ডুবছে ফেসবুক, নতুন চমকই ভরসা
৫ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:৫৬
বেশ খারাপ সময়ই পার করছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ১৪ বছর আগে যাত্রা শুরুর পর খ্যাতনামা ইনকরপোরেটেড প্রতিষ্ঠানটির এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর এ ধাক্কা এতটাই জোরালো যে, এক সপ্তাহেই প্রায় আট লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকা (১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি) হারিয়েছে ফেসবুক।
যে অভিযোগের প্রমাণে ফেসবুকের এই পতন সেটি অবশ্য বেশ পুরনো। ২০১৬ সালের শেষ থেকেই ভুয়া খবর, নির্বাচনী হস্তক্ষেপ, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং স্মার্টফোনে আসক্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখাসহ নানা কারণে ফেসবুক সমালোচিত হচ্ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু কোনোটিই তেমনভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। আর এর বড় প্রমাণ সাম্প্রতিক সময়ে পাঁচ কোটির বেশি গ্রাহকের তথ্য বেহাত হওয়া।
এই তথ্য ফাঁসের খবরের পর সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এরই মধ্যে ব্যবহারকারী এমনকি বিনিয়োগকারীরাও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ফেসবুকের বিনিয়োগকারীদের কয়েকজন প্রশ্ন তুলেছেন, তবে কি সময় এসেছে ফেসবুকের বিকল্প কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথা ভাবার? অথবা কতদিন টিকবে হালের জনপ্রিয়তম এই মাধ্যমটি?
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এই কঠিন বছরে এসে প্রতিষ্ঠানটির মান, লক্ষ্য, ব্যবসায়িক মডেলও সমালোচনার মুখে। প্রশ্ন উঠেছে, মার্ক জাকারবার্গ কতদিন ‘বিশ্বকে আরো মুক্ত ও সংযুক্ত করায়’ প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্যকে ধারণ করতে পারবেন। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা বিভিন্ন সময়ে বলেছিলেন, একটি মুক্ত বিশ্বই কেবল পারে সত্যিকারের জনবান্ধব সরকার গড়ে তুলতে। নির্বাচনী সহিংসতাময় বিশ্বে তথ্যের সহজলভ্যতা ঘৃণা ছড়িয়ে হিংসার বিস্তারে বাধা দেয় বলেও মত প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনেই ফেসবুক ব্যবহার করে কেমব্রিজ এনালিটিকা সুকৌশলে ভোটারদের মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে বলে প্রমাণিত। এটি ফেসবুকের বিরুদ্ধে নির্বাচনী হস্তক্ষেপের অভিযোগের প্রমাণ বলে সাব্যস্ত হয়েছে।
২০১৭ সালের শেষে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২ দশমিক ৩ বিলিয়নের বেশি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ মিলিয়ে এই ব্যবহারকারীর সংখ্যাটি প্রায় তিন বিলিয়ন- যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। মনোবিদদের মতে এ বিপুল ব্যবহারকারী নিত্যকার জীবনের অনেকখানিই নিয়ন্ত্রণ করে এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি। আর এ নিয়ন্ত্রণক্ষমতাটি ব্যবহার করেই কেমব্রিজ এনালিটিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল ভোটারের মত নিয়ন্ত্রণের কাজটি করেছে বলে অভিযোগ।
কেমব্রিজ এনালিটিকার মাধ্যমে ৫ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাতের অভিযোগে ফেসবুক এখন চাপের মুখে। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার অ্যাকাউন্ট ‘ডিঅ্যাকটিভ’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো। অনেক বিখ্যাত ফেসবুক পেজে প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। এমনকি ফেসবুকেই খোলা হয়েছে অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেটের পেজ। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ডিলিট করা অ্যাকাউন্টের তথ্য না দিলেও জানিয়েছে, খুব কম সংখ্যক ব্যবহারকারী অ্যাকাউন্ট ডিলিট করেছেন।
এছাড়া বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহারের কথা ফাঁস হওয়ার পর জাকারবার্গ স্বীকার করেছেন তারা `ভুল করেছেন`। ব্যবহারকারীর তথ্য তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে যাওয়াকে ‘বিশ্বাসভঙ্গের শামিল’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ফেসবুকে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি তার।
তবে জাকারবার্গের এসব বুলিতে চাপ কমেনি বিন্দুমাত্র। তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে শুনানির জন্য ডেকেছে জাকারবার্গকে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহারকারীদের তথ্যের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসূত্রের বিষয়টিতে তিনি একমত নন। তবে এ বিষয়ে সরকার তদন্ত করতেই পারে। আর এ ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতা করবেন তিনি।
এদিকে ব্যবহারকারীর অজান্তে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তথ্য দেওয়ার দায়ে জাকারবার্গকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও তলব করা হয়েছে। এই অবস্থায় ফেসবুকের ভবিষ্যত কী তা নিয়ে আলোচনায় মুখর বিশ্লেষকরা। প্রতিবাদ এসেছে ইউরোপের দেশগুলোসহ বিশ্বের অনেক দেশের রাজনীতিবিদদের কাছ থেকেও। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভোটের সময় ফেসবুকের প্রভাব খাটানোর বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিবিদেরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এমনকি ফেসবুকের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটির বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ চান তারা।
জাকারবার্গের দাবি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ঘটনায় যে অ্যাপগুলো ফেসবুক থেকে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করেছে তা এরইমধ্যে স্থগিত করেছে ফেসবুক। এছাড়া তথ্য সংগ্রহ নিয়ে নীতিতে পরিবর্তন আসার আগে যেসব অ্যাপ তথ্য সংগ্রহ করেছিল তাদের বিষয়েও তদন্ত করছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে জাকারবার্গ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এতকিছুর পরও ফেসবুকের ব্যবসার নীতি ও পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। কারণ বিনামূল্যে বা সাশ্রয়ী খরচে ফেসবুক ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে এ ব্যবসার মডেলই উপযুক্ত বলে মনে করেন তিনি।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির নিম্যান ল্যাবের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল প্রতিষ্ঠান ফেসবুক। শুরুর ১৪ বছরের মধ্যে ক্যাথলিক চার্চের বেশি ব্যবহারকারী (প্রায় ২৩০ কোটি) রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এই অল্পসময়ের মধ্যে ৪৪২ বিলিয়ন ডলারের বাজার মুলধন নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঁচ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একটি এটি।
এমনকি ব্যবহারকারীর তথ্যের ফাঁসের মতো সুস্পষ্ট ত্রুটি থাকার পরও মানুষ এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি ব্যবহার করছে। আর বিশ্বে এই প্রবণতা বাড়ছে প্রতিনিয়তই।
সম্প্রতি এক গবেষণা দেখিয়েছে, বিশ্বের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এতে আসক্ত। এমনকি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের চেয়ে এই যোগাযোগ মাধ্যমটিতে থাকতে বেশি পছন্দ করছেন তারা।
ফোর্বস ম্যাগাজিনও সম্প্রতি একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল ‘ফেসবুকের কুয়াশাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে। বিখ্যাত প্রযুক্তিবিষয়ক ব্লগার স্টিভ ড্যানিং ছিলেন এর লেখক। ড্যানিং লেখাটির শুরুতেই নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক স্কট গ্যালাওয়ের বিখ্যাত বই ‘চার: অ্যামাজন, অ্যাপল, ফেসবুক ও গুগলের লুকানো ডিএনএ’ –এর উদাহরণ টেনেছেন।
বইয়ে গ্যালাওয়ে ফেসবুক সম্পর্কে বলেছেন, নিয়মিত উদ্ভাবন আর বাজার নিয়ন্ত্রণের সীমাহীন তৎপরতাই ফেসবুককে সাফল্যের চূড়ায় তুলেছে। নিত্যনতুন আবিষ্কার আর ‘ফিচার’ উদ্ভাবন ও ব্যবহারকারীর মন বুঝে চলতে ফেসবুক তুলনাহীন।
ফেসবুকের ব্যবসায়িক ডিএনএ সম্পর্কে গ্যালাওয়ে বলেছেন, ‘বিনামূল্যে ফেসবুক’ যে আসলে বিনামূল্যের নয়, এটা বুঝতে মানুষের সময় লেগেছে—লাগবে এটাই স্বাভাবিক। প্রতিষ্ঠানটি মহাকাশে নিজের স্যাটেলাইট পাঠিয়ে, মাটির তলায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ ডাটা সেন্টার গড়ে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী ৫০ লাখের বেশি বিজ্ঞাপনদাতার কাছ থেকে অর্থসংগ্রহ করছে।’
কেন ফেসবুককে অর্থ দিচ্ছেন বিজ্ঞাপনদাতারা? এ বিষয়টি বুঝতে হলে ফেসবুক ব্যবহার ও বিজ্ঞাপনের নীতি সম্পর্কে জানতে হবে বলে মত গ্যালাওয়ের। ফেসবুকে কেউ নতুন একটি অ্যাকাউন্ট খুললেই তাকে সাধারণ কিছু তথ্য সরবরাহ করতে হয়। এই তথ্যগুলো ফেসবুক ভবিষ্যৎ ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করবে- এই শর্ত মেনেই একজন ব্যবহারকারী মাধ্যমটিতে ঢোকেন। এরপর ফেসবুক পর্যায়ক্রমে ব্যবহারকারীর ‘ফেসবুক ব্যবহারের স্বচ্ছন্দতা বাড়াতে’ তথ্য সংগ্রহ করে। ব্যবহারকারীর পোস্ট ক্লিক, পেইজে বিচরণ, শব্দচয়ন, অবস্থান এবং বন্ধুতালিকা থেকে এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়।
এরপর এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপনদাতাদের তাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে ফেসবুক। গুগলের সঙ্গে ফেসবুকের বিজ্ঞাপনের একটি বড় পার্থক্য হল, ফেসবুকে নির্দিষ্ট বয়স, মতামতের মানুষ বা গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়- যা অন্যান্য বিজ্ঞাপন প্লাটফর্মে দেওয়ার সুযোগ নেই। এই কারণেই অনেক পরে বিজ্ঞাপনের বাজারে এসেও ডিজিটাল মিডিয়ার বড় একটি অংশই দখল করে রেখেছে ফেসবুক। এছাড়া ফেসবুকের একটি বড় অংশ হল এর মোবাইল ব্যবহারকারীরা। নতুন এই বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রটিতে ‘ডিসপ্লে অ্যাড’ ও ‘ইনস্ট্যান্ট আর্টিক্যালের’ মতো বিজ্ঞাপনের নতুন ক্ষেত্র নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারীর এই বাজারটিও ফেসবুকের একচ্ছত্র দখলে। যেখানে গুগল কয়েকবছর আগের পদ্ধতি দিয়ে মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপনের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
গ্যালাওয়ে তার বিখ্যাত বইটিতে আরো লিখেছেন, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাসী যে কারো জন্যই ফেসবুকের শর্তগুলো রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। কিন্তু ফেসবুকের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বিষয়গুলো এতটাই মানানসই এভাবেই তথ্য ও এর বিনিময়ে সেবা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ব্যবহারকারীরা। এক কথায় ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি ছড়িয়ে দেওয়াকেই প্রচলিত ‘ট্রেন্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে ফেসবুক। এবং এই ‘শেয়ার’ এর ধারণাটিকে জনপ্রিয় করার প্রথাটিও বিশ্বের জন্য নতুন।
আর এই ‘শেয়ারিং’ জনপ্রিয় করার ধারণাটিই ফেসবুকের মূল ব্যবসায়িক সাফল্য হিসেবে দেখিয়েছেন গ্যালাওয়ে। বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন, এই ‘মুক্তবিশ্ব’ ও ‘শেয়ারিং’ এর ধারণা জনপ্রিয় করা ও একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জাকারবার্গের ক্ষুরধার বুদ্ধির ফসল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গ্যালাওয়ে দেখিয়েছেন, পরবর্তীতে এই তথ্যগুলোকে কাজে লাগানোর জন্যই ফেসবুকের পথপরিকল্পনার অংশে যুক্ত হন মনোবিদরা। তাদের মতামত নিয়েই ফেসবুকে যুক্ত হয়েছে পেজ, গ্রুপ ও অ্যাপলিকেশনের মতো নানা সেবা। এই সেবাগুলোর একটি বড় উদ্দেশ্য ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ।
স্পেনের চার্লস থ্রি ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি ফেসবুকের বিজ্ঞাপনী ড্যাশবোর্ডের ওপর এক সমীক্ষা চালায়। যাতে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারীই মাধ্যমটি ব্যবহারের সময় ‘টার্গেট মার্কেটিং’ এর শিকার হয়।
গ্যালাওয়ে তার বইয়ে লিখেছেন, হাস্যকর হলেও সত্য যে ফেসবুক এবং এর বিজ্ঞাপনদাতারা আমাদের নিজেদের চেয়েও আমাদের সম্পর্কে বেশি জানেন। তারা আমাদেরকে দেখেন মনোবিদের দৃষ্টিতে। জানেন, আমরা কী পছন্দ করি- কী করি না। আমাদের চলচ্চিত্র পছন্দ, পোশাক, রঙ, ধারণা থেকে শুরু করে যৌনাভ্যাস সবকিছুরই ধারণা আছে ফেসবুকের কাছে। এবং এটাই ফেসবুকের সবচেয়ে বড় শক্তি মনে করে এসেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ গেরি ভেইনারচুক জানিয়েছেন, এই ‘শক্তি’ আবার সম্ভাব্য বিপজ্জনকও। ব্যবহারকারীদের চোখে ফেসবুক যে ‘চশমা’ পরিয়ে তার আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধি করছিল তা এখন স্পষ্ট। আর এটা বিশ্বের অধিকাংশ দেশেরই প্রচলিত গোপনীয়তার আইনবিরুদ্ধ। আর এর বিরুদ্ধে এরইমধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠেছে। ফেসবুকের এই নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘সাধারণ তথ্য সুরক্ষা প্রবিধান (জিপিডিআর)’ কমিটি। আন্তর্জাতিক আদালতে এর ফয়সালা হবে চলতি বছরের মে মাসে। ফলাফল যাই হোক না কেন, ফেসবুক যে আর ব্যবহারকারীর তথ্য আগের মতো বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে না এটা স্পষ্ট। আর এটিই ফেসবুকের মূল ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক ও নিম্যান ল্যাবের গবেষকরা জানান, এটা সত্যি যে ফেসবুকের তথ্যসংগ্রহ নীতি আর বেশিদিন চলবে না। কারণ এই নীতির বিরুদ্ধে এরইমধ্যেই জনমত তৈরি হয়ে গেছে। গেরি ভেইনারচুক বলেছেন, এখন দেখার বিষয় দুটোই। নতুন কি পদ্ধতি নিয়ে আসে ফেসবুক, আর ওই পদ্ধতি আগের মতো কাজ করবে কি না। আর এর ওপরই নির্ভর করছে ফেসবুকের ভবিষ্যত।
লেখক: সন্দীপন বসু, সাংবাদিক
ছবি : নিউইয়র্ক টাইমস ও এএফপি
সারাবাংলা/ এসবি