রাত ফুরালেই মহালয়া; দেবীপক্ষ শুরুর প্রতীক্ষা
৬ অক্টোবর ২০২১ ০২:৩৩
ঢাকা: আশ্বিনের ‘শারদ প্রাতে’ আলোকবেণু বাজতে অপেক্ষা রাত পোহানোর। ভোর হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই শুরু হয়ে যাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার পুন্যলগ্ন মহালয়া।
পুরাণমতে এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। শ্রীশ্রী চন্ডিপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবির্ভাবই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। মহালয়া মানেই আর মাত্র ছয় দিন, তারপর মায়ের পূজা শুরু। হওয়ার। এই দিনকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।
রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলোতে চলছে মহালয়ার আগমনী বার্তা আর শেষ সময়ের প্রস্তুতি।
বুধবার (৬ অক্টোবর) সূর্যোদয়ে শ্রীশ্রী চন্ডিপাঠের মধ্য দিয়ে মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
এই চন্ডিতে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা ও দেবীর দুর্গার প্রশস্তি গাঁথা বর্ণনা করা হয়েছে। এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান হয়। পিতৃ-মাতৃহীন সন্তানেরা এই তিথিতে তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন। সনাতন বিশ্বাস অনুসারে এই দিনে মৃতদেরকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়। আর প্রয়াতদের সেই সমাবেশই মহালয়। মহালয় থেকে মহালয়া, পিতৃপক্ষের শেষ দিন।
১১ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। মহালয়ার মধ্য দিয়েই দেবী দুর্গার আগমন ধ্বনি শুরু হয়ে যায়। দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা পাঁচ দিনের। মহা ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত। ১৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসব শেষ হবে।
বুধবার (৬ অক্টোবর) ভোরে চণ্ডীপাঠে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শুরু হবে দেবীপক্ষ। কৈলাসের শ্বশুরালয় ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে পৃথিবীতে আসবেন দেবী দুর্গা শুরু হবে তার পূজার ক্ষণগণনা। মহালয়ার পাঁচ দিন পর ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব। মহালয়ার পরবর্তী পূর্ণিমায় কোজাগরি লক্ষ্মীপূজার মধ্যে দিয়ে দেবীপক্ষের সমাপ্তি হবে।
এবার দেবী আসছেন ঘোড়ায় চেপে। যার অর্থ সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। আর দেবী যাবেন দোলায় চড়ে। পুরান অনুযায়ী, দোলায় গমনে দুর্যোগ-দুর্বিপাক দেখা দেবে।
ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গন, কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপসহ দেশের বিভিন্ন মন্দিরে ও মন্ডপে ভোরে চণ্ডিপাঠ, চণ্ডিপূজা এবং বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে মহালয়ার ঘট বসানো হবে।
মহানগর পূজা কমিটির তরফ থেকে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা মহানগরে ২৩৭ মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সূত্রাপুর থানায় সবচেয়ে বেশি ২৫টি, কোতোয়ালি থানায় ২১, ওয়ারীতে ১৬, গেণ্ডারিয়ায় ১৪, হাজারীবাগে ১৩, তুরাগে ১২, বাড্ডায় ১০, বনানীতে ৯, মোহাম্মদপুরে ৯, দারুসসালাম, গাবতলী এবং ডেমরায় আট আর তেজগাঁও থানায় ছয়টি মণ্ডপ রয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, করোনার কারণে গতবারের মতো এবারও শোভাযাত্রা পরিহার করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মণ্ডপ বা মন্দির কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে সুবিধাজনক সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা নেবেন।
তবে, শুক্রবার হওয়ায় বেলা ১২টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত জুমার নামাজের সময় প্রতিমা বিসর্জন পরিহার করতে বলেছে পূজা উদযাপন পরিষদ।
প্রসঙ্গত, বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবী দুর্গা অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত দেবী; মহামায়া, যিনি অসীম শক্তির উৎস। হিন্দু পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। সেই মহিষাসুর, যাকে কোনো মানুষ বা দেবতা হত্যা করতে পারবে না। শিবের বর পেয়ে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে। এক সময় মহিষাসুর সমগ্র বিশ্বের অধীশ্বর হতে চায়। আর সেই সময়েই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবের সম্মিলিত শক্তিতে মহামায়ার রূপে অমোঘ নারীশক্তির সৃষ্টি হয়। দেবী সজ্জিত হন দেবতাদের দশ অস্ত্র আর তার সিংহবাহিনী নিয়ে। নয় দিন ব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে হারিয়ে হত্যা করার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করেন দেবী।
সারাবাংলা/এসবি/একেএম