রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া
৭ অক্টোবর ২০২১ ১০:০৩
ঢাকা: রাজধানীতে বেড়ে গেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইকারী এতটাই বেপরোয়া যে, তারা খুন করতেও দ্বিধা করছে না। মোবাইল ছিনতাইয়ের সময় আহত হচ্ছেন অনেকে। এ ছাড়া অজ্ঞান করে জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও সম্প্রতি বেড়েছে।
ভুক্তভোগীদের দাবি- রাতের বেলা পুলিশি টহল কম থাকায় ছিনতাই বেড়ে গেছে। আর পুলিশ বলছে, নিয়মিত টহলের পরও এত বড় রাজধানীতে দুএকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার মানে এই নয় যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
গত ৫ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার সংলগ্ন ব্যাংক এশিয়া ও প্রিন্স রেস্তোরাঁর সামনের সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল এক যুবক। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ১২টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে।
বুধবার (৬ অক্টোবর) সকালে তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম সারোয়ার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজনের সহায়তায় এসে মরদেহ শনাক্ত করেন। তার নাম কেশব রায় পাপন (২৪)। তিনি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। এছাড়া পাপন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন।
তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘নিহতের নাম কেশব রায় পাপন (২৪)। তার বাবার নাম মংলু রায়। গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলায়। তিনি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মনিপুরী পাড়ার চার নম্বর গলির একটি মেসে থাকতেন। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্সের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। পাশাপাশি এলিফ্যান্ট রোডে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করতেন।’
এসআই বলেন, গত ৫ অক্টোবর রাতে কাজ শেষ করে এলিফ্যান্ট রোড থেকে বাইসাইকেলযোগে মনিপুরী পাড়ার বাসায় ফিরছিলেন। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে কারওয়ান বাজার প্রিন্স হোটেলের সামনে এলে কয়েকজন ছিনতাইকারী তাকে ছুরিকাঘাত করলে তার মৃত্যু হয়।
গোলাম সারোয়ার আরও বলেন, ‘ঘটনার পরপরই পরিদর্শনসহ নানা বিষয় তদন্ত করা হচ্ছে। সেখানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে এসআই সারোয়ার বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে পুলিশের টহল টিম কারওয়ান বাজারে ছিলেন। এক দিকে থাকলে আরেকদিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সব সময়ই তৎপর থাকে। তারপরও দুএকটি ঘটনা ঘটছে। আমরা তদন্ত করছি। ছিনতাইকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে সেগুনবাগিচায় অফিস শেষে মক্কা পরিবহনের বাসে চরে মিরপুর পল্লবীতে বাসায় ফিরছিলেন প্রতীক মাহমুদ। বাসটি যখন সাত রাস্তা পার হয়ে বিজি প্রেসের সামনে ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ায় ঠিক তখনই বাসের জানালা দিয়ে একজন লাফ দিয়ে হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। এসময় আশেপাশে বেশ কয়েকজন ছিলেন ওই ছিনতাইকারীর সঙ্গে। পরে তিনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) অন্তর্ভুক্ত করেন।
জানতে চাইলে প্রতীক মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের সময় ওই এলাকায় কোনো পুলিশ টহল দেখতে পাইনি। এমনকি সিগনালের কাছে ট্রাফিক পুলিশও ছিল না। সাধারণ লোকজন উপস্থিত থাকলেও কেউ ছিনতাইকারীকে আটকায়নি। ফোন কেড়ে নেওয়ার পর আমি বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারীর পিছু নিলেও ওরা বেশ কয়েকজন থাকায় নিরাপত্তার কথা ভেবে আর এগুয়নি। পরে রাতেই থানায় গেলে আইএমইআই নম্বর না থাকায় অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। পরদিন আইএমইআই নম্বর নিয়ে অভিযোগ দিলে পুলিশ সেটি গ্রহণ না করে হারিয়ে গেছে মর্মে জিডি করতে বলেন। তখন ফোন হারিয়ে গেছে লিখে দিলে থানা পুলিশ জিডি নেয়। ফোন হারানোর এক সপ্তাহ হলেও এখনো কোনো ফোন উদ্ধারের কোনো খবর দেয়নি পুলিশ।’
এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে মাহমুদা জামান নামে একজন সিনিয়র নার্স মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসে আজিমপুরের বাসায় ফিরছিলেন। বাসটি নীলক্ষেত এলাকায় এলে ফোনে একটি কল আসে। কল রিসিভ করে কানে দিতেই ছিনতাইকারীদের দল লাফ দিয়ে মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়।
মাহমুদা জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নীলক্ষেতে বাসে ফোন কানে দিতেই চিল পাখির মতো ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। বাস থামিয়ে পিছু নিলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। রাস্তায় অনেক লোক থাকলেও কেউ এগিয়ে এলো না। পরে থানায় অভিযোগ দিতে চেয়েছিলাম। তবে হারিয়ে যাওয়া লিখতে হবে, জিডি নেবে এ জন্য আর থানায় যাইনি।’
সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে- ওই ফোনে বিভিন্ন রকম ছবি বা ডকুমেন্টস আছে। সেগুলো দিয়ে আবার কেউ কোনো ক্ষতি করে কিনা? এছাড়া জিডি করেও তো ফোন পায় না বেশিরভাগই।
ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃঞ্চ পদ রায় বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা গণমাধ্যমে পড়েছি। এগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের ডিবি ও থানা পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সবসময় লেগে থেকে কাজ করছে। একটা তদন্ত করতে গিয়ে অন্য অনেক ঘটনার উদঘাটন হয়েছে। অনেক ফোন আমরা উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের ডেকে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ চেষ্টা করছে একটিও যেন ছিনতাইয়ের ঘটনা না ঘটে। তারপরও দুএকটি ঘটনা ঘটছে। তদন্ত হচ্ছে কেউ রেহাই পাবে না। পুলিশের পাশাপাশি জনগণকেও আরও বেশি সচেতন হতে হবে। তবেই ছিনতাইটা রোধ করা সম্ভব হবে।’
সারাবাংলা/ইউজে/একে