্তিযুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধী ছিল তাদের সন্তানেরা, সেই সঙ্গে আমাদের কিছু লোক আর অবৈধ সরকার, হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের ষড়যন্ত্র থাকবেই এ দেশে। সেটা আমি জানি। সেটা জেনেই আমি বাংলাদেশে পা দিয়েছি। যেকোনো সময় আমার মৃত্যু হতে পারে। চেষ্টাও হয়েছে বারবার। মরি না, এখন কী করবে— এটা তাদের দুঃখ!’

সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠন

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ রয়েছে আর মাস চারেক। এরই মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর জন্য সার্চ কমিটি গঠন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সার্চ কমিটি নাকি আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে— এমন প্রশ্ন রাখা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি করবেন। তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। সেভাবেই এটি হবে।’

গাজীপুর সিটির মেয়রকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভিডিওতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে দেখা গেছে তাকে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে একটি শোকজ নোটিশ দিয়েছে। তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ায় সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, সে প্রশ্নও প্রধানমন্ত্রীকে করেন একজন গণমাধ্যমকর্মী।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখন ডিজিটাল যুগে কথা নানাভাবে ভেঙে ভেঙে কীভাবে কে প্রচার করেছে, কীভাবে কী হয়েছে— এসব বিষয়ে জানার জন্য তাকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার জবাব পেলে পরে আমার পার্টি (আওয়ামী লীগ) বসবে, পার্টি বসে তখন সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রসঙ্গ ই-কমার্স সাইটের প্রতারণা

ই-কমার্সের নামে জনগণের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত পাওয়া গেলে তা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে যেটুকু করার, সেটুকু করেছি। তবে এ রকম হায় হায় কোম্পানি যখন তৈরি হয়, আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) যদি শুরুতেই সেটি ধরিয়ে দিতে পারতেন, কোম্পানিগুলো মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারত না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টাকাগুলো যারা নিয়েছে তারা সেগুলো কোথায় পাচার করেছে, তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। কোকো (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সন্তান প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো) টাকা পাচার করেছিল। আমরা কিন্তু কিছুটা হলেও ফেরত আনতে পেরেছি। অর্থাৎ খালেদা জিয়ার ছেলের টাকা ফেরত আনতে পেরেছি। এ রকম বহু আছে। চেষ্টা করে যাচ্ছি। করোনা এসে কিছুটা সমস্যা করেছে। না হলে আরও অনেকের টাকাই আনতে পারতাম।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, এই যে মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ টাকা বানানোর যে প্রতারণা করেছে, এর উপযুক্ত শাস্তি অবশ্যই হবে। আমরা বসে নেই। এদের ধরা হয়েছে। দুয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একবার যখন ধরা হয়েছে, তারা টাকা কোথায় রাখল, সেটাও বের করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রধানমন্ত্রী শুরুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

গণভবনে প্রান্তে সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এ প্রান্তে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। দুই প্রান্ত থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন গ্রহণ করে উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর