Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পলাশের ‘আনন্দময়’ ড্রাগন বাগান আনছে অর্থকড়ি

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ অক্টোবর ২০২১ ০৮:১৪

পলাশ সরকারের ড্রাগন ফলের বাগান

মানিকগঞ্জ: ড্রাগন বিদেশি ফল। বাংলাদেশের মানুষের কাছে একসময় এই ফল অপরিচিত থাকলেও এখন সবার কাছেই পরিচিত নাম। দেশের বিভিন্ন জেলায় কম-বেশি ড্রাগনের আবাদ হচ্ছে। তেমনি রাজধানী ঢাকার কাছের জেলা মানিকগঞ্জ। এই জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রাগনের আবাদ হলেও দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী গ্রামের পলাশ সরকারের ড্রাগনের বাগান।

সারি সারি ড্রাগন গাছের থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে লাল রঙের ড্রাগন ফল। দেখে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। সবার কাছে সুস্বাদু এই ড্রাগন ফল নিতে এবং বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ছুটে আসছেন। পলাশের এই অর্থকরী ফলের বাগান হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর আনন্দের উৎসও।

সরজমিনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কঘেঁষা বানিয়াজুরী এলাকার দুর্গাবাড়িতে পলাশ সরকারের ড্রাগন বাগানে দেখা যায় মনোমুগ্ধকর এক প্রকৃতি। প্রায় দুই বিঘা জায়গা জুড়ে শুধুই ড্রাগনের সমারহ। প্রতিটি গাছেই শোভা পাচ্ছে গোলাকৃতি ও লাল রঙের ড্রাগন ফল। স্বাদে ভরপুর এই বাগানের ড্রাগন ফল বছর কয়েক আগেও এলাকার মানুষের কাছে অনেকটাই অপরিচিত ছিল।

২০১৯ সালের ১৩ জুন পলাশ সরকার এই বাগান তৈরি করা শুরু করেন তিনি। চুয়াডাঙ্গার জীবন নগরের ‘রুপ মিয়ার’ বাগানে গিয়ে প্রথমে ড্রাগন চাষ পদ্ধতি দেখেন এবং সেখান থেকেই চারা কিনে নিজের বাগানে রোপণ করেন। প্রায় ১০ মাসেই ড্রাগন গাছ পরিপক্কতা পায় এবং এই সময়ের মধ্যে পুরো বাগানের প্রতিটি গাছে সাদা রঙের ফুলে ফুলে ভরে যায়। এ দৃশ্য আরও মনোমুগ্ধকর।

ইউটিউবে দেখেই মূলত ড্রাগন ফলের প্রতি আগ্রহী হন এই ড্রাগন চাষী। ড্রাগন আবাদ করতে গিয়ে অনেক কাঠখড়ও পোড়াতে হয়েছে তাকে। তবে এখন আর বাগান নিয়ে চিন্তা নেই। পরিপক্ক একটি বাগান তৈরি করতে পেরে পলাশ উচ্ছ্বাসিত। তার এই ড্রাগন বাগান পরিচিত করে তুলেছে এলাকাকেও।

পশাল সরকার বলেন, ‘ড্রাগন ফলের চারা যখন বাগানে রোপণ করা হয় তখন খুব চিন্তায় ছিলাম। কারণ বিদেশি এই ফল আমাদের মাটিতে হবে কিনা এটা ভেবে। তবে শুরু থেকেই আমরা সৌভাগ্যবান। উর্বর মাটির সঙ্গে ড্রাগন গাছের সখ্যতায় বেড়ে উঠে প্রতিটি গাছ। মাত্র ১০ মাসেই ড্রাগনের কারিশমা দেখা যায় পুরো বাগান জুড়েই। মূলত এপ্রিল মাস থেকে প্রতিটি গাছে গাছে সাদা রঙের ফুলে ভরে যায় পুরো বাগান। এরপর সেই ফুল থেকে ফলে রূপান্তরিত হয়ে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। টকটকে লাল রঙের গোলাকৃতি একেকটি ড্রাগন ফলের ওজন হয় ৩০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুন মাসেই গাছ থেকে ফল কাটা শুরু হয়, চলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রতিটি গাছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি ফল পাওয়া যায়। যা বাণিজ্যিক ভাবে আমরা বিক্রি শুরু করেছি। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করছি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। জেলা ও জেলার বাইরের এলাকা থেকেও মানুষজন বাগানের ড্রাগন ফল কিনতে আসেন।’

শুধু তাই নয় ড্রাগনের বাগান দেখতে প্রতিদিনই মানুষজন ছুটে আসে জানিয়ে পলাশ সরকার বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে বর্তমানে ১ হাজার ৫০০ ড্রাগন গাছ রয়েছে। গাছে যখন ফুল এবং ফল ধরে দৃশ্যটি একেবারেই অন্যরকম, তা বলে বোঝানো যাবে না।’

ছেলের ড্রাগন বাগানের দেখভাল করতে বেশ আনন্দ পান মা আমোদিনী সরকার। জানালেন, বাগানে যখন ফুল হয় তখন সাদা ফুলে ভরে উঠে পুরো বাগান। এরপর পাকা লাল ফলে ভরা বাগান দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। অনেক মানুষজন এই বাগান দেখতে ছুটে আসেন। মানুষের আনন্দ দেখলে আমাদেরও খুব আনন্দ হয়।

এলাকার জাকির হোসেন জানান, তিনি ঢাকা থেকে ড্রাগন ফল কিনতেন। এখন আর ঢাকায় যেতে হয় না। বাড়ির কাছের এই বাগান থেকে সরাসরি ফল কেনেন তিনি। গাছ থেকে ফল কেটে এবং তা খাওয়ার মজাই অন্যরকম।

স্থানীয় মিরন মিয়া জানান, পলাশ সরকারের এই ড্রাগন বাগনটি এলাকার পরিচিতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ এই বাগানের ফল নিতে কিংবা বাগান দেখতে দূরদূরান্ত এলাকার মানুষের পদচারণা বাড়ছে। এতো বড় বাগান জেলার কোথায় নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সারাবাংলা/এমও

ড্রাগন ড্রাগন বাগান বিদেশি ফল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর