শিক্ষার্থীদের আগমনে সরগরম জবি ছাত্রলীগ, খেলার মাঠ রক্ষায় নিশ্চুপ
৭ অক্টোবর ২০২১ ২২:১২
ঢাকা: করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় টানা ১৭ মাস সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার পর বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রায় দেড় বছর পর অধিকাংশ বিভাগ ও ইনিস্টিউটে বিভিন্ন ব্যাচের পরীক্ষা থাকায় সকাল ৭ টা থেকে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মূখর হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রিয় বাসগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রবেশ করেছে ক্যাম্পাসে।অনেক শিক্ষার্থীকেই আবেগাপ্লুত হয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ এসময় শিক্ষার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আগমন উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে ব্যাপক শো ডাউনের প্রস্তুতি নিতে থাকে জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টার দিকে পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতার পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ এবং মাস্ক বিতরণ করা হয়। দুপুর ১ টার দিকে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। মিছিল শেষে শান্ত চত্বরে জড়ো হয়ে বক্তব্য রাখে জবি ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা। এসময় আগে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র হাতাহাতি শুরু করে কয়েকজন কর্মী, পরে সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে শান্ত হয় তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আশরাফুল ইসলাম টিটন, ইব্রাহীম ফরাজী, নাহিদ পারভেজ, সৈয়দ শাকিল, আল আমিন শেখ এবং জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ধূপখোলায় অবস্থিত জবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ দখল করে সেখানে মার্কেট ও পার্ক নির্মাণ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগের বিষয়টি নজরে আসার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠগুলো। কিন্তু এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ভূমিকায় দেখা গেছে জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কিছু কর্মী সারাবাংলাকে মাঠ দখল নিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা জানালেও, কিন্তু সিনিয়রদের আশ্বাস না মেলায় প্রকাশ্যে আন্দোলনে নামতে পারছেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে পদপ্রত্যাশী জবি ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ শাকিল সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাঠ রক্ষার জন্য আমরা আগামী ১০ তারিখের পর কর্মসূচি দেব। উপাচার্য স্যার দেশে ফিরলে ওনার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় করণীয় নির্ধারণ করব। এখনও ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীরা না ফেরায় এবং পরীক্ষা থাকার কারণে আন্দোলনে যাওয়া যাচ্ছে না। আশা করি আমরা শিগগিরই কর্মসূচি দিতে পারব। সিটি করপোরেশনের কাজ বন্ধ করতে হলে, একটি বড় আন্দোলনের দরকার আছে।’
পদপ্রত্যাশী আরেক নেতা আল আমিন শেখ বলেন, ‘আমাদের কমিটি নেই, তাই সাংগঠনিকভাবে কর্মসূচি দিতে পারছি না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় অবস্থিত ধূপখোলা মাঠটি ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীদের খেলার কোনো মাঠ না থাকায় ৭ একর জমির উপর অবস্থিত মাঠটি তিন ভাগে ভাগ করেন। এক ভাগ তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজকে ব্যবহারের মৌখিক অনুমতি প্রদান করেন। আর একটি অংশ ‘ইস্ট এন্ড খেলার মাঠ’ নামে একটি ক্লাবের কর্তৃত্বে রয়েছে। অপর অংশটি রাখা হয় জনসাধারণ খেলার জন্য।
বর্তমানে ধূপখোলা মাঠটি ডিএসসিসির একটি মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। মাঠটিতে নির্মাণ করা হবে একটি বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট, পাশে একটি খেলার মাঠ, হাঁটার জন্য রাস্তা, ক্যাফেটেরিয়া ও পার্কিং লট। এরইমধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে।
সারাবাংলা/একে