Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ শিক্ষার্থীকে জাপানে নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল পাচারকারী চক্র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৬ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৩৬

ঢাকা: রাজধানীর পল্লবী থেকে নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থী জাপান যাওয়ার জন্যই বাসা থেকে বেরিয়েছিল। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের সহায়তা করতে চেয়েছিল পাচারকারী একটি চক্র। আদম পাচারকারী ওই চক্রটির সন্ধানও পেয়েছে র‌্যাব। পল্লবী থানার মামলায় গ্রেফতার হওয়া তরিকুল্লাহ ও রকিবুল্লাহর মাধ্যমে ওই চক্রের নারী সদস্য হাফসা চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তিন শিক্ষার্থীর।

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে উদ্ধারের পর বুধবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে মিরপুর পাইকপাড়া কার্যালয়ে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

তিন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাবের অধিনায়ক বলেন, ‘তারা তিনজন বান্ধবী এবং তারা মিরপুরের স্থানীয় কলেজে লেখাপড়া করত। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। দিনদিন লেখাপড়ার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যার ফলে তাদের পরিবার পড়াশোনার জন্য ও ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিত। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধি-নিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে বলে জানায় তারা।

ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তাদের নিজেদের পরিবারের নিয়ম-কানুন ভালো লাগত না এবং এসব সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম কানুন তাদের কাছে অত্যাচার মনে হতো। তারা মূলত উচ্চাভিলাসী জীবন-যাপন পছন্দ করত। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি বিশেষ করে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। তারা অধিক সংখ্যক জাপাান সিনেমা-সিরিয়াল, সাংস্কৃতিক প্রোগাম দেখে দেখে জাপানি ভাষা কিছুটা আয়ত্ব করে নেয়। তারা দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবন-যাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করে। জাপানি সংস্কৃতিতে নারী পুরুষের সম-অধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক হওয়ার সুযোগ এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি-নিষেধ না থাকার কারণ উল্লেখ করে তারা।

বিজ্ঞাপন

গত দুইমাস পূর্বে তিন বান্ধবী তাদের বন্ধু তরিকুলের সঙ্গে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে ২৪/২৫ বছরের এক নারীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। তার সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে তারা জাপানে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। হাফসা চৌধুরী এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। তিন বান্ধবী হাফসার সঙ্গে পরিকল্পনা করে কক্সবাজার রুট দিয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার উদ্দেশে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে রিকশাযোগে প্রথমে গাবতলী যায়। হাফসার পরামর্শে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন তাদের অবস্থান চিহ্নিত না করতে পারে সে জন্য তারা নিজেদের ইমেইল, ফেসবুক আইডি এবং ব্যবহৃত মোবাইল গাবতলী এলাকায় ধ্বংস করে।

পরবর্তীতে তারা নৌকাযোগে নদী পার হয়ে আমিন বাজার এলাকায় পৌঁছালে হাফসার দুইজন লোক একটি কালো রঙের নোহা কারযোগে অজ্ঞাতনামা একটি জায়গায় নামিয়ে দেয়। সিএনজি যোগে তাদের কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তিন বান্ধবী তাদের কথামতো কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে চট্টগ্রামগামী কোন ট্রেন না পাওয়ায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বাসযোগে কুমিল্লা ময়নামতি যায়। সেখানে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করার উদ্দেশে এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে নিজেদের চুল কেটে ফেলে পশ্চিমা বেশ-ভূষা ধারণ করে। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তারা কেডস্, পোশাক এবং একটি মোবাইল কেনে। সেখান থেকে তারা পুনরায় বাসযোগে চট্টগ্রাম সিনেমা প্লেস বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দুইটি মোবাইল কেনে। এরপর বাসযোগে কক্সবাজারে যায়। আত্মগোপনে থাকার জন্য তারা কোনো সিম ক্রয় করেনি। কক্সবাজার পৌছে তারা গত ১ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার কলাতলিতে একটি হোটেলে অবস্থান করে সিমের পরিবর্তে ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে।

২ অক্টোবর তারা কক্সবাজার বিচ এলাকায় বেড়াতে গেলে হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ এবং শফিক নামের ৩০ থেকে ৩২ বছরের দুই লোক তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়। ওই ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে হোটেল অবস্থান নেয়। পাশাপাশি হোটেলের আশেপাশে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ছদ্মবেশে বাসযোগে কক্সবাজার থেকে রওনা হয়ে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর পৌছায়। সেখান থেকে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে র‌্যাব-৪ এর একটি দল তাদের উদ্ধার করে।

প্রসঙ্গত হাফসা নামে নারীর কোনো ফেসবুক, ইমেইল আইডি ভিকটিমরা শনাক্ত করতে না পারায় হাফসাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি এখনও। এ ছাড়া নোহা প্রাইভেটকারে থাকা দুই ব্যক্তি এবং কক্সবাজারের বিচ এলাকায় স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া দুই ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

র‌্যাব জানিয়েছে, তিন শিক্ষার্থী জাপান যাওয়ার স্বপ্ন হয়তো দেখেছিল। তবে সাগর পথে যাওয়ার জন্য যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল হাফসা চক্র। তারা যে কোনো উপায়ে হোক না কেন ওই তিন শিক্ষার্থীকে ভারতে পাচার করত। মূলত পাচারের উদ্দেশ্যেই এরকম ঘটনা ঘটে থাকে। এর আগে অনেক ঘটনাতেই প্রমাণিত হয়েছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর পল্লবীর ১১ নম্বর প্যারিস রোডের সি -ব্লক ১৮ নম্বর লাইন এলাকা থেকে ওই তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজ হন। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, একটি মানব-পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ওই তিন শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে বের করে। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ওই তিন শিক্ষার্থী নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, সার্টিফিকেট ও মূল্যবান সামগ্রী সঙ্গে করে নিয়ে গেছে।

গ্রেফতার হওয়া মো. তরিকুল্লাহ, মো. রকিবুল্লাহ, জিনিয়া ওরফে টিকটক জিনিয়া রোজ ও শরফুদ্দিন আহম্মেদ অয়ন (১৮) মানবপাচারকারী চক্রটির সঙ্গে জড়িত বলেও ওই তিন শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

পল্লবী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর