৭৮৯ ভোট পেয়ে টিনু চকবাজারের কাউন্সিলর
৭ অক্টোবর ২০২১ ২০:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনে যে দুই প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা ছিল, তাদের একজন আরেকজনকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন দৃশ্যত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ছিল, তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছে। গণনা শেষে সন্ধ্যায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন ফলাফল ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. কামরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনে ৬ হাজার ৯৩২ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটগ্রহণ নিয়ে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের প্রার্থী নুর মোস্তফা টিনু কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন ব্যাডমিন্টন র্যাকেট মার্কার প্রার্থী আব্দুর রউফ।’
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী নুর মোস্তফা টিনু ৭৮৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ পেয়েছেন ৭৭৩ ভোট। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে মাত্র ১৬ ভোট বেশি পেয়েছেন।
চকবাজার ওয়ার্ডে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩২ হাজার ৪১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ২১৬ জন এবং নারী ভোটার ১৫ হাজার ৮২৫ জন। ১৫টি ভোটকেন্দ্রের ৮৬টি বুথে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার মোতায়েন ছিল। কেন্দ্রের বাইরে ছিল র্যাব-পুলিশের কঠোর অবস্থান। কেন্দ্রের আশপাশে দিনভর কোনো জটলা করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘একদম ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ভোট হয়েছে। কোথাও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ ছিল না।’
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ২১ জন, যার মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৮ জন, বিএনপির একজন এবং বাকি দু’জন স্বতন্ত্র।
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিনটু। চট্টগ্রাম পৌরসভার কমিশনার থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পর্যন্ত- তিনি ছিলেন সাতবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ওই ওয়ার্ডে সাবেক বামপন্থী রাজনীতিক থেকে পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া মিন্টু কোনোদিন ভোটে হারেননি। গত ১৮ মার্চ তিনি মারা যান।
অপরাধ কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত দু’জন মনোনয়ন পত্র দাখিলের কারণে চকবাজার ওয়ার্ডের এই উপ-নির্বাচন শুরু থেকেই আলোচনায় ছিল। এরা হলেন- আবদুর রউফ ও নুর মোস্তফা টিনু।
নুর মোস্তফা টিনুর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখা ও হত্যচেষ্টাসহ থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। তিনি এখন কারাগারে। নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করলেও সংগঠনটির কোনো পদে নেই টিনু। একসময় সাবেক এক মন্ত্রীর অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী হওয়ার পর তার বলয়ে ভেড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় বারবার সংঘাতে নাম এসেছে টিনুর। ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন অস্ত্রসহ। পরে জামিন পেলেও কয়েকমাস আগে আবার জেলে যান।
অন্যদিকে, আবদুর রউফ চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী রউফের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং লালনসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান আবদুর রউফ। দুই বছর আগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল।
সারাবাংলা/আরডি/এমও