লক্ষ্য একটাই— জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া
১০ অক্টোবর ২০২১ ২২:৫১
মুজিবুল হক চুন্নু। জিয়াউদ্দিন বাবলুর মৃত্যুর পর সদ্যই নিয়োগ পেয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে। আগে থেকেই তিনি সংসদের প্রধান বিরোধী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য। প্রথমবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। পরে ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয় পান। দুই বারই কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। পরে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে। এর মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে প্রথমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গত ২ অক্টোবর জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মারা গেলে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। দলের সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ বেশ কয়েকজন পার্টির নতুন মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় ছিলেন। এর মধ্যে গতকাল শনিবার (৯ অক্টোবর) জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক সাংগঠনিক আদেশে মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। পরদিন আজ রোববার (১০ অক্টোবর) সারাবাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে চুন্নু বলছেন, পার্টিকে শক্তিশালী করতে সারাদেশ সফর করবেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের অংশীদারের বদলে একক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্যও দলকে প্রস্তুত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আজমল হক হেলাল
সারাবাংলা: বিরোধী দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ায় আপনাকে সারাবাংলার পক্ষ থেকে অভিনন্দন। মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়ে কেমন লাগছে?
মুজিবুল হক চুন্নু: ধন্যবাদ। আসলে আমার স্বপ্নের সবকিছু রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই। জাতীয় পার্টির একজন কর্মী হিসেবেই সবসময় মনে করি। সেখান থেকে পার্টির মহাসচিব পদে নিয়োগ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তাই আমার স্বপ্ন— এই দায়িত্বকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করব। জেলা-উপজলা ও গ্রামগঞ্জে সাফর করে জনগণের সামনে জাতীয় পার্টির ৯ বছরের শাসনব্যবস্থা ও উন্নয়নের কথা তুলে ধরব। জনগণকে জাতীয় পার্টির পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করব।
সারাবাংলা: মহাসচিব হিসেবে দলের জন্য প্রথমে কী কাজ করবেন?
মুজিবুল হক চুন্নু: মহাসচিবের পদে নিয়োগ পেয়েছি। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। হয়তো আজ (রোববার) অথবা আগামীকাল (সোমবার) আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেব। এরপর আমি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগরের দুই কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দলের শক্তিমত্তা বাড়াতে পরিকল্পনা ঠিক করব। সেই অনুযায়ী কর্মসূচি ঘোষণা করব। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রতিটি জেলা-উপজেলা গ্রামগঞ্জে আমি সফরে যাব। গতানুগতিক সাংগঠনিক কার্যক্রম আমি করব না। ভিন্নভাবে চিন্তা-ভাবনা সাজিয়ে ব্যতিক্রম সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচির কথা দেশবাসীকে জানানো হবে।
সারাবাংলা: জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
মুজিবুল হক চুন্নু: লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একটাই— জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যেই কাজ করব। জনগণ এখন নতুন কথা শুনতে চায়। উন্নতির কথা, ব্রিজের কথা, রাস্তার কথা, মেগা প্রকল্পের কথা জনগণ এখন আর শুনতে চায় না। জনগণ এখন তাদের অধিকার নিয়ে জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে বাঁচতে চায়। মানুষ শুনতে চায় কর্মসংস্থানের কথা। কারণ দেশে এখন কোটি মানুষ বেকার। আওয়ামী লীগ সরকার কিংবা অতীতের চার দলীয় জোট সরকার— কেউই বেকার সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। অথচ এরশাদের শাসনামলে দেশে বেকারত্বের হার এত বেশি ছিল না। জাতীয় পার্টি ফের ক্ষমতায় গেলে এই বেকারত্বও থাকবে না। বেকারত্ব দূর করার জন্য জাতীয় পার্টি পরিকল্পনা নেবে। ওই পরিকল্পনা নিয়ে জনগণের মাঝে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। আমরা আশাবাদী, জনগণের কাছে আমাদের কর্মসূচি তুলে ধরতে পারলে জনগণই আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ করে দেবে। আর আমরা ক্ষমতায় গেলে দেশের শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ হবে। প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা চালু করা হবে। এজন্য আমরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামব।
সারাবাংলা: সংসদে আপনি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে আইন প্রণয়ন করতে প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু গুঞ্জন আছে, রাষ্ট্রপতির গঠন করা সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। আপনারা কি তা মেনে নেবেন?
মুজিবুল হক চুন্নু: নির্বাচন কমিশন গঠন করার বিষয়ে সংবিধানে একটি নির্দেশনা রয়েছে— আইন করার কথা বলা হয়েছে। তবে স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই এই আইন প্রণয়ন করেনি। আমি সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমি বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন করতে একটি আইন প্রণয়ন করতে বিল আনুন। যদি আপনারা না পারেন, আমাকে বলুন এবং আশ্বাস দিন বিলটি পাস করবেন। তাহলে আমি বেসরকারি একটি বিল আনতে পারি। আমি মনে করি, নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন প্রণয়ন করা উচিত। সার্চ কমিটি দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে তা মেনে নেব কি না, সে বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভাসহ অন্যান্য নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য আইন করার পক্ষে শক্ত অবস্থানে আছি।
সারাবাংলা: নির্বাচন কমিশন গঠন করার ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করতে রাষ্ট্রপতি শরণাপন্ন হবেন কি?
মুজিবুল হক চুন্নু: রাষ্ট্রপতির নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা তার নেই। আইন প্রণয়ন করার বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের। আমরা নির্বাহী বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তারপরও মহামান্য রাষ্ট্রপতি কাছে যাব কি না, সেটি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সারাবাংলা: আগামী নির্বাচনে কি আপনারা মহাজোটের একটি দল হিসেবে অংশ নেবেন?
মুজিবুল হক চুন্নু: আগামী নির্বাচন আমরা এককভাবে অংশ নেব। জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এরই মধ্যে আমরা সে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
সারাবাংলা: অনেকেই বলে থাকেন, জাতীয় পার্টির হাত-পা বাঁধা। এককভাবে নির্বাচন করার ক্ষমতা জাতীয় পার্টির নেই। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মুজিবুল হক চুন্নু: আমাদের হাত-পা বাঁধা নেই। সংসদে আমরা সরকারকে ছাড় দেই না। জাতীয় পার্টি দীর্ঘ ৯ বছর শাসন করেছে। জনগণের জন্য কাজ করেছে জাতীয় পার্টি। তাই আমরা কারও কাছে দায়বদ্ধ নই। বরং অন্যরা আমাদের কাছে সাহায্য চায়।
সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মুজিবুল হক চুন্নু: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর