Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ মাসে পানিতে ডুবে ৫০৯ শিশুর মৃত্যু, দ্রুত নীতিমালার দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ অক্টোবর ২০২১ ০৯:৫৩

প্রতীকী ছবি

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমিত হয়ে বিগত ১৬ মাসে মারা গেছে ৭৬ জন শিশু। ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সাত মাস সময়ে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে ৩৮ জন যাদের বয়স ১০ বছরের কম। কিন্তু গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাত্র তিন মাসে দেশে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫০৯ জন শিশু। দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন শিশু ও বছরের গড়ে ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে বিভিন্ন গবেষণায়। এমন অবস্থায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য দেশে জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর শিশু একাডেমির সভাকক্ষে গতকাল শনিবার (১০ অক্টোবর) আয়োজিত এক আলোচনায় এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিআইপিআরবি) আয়োজিত এই সভার সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়। শিশু একাডেমি, শিশুদের জন্য কাজ করে এমন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা এই আলোচনা সভায় অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

সিআইপিআরবির পরিচালিত গবেষণার তথ্য জানিয়ে আলোচনা সভায় জানানো হয়,দেশে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুমৃত্যুর অন্যতম মূল কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু। ২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার খুব সামান্য হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এজন্যই বিশ্বজুড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে ‘নীরব মহামারি’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণা ফলাফল জানিয়ে আরও বলা হয়, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এক থেকে দশ বছরের ৩৮ জন শিশু করোনা মহামারিতে মারা গেছে। অথচ কেবল জুন-জুলাই-আগস্ট এই তিন মাসে ৫০৯ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা কত ভয়াবহ এবং উদ্বেগজনক।

শিশু একাডেমির সভাকক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা

শিশু একাডেমির সভাকক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা, ছবি: সারাবাংলা

সভায় মূল আলোচক হিসেবে মো. সাফকাত হোসেন (ইন্টারভেনশন ম্যানেজার, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ) বলেন, কী ব্যবস্থা নিলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ করা যায়, সেটা গবেষণা করে বের করেছে সিআইপিআরবির গবেষকরা। এই পদ্ধতিগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ও স্বীকৃতি পেয়েছে।

তিনি বলেন, সিআইপিআরবির গবেষকদের প্রস্তাবনার আলোকে এরই মধ্যে একটি জাতীয় নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। দেশজুড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর যে নীরব মহামারি চলছে— এই নীতিমালা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হলে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।

আলোচনা সভায় বক্তারা জানান, পানিতে ডুবে মৃত্যুর হিসেবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বরিশাল জেলা। এই বরিশালেরই দুই জেলা পটুয়াখালী ও বরগুনার তিন উপজেলায় ২০১৬ সাল থেকে ‘ভাসা’ নামের একটি প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে সিআইপিআরবি। যার মাধ্যমে ১-৫ বছর বয়সী শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশের জন্য ‘আঁচল’ (১-৫ বছর বয়সী শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র) এবং ৬-১০ বছর বয়সের শিশুদের সাঁতার শেখানোর কার্যক্রম ‘ভাসা’ পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু করোনার কারণে গত দেড় বছর ধরে এ কার্যক্রম বন্ধ আছে। ‘ভাসা’ প্রকল্পে সিআইপিআরবির সহযোগী হিসেবে রয়েছে রয়েল ইন্টারন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন এবং দ্য জর্জ ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ।

অনুষ্ঠানে সিআইপিআরবি’র প্রতিনিধিরা জানান, ‘ভাসা-১ প্রকল্প’ শেষের পর দেখা গেছে, এই উদ্যোগের ফলে প্রকল্প এলাকায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার প্রায় ৫৩ শতাংশ কমেছে। যদি বরিশাল অঞ্চলে ভাসা পরিচালিত প্রায় তিন হাজার আঁচল (১-৫ বছর বয়সী শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র) ও সাঁতার শেখার কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়, তাহলে এই এলাকায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পাবে।

তারা আরও জানান, এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুমৃত্যুর অন্যতম মূল কারণ এই পানিতে ডুবে মৃত্যু। যেহেতু এটি প্রতিরোধে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে, তা বাস্তবায়নে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।

পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন আলোচকরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর পানিতে ডুবে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ মারা যায়। এর বেশির ভাগই ঘটে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। বিশ্বজুড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে নীরব মহামারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই বাস্তবতায় চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘের ৭৫ তম সাধারণ সভায় বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের যৌথ প্রস্তাবনায় ২৫ জুলাইকে আন্তর্জাতিক পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

পানিতে ডুবে মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর