Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অস্থির বাজার, দিশেহারা সাধারণ মানুষ

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ অক্টোবর ২০২১ ০৮:০৯

ঢাকা: এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্রব্যমূল্য প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে খেটে মানুষজনের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কারও ন্যূনতম কোনো দায়িত্ব নেই। যার কারণে বাজারে এক লাফে জিনিসের দাম দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলছে।

গত শুক্র ও শনিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর শান্তিনগর, কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, নাজিরা বাজার, কাপ্তান বাজার ও যাত্রাবাড়ী বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞাপন

ক্রেতাদের অভিযোগ, গত সপ্তাহের থেকে চলতি সপ্তাহে জিনিসের দাম দ্বিগুণ। যেমন গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে তা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল গত সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এ সপ্তাহে সেটি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।

কাঁচা মরিচের দাম ছিল গত সপ্তাহে ১২০ টাকা ১৫০ টাকা। সেটি বেড়ে গিয়ে শুক্র ও শনিবার বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। যেখানে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এছাড়া বাজারে যত সবজি রয়েছে তার প্রত্যেকটির দাম ৬০ টাকা কেজির ওপরে।

সূত্রাপুর বাজারের মুদি দোকানি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, চিনি, ময়দা, মসুর ডালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। যাদের মজুদ ছিল তারাই লাভবান হয়েছে। আর যাদের মজুদ ছিল না তাদের বেশি দামে কিনে, বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ (দেশি) ৮০ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, মসুর ডাল ১৩০ টাকা, সয়াবিল তেল ১৫০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। ময়দার দামও বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা। যার ফলে হোটেল রেস্তোঁরায় তৈরি খাবারের দাম বেড়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। খেটে খাওয়া মানুষগুলো যারা ব্রয়লার মুরগীর ক্রেতা তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে বলে অভিযোগ। তাদের দাবি, অন্তত ব্রয়লার মুরগীর দামটা আগের মতো রাখা দরকার। তারা বলেন, ‘খামারে একই মুরগী সারাবছর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বড়জোর ১৪০ টাকা বিক্রি হলো, সেখানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে হয়ে গেলো ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।’

কারওয়ান বাজারে সপ্তাহে নিয়মিত ব্রয়লার মুরগী কিনতেন ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আগে ২০০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে পুরো মুরগী পেতাম। দাম ছিল ১২০ টাকা কেজি। এখন সেটা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি হয়েছে। কিনমু কি আর খামু কি? এই একটা জিনিস খাইতাম। কিন্তু এটাও আর মনে হচ্ছে খাওয়া হবে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মাছের দাম বাড়ে। গরুর মাংস তো অনেক আগেই খাওয়া বাদ দিয়েছি। বছরে, ছয়মাসে খেতে পারি। সেটাও কোনো আত্মীয় স্বজন বা ঈদ এলে খাওয়া হয়। এখন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মুরগীর মাংসও আর খাওয়া হবে মনে হচ্ছে। দামটা ১৫০ টাকার নিচে হলে ভালো হতো।’

হঠাৎ করে ব্রয়লার মুরগীর দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেট তৈরি করে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি দামের টাকা খামারিরা পাচ্ছেন না বলে জানায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। পাইকারি বাজারে আসার পর আড়ৎদাররাই এই বাড়তি দাম লুফে নিচ্ছেন।

চালের দাম জানতে চাইলে শাহাজাদপুরের ভাই ভাই আড়ৎদার আব্দুল হালিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫২ টাকার চাল সপ্তাহের ব্যবধানে ৬০ টাকা, ৬০ টাকার চাল ৭০ টাকা ৫৬ টাকার চাল ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

যাত্রাবাড়ীতে শনিবার দুপুরে বাজার করতে এসেছেন জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘যা আয় করি তা দিয়ে বাসা ভাড়া আর খেতেই শেষ। তাহলে পোশাক আর চিকিৎসা, সন্তানদের লেখাপড়া কিভাবে হবে। বাজারে এমন কোনো জিনিস নেই যা নাগালের মধ্যে রয়েছে। সবগুলোই নাগারের বাইরে চলে গেছে।’

কাপ্তান বাজারে কথা হয় জিনাত আরার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টিসিবির ট্রাক থেকে কিছু জিনিস কিনেছি একটু সাশ্রয়ী দামে। কিন্তু টিসিবি তো মাছ মাংস, ডিম বা অন্য সবজি বিক্রি করে না। কাজেই সেগুলোর জন্য বাজারে আসতেই হয়। বাজারে এলে শরীরে আগুন ধরে যায়। এত দামে কিভাবে চলবে মানুষের জীবন সেই চিন্তায়।’

বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘চাইলেই আমরা যেখানে-সেখানে অভিযান করতে পারি না। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে থেকে বাজারে অভিযানের জন্য চিঠি দিতে হয়। এরকম অনুমতি ছাড়া কোনো অভিযান হয় না।’

ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। নির্দেশনা পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’

একই কথা বললেন ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের উপ পরিচালক মঞ্জুর শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘যেখানে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি সেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু ঢালাওভাবে বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে না।’

সারাবাংলা/ইউজে/এমও

অস্থির বাজার দ্বিগুণ বাজার দর সাধারণ মানুষ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর