জলবায়ুর পরিবর্তনে বাড়ছে ডেঙ্গুসহ সংক্রামক রোগ: বিশ্বব্যাংক
৭ অক্টোবর ২০২১ ১৮:২৩
ঢাকা: বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে মানসিক রোগও। পরিবর্তনশীল জলবায়ু পরিস্থিতি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস, পানি ও মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে একটি যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে আরও শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, শিশু ও বয়স্করা। যারা ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে বাস করে।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। এ জন্য আয়োজন করা হয় এক ওয়েবিনারের। সেখানে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়েছে। এ সময় অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।
প্রতিবদনে বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ২০১৯ সালের ফেবব্রয়ারিতে ঢাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। ৪৫ বছরে এমন বৃষ্টি আর হয়নি। পরবর্তী মাসগুলোতেও অনেক বেশি বৃষ্টি ছিল। যার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছিল। তখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যায়।
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। শরীরে তীব্র ব্যথা সৃষ্টির কারণে এর ডাকনাম ‘ব্রেকবোন ফিভার’। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। ডেঙ্গুতে ১৮ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এবার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সংক্রামক এবং অন্যান্য জলবায়ু-সংবেদনশীল রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করতে পারে। এছঅড়া সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়কে একত্রিত করা, দেশকে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো আরও কার্যকরভাবে মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
এদিকে বিশ্ব ব্যাংক বলছে, সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ মানুষ বিষন্নতায় আক্রান্ত। আর ৬ শতাংশের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষণ্নতা ও উদ্বেগের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সম্পর্ক রয়েছে।
অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ গবেষণা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশবিদ সেলিমুল হক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যেসব গবেষণা হয়, তাতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর গবেষকদের ভূমিকা কম। এ ধারায় পরিবর্তন আনতে হবে।’
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, সবচেয়ে দুর্বল দেশের মধ্যে থাকার পরও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করেছে এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য দেশীয় সমাধান চালু করেছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ‘শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সুস্পষ্ট প্রভাব দেখানোর আরও প্রমাণসহ বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অভিযোজনের ক্ষেত্রে তার সাফল্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে। যা উদীয়মান জলবায়ু-সংবেদনশীল রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে পারে।’
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম