কানাডা যাওয়া সহজ নয় তবে দক্ষ হলে অসম্ভবও নয়
৯ অক্টোবর ২০২১ ১৯:১৪
ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে কেউ যদি কানাডা যেতে চায় সেটি সহজ নয়, তবে দক্ষ হলে তা অসম্ভবও নয়। বিশেষ করে কারিগরি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকলে কানাডা যাওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। দক্ষতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন কারিগরি কোর্স করে সার্টিফিকেট অর্জন করা যায়।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সারাবাংলার আইন বিষয়ক নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বারস’-এ যুক্ত হয়ে আইনজীবীরা এসব কথা বলেন। এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন আইন: এক্সপ্রেস এন্ট্রির বিকল্প?’
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও রেগুলেটেড কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ব্যারিস্টার ফ ম সাজিদ বিন হােসেন এবং শারমিন আলম। বরাবরের মতোই অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা ও সঞ্চালনা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফ্ফাত গিয়াস আরেফিন।
কানাডা যাওয়ার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ইমিগ্রেশন প্রসেস হলো এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম। ২০২১ সালে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৫ হাজার নতুন অভিবাসী নেবে কানাডা। কিন্তু এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে ফেডারেল স্কিলের এসব প্রোগ্রামের ড্র বন্ধ আছে। এর মধ্যে কানাডায় অবস্থানরত অভিবাসন প্রত্যাশীরা এই প্রোগ্রামের আওতায় কিছুটা সুযোগ পেলেও বাইরে থেকে আবেদনকারীরা সেই সুযোগ পাননি। এই বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে এই ড্র আবারও চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সেই সুযোগের অপেক্ষায় সময় নষ্ট না করে কানাডা যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিরা এখনই এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/3072160633106784/
অনুষ্ঠানে আলোচকরা জানান, যাদের সিআরএস পয়েন্ট ভালো তাদের এখনই প্রোফাইল খোলা উচিত। এমন না যে এক্সপ্রেস প্রোফাইল খুললে টাকা খরচ হচ্ছে। কারও আইইএলটিএস স্কোর ভালো থাকলেও অপেক্ষা না করে প্রোফাইল খোলে রাখার পরামর্শ দেন তারা। যদিও এক্সপ্রেস এন্ট্রির জন্য বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্কোর কমে যায়, তবুও প্রোফাইল ওপেন করে রাখলে সুযোগ আসলে দ্রুত ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আইনজীবীরা এই অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করে জানান, কানাডা সরকার আগামী দুই বছরের মধ্যে ৮ লাখের বেশি অভিবাসী গ্রহণ করবে। তাই আগে থেকে এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোফাইল ওপেন করে রাখা ভালো। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে এফএসডাব্লিউপি ড্র হলে ইতোমধ্যে খুলে রাখা প্রোফাইল অনুযায়ী কানাডা সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বাংলাদেশে বসে কানাডায় জব পাওয়া সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে আলোচকরা বলেন, এটি খুব সহজ নয় আবার অসম্ভবও নয়। যাদের দক্ষতা আছে ইন্টারন্যাশনাল এক্সপ্রেসে তারাই বাংলাদেশ থেকে জব অফার পাচ্ছেন। এই মুহূর্তে কিছু রেসিডেন্ট জবের চাহিদা তৈরি হয়েছে। যেমন কারিগরি চাকরি, এন্ট্রি এনালাইসিস, ডিজিটাল মার্কেটিং, কম্পিউটার দক্ষতা আছে এমন লোক নেওয়া হচ্ছে। প্রচুর ইঞ্জিনিয়ার যেমন, সিভিল, ইলেকট্রিক, মেকানিক্যাল ও অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদেরও চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও শেফ, কৃষি ও অন্যান্য কারিগরি কাজেরও বেশ চাহিদা আছে। সেক্ষেত্রে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি ও ৩ থেকে ৫ বছরের আন্তর্জাতিক মানের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলেই চলবে। আর কারও ক্যারিয়ার গ্যাপ থাকলেও তার উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে।
আলোচকরা জানান, বেশিরভাগ এনওসি লেভেলের চাকরির জন্য অন্ততপক্ষে স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। আবার কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে এক্সপ্রেস প্রোফাইলের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া সম্ভব।
স্পেশালাইজড চাকরি পেতে চাইলে অনলাইনে বিভিন্ন শর্ট বা লং কোর্স করে প্রোফাইল ভারী করা যায়। ফ্রিল্যান্সিং চাকরির অভিজ্ঞতাও এক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। তাই বাংলাদেশে বসেই কেউ কানাডায় জব পেতে চাইলে বসে না থেকে প্রো-অ্যাক্টিভ হতে হবে ও যত দ্রুত সম্ভব প্রোফাইল তৈরি করে রাখার তাগিদ দেন আলোচকরা।
তবে এক্ষেত্রে ‘ঘোস্ট কনসাল্ট্যান্ট’ অর্থাৎ অবৈধ কনসাল্ট্যান্ট থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দেন তারা। অবৈধ কনসালট্যান্টরা ভিসা হওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা দেন কিন্তু না হলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সুযোগ থাকে না। কারণ তারা রেজিস্টার্ড নয়। অন্যদিকে রেজিস্টার্ড কনসালট্যান্টরা কখনোই শতভাগ নিশ্চয়তা দেবেন না, সেই সুযোগও নেই। কারণ, ক্লায়েন্টের কাজ না হলে বা কনসাল্ট্যান্টের ভুলের জন্য এপ্লিকেশন বাতিল হয়ে গেলে তিনি অভিযোগ করলে সেই কনসাল্ট্যান্টের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই লাইসেন্স নেই এমন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে না যেয়ে নিজেই খোঁজখবর করে ও একজন লাইসেন্সধারী কনসাল্ট্যান্টের সহায়তা নিয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেন আলোচকরা।
আলোচকরা পরামর্শ দিয়ে বলেন, গুগলে আইসিসিআরসি মেম্বারলিস্ট লিখে সার্চ দিয়ে কনসাল্ট্যান্টের বৈধতা আছে কিনা তা খুঁজে দেখা যায়। অথবা নির্দিষ্ট কনসাল্ট্যান্ট বা প্রতিষ্ঠানের নাম লিখেও দেখা যায় যে তারা লাইসেন্সধারী কিনা।
সারাবাংলা/আরএফ/এআই