নাম ছিল নড়াই নদী, হয়ে গেল রামপুরা খাল!
৫ অক্টোবর ২০২১ ২০:১৮
হাতিরঝিলের কারণে এখন বেগুনবাড়ি বা রামপুরা খাল অনেকেরই পরিচিত। কিন্তু আসলে এটি খাল নয়, নদী। রাজধানীর রামপুরা হয়ে বয়ে যাওয়া নড়াই নামের এই নদীটি এখন সরকারি নানা নথিপত্রে রামপুরা খাল বা বেগুনবাড়ি খাল নামে পরিচিতি পাচ্ছে। নদী থেকে খালে পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি দখল ও দূষণের কবলে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে নদীটি। তাই এই নদী রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে নদীতে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে নদী রক্ষায় কাজ করা পরিবেশবাদি সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৭টায় রাজধানীর রামপুরা ব্রীজে নড়াই নদীর নাম ও দৈর্ঘ্য লেখা ব্যানার স্থাপন করার মাধ্যমে দিনে কর্মসূচী শুরু হয়। সকাল ১১ ঘটিকায় মেরাদিয়া গুদারাঘাটে মানববন্ধন শেষে রঙিন কাগজের নৌকা ভাসানো হয়। স্থানীয় সচেতন নাগরিকবৃন্দ ব্যতিক্রম এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
নৌকা ভাসানোর আগে নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকারি নথিপত্রে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নড়াই নদীকে খালে পরিণত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ময়লার ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করে নদীটি দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছে খোদ সিটি কর্পোরেশন। তারা বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তৈরি করা ডাম্পিং স্টেশনকে ঘিরে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে বড় বড় স্থাপনা। এ অবস্থা চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই নদীটি তার পরিচয় হারিয়ে ড্রেনে পরিণত হবে। অতি দ্রুত সরকারি নথিপত্রে নড়াই নদীকে তার নিজ নামে পরিচিত করার পাশাপাশি নদীটি সংরক্ষণে দ্রুত সীমানা পিলার দেওয়ারও দাবি জানান তাঁরা।
এসময় নোঙর বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুমন শামস বলেন, ঢাকার চতুর্দিকে চারটি বড় নদী এবং অভ্যন্তরীণ ৪৫টি খাল পারস্পরিক আন্তসংযোগের মাধ্যমে উজানের অববাহিকার পানি নিষ্কাশন সম্পন্ন করত। যাতায়াতে নৌ-পরিবহন, নৌ-বাণিজ্য, অভ্যন্তরীণ পানি নিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা এবং বন্যার ঝুঁকি হ্রাসে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মাধ্যমে ঢাকা শহরের পরিবেশ-প্রতিবেশ নাগরিকবান্ধব রাখত এ জলাধারগুলো; কিন্তু সময়ের ব্যবধানে নগর সম্প্রসারণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে ঢাকার চতুর্দিকের নদী ও খাল হারিয়ে যাচ্ছে। দক্ষ পানি ব্যবস্থাপনার অভাবে অভ্যন্তরীণ খালগুলোও বহুমুখী নগর সুবিধায় অবহেলিত থাকে। ফলে ঢাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ যাতায়াতে জলঝট, যানজট ও সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। পূর্ব দিকের বালু নদী থেকে পশ্চিম দিকের তুরাগ নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল নড়াইয়ের ধারাটি।
‘বর্তমানে দখল-দূষণে মৃতপ্রায় এই নদীকে রামপুরা খাল বলে হচ্ছে! রামপুরা ব্রিজের নিচে দুটি ড্রেনসহ ত্রীমোহনী পর্যন্ত প্রায় ২০টি ড্রেন দিয়ে প্রতিনিয়ত দূষিত পানি এসে পড়েছে এ নড়াই নদীতে। গৃহস্থালি ও স্যুয়ারেজ দুই ধরনের পানিই আসছে এ ড্রেন দিয়ে। এর মধ্যে একটি ড্রেন গুলশান-বাড্ডা-তেজগাঁও এলাকার; অন্যটি রামপুরা, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার এলাকার। বর্জ্য থেকে উৎপন্ন গ্যাস বুদ্বুদের মতো উঠে পানিতে ফেনা তুলছে। আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে শীত-গরম সব সময়ই বাড়ির জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে, ততই দুর্গন্ধ বাড়ছে। ভুক্তভোগী মানুষ এর প্রতিকার চাচ্ছে। নদীটির সীমানা নির্ধারণ, দখলদার উচ্ছেদ ও খনন করে নদীর তীরে সবুজায়নের মাধ্যমে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার দাবি জানাই’, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা থেকে বালু নদী হয়ে রাজধানীর সাথে একসময় সংযোগ ছিলো এ নড়াই নদীর। সেই প্রবাহমান নদীকে আমরা প্রতিদিন হত্যা করেছি। এবং তার কুফলও ইতিমধ্যে আমরা ভোগও করছি। ইতিমধ্যে রাজধানীর অনেক খাল হারিয়ে গেছে বলে প্রতি বছর শহরে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। নড়াই নসদীটি এখনও বালু নদীর সংগে মিশে শীতলক্ষা’র সংগে বহমান আছে। সরকারি কাগজে এ নদীকে খাল নামে পরিচিত করে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা এই ষড়যন্ত্র তীব্র প্রতিবাদ জানাতে আজকে আন্দোলনে নেমেছি। কাগজের নৌকা ভাসিয়ে আজ প্রতিকী কর্মসূচি করলাম আগামীতে আরও বড় কর্মসূচি নেবো।’
এ সময় উস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ তোফাজ্জল হোসেন (সাবেক কাউন্সিলর ৭৫ নং ওয়ার্ড, ঢাকা দক্ষিণ), নিউজনেক্সট পত্রিকার সম্পাদক নজরুল ইসলাম মিঠু, নোঙর সংগঠনের উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ, নোঙর-নড়াই নদী ইউনিটের সদস্য লিয়ন অন্তর হাসান শাকিল, আহসান হাবীব তিতু, খোকন ভূঁইয়া, মোহাম্মদ হাবিব, আবুল বাশার, মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ মিয়া, ওয়ালিউর রহমান রঞ্জু এবং সাদিক হোসেন প্রমুখ।
সারাবাংলা/আরএফ/