Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নির্বাচন জটিল অসুখে আক্রান্ত, গণতন্ত্র সংকটাপন্ন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ অক্টোবর ২০২১ ১৯:২২

নির্বাচন কমিশনে নিজ কার্যালয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন মাহবুব তালুকদার

ঢাকা: বর্তমানে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা বেশকিছু জটিল অসুখে আক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছেন আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আর ‘অসুস্থ’ এই নির্বাচনব্যবস্থার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গণতন্ত্রও সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য তার।

মাহবুব তালুকদার বলেন, মৃত্যুপথযাত্রী গণতন্ত্রকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো একান্ত অপরিহার্য। একক ডাক্তারের পক্ষে এখন আর একে (গণতন্ত্র) বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ড গঠনের কোনো বিকল্প নেই।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১০ সেপ্টম্বর) নির্বাচন কমিশনের নিজ কার্যালয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। লিখিত বক্তব্যে চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন তিনি।

মাহবুব তালুকদার বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা গণতন্ত্রহীন নির্বাচন চাই কি না! গত ৭ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচন আমি নিজে পরিদর্শন করি। ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়। ভোট পড়ে ২০ শতাংশ। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ভোটের টার্নআউট এত কম হওয়ায় জনগণের নির্বাচনবিমুখতা আমাকে হতাশ করেছে। অন্যদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচনে কিন্তু ইভিএমেই ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের হারের এই বৈষম্য কেন, তার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন।

মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ভোটার সংখ্যা বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবে প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না। ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম নগরের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে জামানত হারিয়েও একজন প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই ওই নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থীর সবাই জামানত হারিয়েছেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যা বিশ্বে নজিরবিহীন।

বিজ্ঞাপন

‘আমার মতে এতে নির্বাচনে একটি নতুন ধারা সূচিত হলো। নবনির্বাচিত কাউন্সিলর অবশ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিক মামলায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন। এই উপনির্বাচনের ফল নির্বাচনের প্রতি জনগণের অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ বলা হলেও ইতিবাচকভাবে বলা যায়— সমাজের সব শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা এখন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এবং জনসমর্থন না থাকলেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন,‘— বলেন মাহবুব তালুকদার।

নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে দেশজুড়ে চলমান আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিভিন্নজনের তর্ক-বিতর্ক এখন তুঙ্গে। গত ৫০ বছরে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন প্রণয়ন করা হয়নি। এটি বাধ্যতামূলক হলেও সব ক্ষমতাসীন সরকারই এই বিধান লঙ্ঘন করেছে। সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা থাকলে এই আইন অনস্বীকার্য। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সব দলের সমঝোতা ছাড়া এরকম আইন করা অসম্ভব।

নির্বাচন কমিশন আইন হলেও সেটিও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে বলে মনে করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়। আইন প্রণয়ন নির্বাচনের অন্যতম বা প্রধান সোপান হলেও অবশ্যই তা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সমঝোতা না হলে দেশব্যাপী অরাজকতা ও প্রাণহানির আশঙ্কা করি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতার পূর্বশর্ত ছিল গণতন্ত্র। সংবিধানের চারটি মূলনীতিতে গণতন্ত্র সন্নিবেশিত হয়েছে। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও আমরা যদি অন্ধকার ঘরে একটি কালো বিড়ালের মতো গণতন্ত্রকে খুঁজে ফিরি, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? একজন ভোটার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছামতো ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসবেন— বাংলাদেশ রাষ্ট্র কি এই আকাঙ্ক্ষাটুকু পূরণ করতে পারবে না?— প্রশ্ন রাখেন মাহবুব তালুকদার।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

গণতন্ত্র নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনব্যবস্থা মাহবুব তালুকদার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর