Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১ সাব-রেজিস্ট্রারে চলছে ৪ উপজেলার রেজিস্ট্রি অফিস!

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ অক্টোবর ২০২১ ১২:৫৫

সাব রেজিস্ট্রার অফিস, চুয়াডাঙ্গা সদর

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় চারটি উপজেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর— তিন উপজেলার কার্যালয়েই নেই সাব-রেজিস্ট্রার। এ অবস্থায় দামুড়হুদা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এম নাফিজ বিন জামানকেই সামলাতে হচ্ছে চার উপজেলার ভূমি অফিসের কার্যক্রম। এতে জমি কেনাবেচাতে চলছে অচলাবস্থা। জমির ক্রেতা-বিক্রেতা, দলিল লেখকসহ সেবাপ্রত্যাশী মানুষ পড়েছেন নানারকমের হয়রানি ও বিড়ম্বনার মধ্যে। কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। দীর্ঘদিন হলো এ পরিস্থিতি চললেও তা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলামও বেশিরভাগ সময় জেলায় থাকেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, শফিকুল ইসলাম সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই তার বাড়ি কুড়িগ্রামে থাকেন।

জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলার ভূমি অফিসের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সংকট কাটেনি জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে।

এদিকে, বিধিনিষেধ পরবর্তী সময়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার স্মৃতিকনা দাস ও জীবননগর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমান বদলিজনিত কারণে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তখন থেকেই চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগরের উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়গুলোর কার্যক্রম থমকে গেছে। জেলার চার উপজেলার মধ্যে কেবল দামুড়হুদা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিযুক্ত আছেন এম নাফিস বিন জামান।

স্থানীয়রা জানান, দামুড়হুদা উপজেলা কার্যালয়ে নিযুক্ত থাকলেও দলিল লেখকদের অনুরোধে সাব-রেজিস্ট্রার না থাকা চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর জন্যও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন নাফিস বিন জামান। গত ১০ সেপ্টেম্বর কাজে যোগ দিয়ে একাই কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছেন চার উপজেলার কাজ। স্বাভাবিকভাবেই চার উপজেলা অফিসের কাজ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। আর সে কারণেই ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

বিজ্ঞাপন

রেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, সপ্তাহের প্রতি রবি ও সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা; মঙ্গল ও বুধবার দামুড়হুদা উপজেলা; রবি, সোম ও মঙ্গলবার আলমডাঙ্গা উপজেলা এবং সপ্তাহের পাঁচ দিনই জীবননগর উপজেলায় জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চলার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রর সংকটে দামুড়হুদা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এম নাফিজ বিন জামান একাই জেলার চার উপজেলার জন্য এক দিন করে নির্ধারণ করে জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়গুলোতে জনবল সংকটের কারণে ও কাজের পরিধি বেশি হওয়ায় দিনরাত কাজ করেও অনেক কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যেত। বর্তমানে প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে তিনটি উপজেলার কার্যক্রম। মাঝে মধ্যে দামুড়হুদা সাব-রেজিস্ট্রার ওই তিনটি উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও তার একার পক্ষে কাজ চালিয়ে নেওয়া সবসময় সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে জেলার রেজিস্ট্রি কার্যালয়গুলোর কার্যক্রম একবারেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ভুক্তভোগী আনিসার ও জয়নাল শেখ জানান, সাব-রেজিস্ট্রার সংকটের দোহাই দিয়ে রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে চলছে প্রকাশ্যে ডাকাতি। রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা বলে সাব-রেজিস্ট্রারের নামে কিছু দলিল লেখক ও দালাল প্রতিদিন মানুষকে হয়রানি করে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে। সকাল থেকে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল জমা নেওয়া হয়। টাকার বিনিময়ে দলির সরিয়ে অন্য দলিল রেজিস্ট্রি করার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে এসে সারাদিন বসে থেকেও জমি রেজিস্ট্রি করতে না পারায় ফিরে যেতে হচ্ছে মানুষকে।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে তার কার্যালয়ে কয়েক দিন যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তার কার্যালয়ে উপস্থিত কর্মচারীরা তার মোবাইল নম্বর দিতে অপরাগতা জানিয়েছেন। কার্যালয়ে অনুপস্থিত থার্কা কারণ অনুসন্ধানে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই তার বাড়ি কুড়িগ্রামে থাকেন।

গতকাল মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, তিনি ছুটিতে ছিলেন। এখন কার্যালয়ে ফিরছেন। তবে কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কথাটি তিনি অস্বীকার করেন।

উপজেলা অফিসগুলোতে সাব-রেজিস্ট্রার সংকটের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বিষয়টি নিবন্ধন অধিদফতরে জানানো হয়েছে। বদলি প্রক্রিয়ার কাজ করে আইন মন্ত্রণালয়। তবে আলমডাঙ্গা উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি শিগগিরই যোগ দেবেন। চুয়াডাঙ্গা সদর ও জীবননগর উপজেলাতেও সাব-রেজিস্ট্রারের পদ শিগগিরই পূরণ হবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।

জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলামের ছুটি সংক্রান্ত বিষয়টি তার কার্যালয়ের টাইপিস্ট উজ্জ্বলসহ অন্যরা কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে ওই কার্যালয়ের একাধিক কর্মচারী এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন, রেজিস্ট্রার বিভিন্ন কারণ দেখি প্রায়ই জেলার বাইরে থাকেন।

সারাবাংলা/টিআর

উপজেলা ভূমি অফিস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

বাড়তে পারে তাপমাত্রা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৪

গুলশানে দুইজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৫

সম্পর্কিত খবর