Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইনি ভিত্তি পাচ্ছে বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতার পদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ অক্টোবর ২০২১ ২২:৪৭

জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষ [ফাইল ছবি]

ঢাকা: সামরিক আমলের বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতার পারিতোষিক ও বিশেষ অধিকার নিশ্চিত হয়ে আসছিল। সেই অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সংসদে উত্থাপিত এ সংক্রান্ত বিলের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদের আগামী অধিবেশনে বিলটি পাসের সুপারিশ করা হয়েছে। বিলটি পাস হয়ে আইনে পরিণত হলে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতার পদ দুইটি আইনি ভিত্তি পাবে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই বিলটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার।

বৈঠকে কমিটির সদস্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক, মো. শামসুল হক টুকু, শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার অংশ নেন। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব, মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

দেশের সংবিধানে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বা উপনেতার বিষয়ে কিছু বলা নেই। এ সংক্রান্ত কোনো আইনও প্রণয়ন করা হয়নি। পরে ১৯৭৯ সালে ‘বিরোধী দলীয় নেতা বা উপনেতার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশ’ জারি করে তাদের পারিতোষিক ও মর্যাদা দেওয়া হয়। অধ্যাদেশ অনুযায়ী  বিরোধী দলীয় নেতা মন্ত্রী ও উপনেতা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে থাকেন। বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতার স্বীকৃতি দেওয়ার একক ক্ষমতা সংসদের স্পিকারের।

বিরোধী দলীয় নেতা মনোনয়নের বিষয়ে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২(১)(ট) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনা অনুযায়ী সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে যে দল গঠিত, তার নেতা। তবে সংসদে কার্যপ্রণালী বিধিতে বিরোধী দলীয় উপনেতার বিষয়ে কিছু বলা নেই।

প্রচলিত নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন শেষে সংসদ গঠনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া রাজনৈতিক দল সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। দলটির সংসদীয় কমিটি বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা মনোনীত করে থাকে। সেটি সংশ্লিষ্ট দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সংসদের স্পিকারকে জানাতে হয়। পরবর্তী সময়ে স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

তবে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা মনোনয়নে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দেয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দলের পার্লামেন্টারি পার্টির কোনো বৈঠক ছাড়াই ২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারি গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে ঘোষণা দেন, দলে পদাধিকার বলে তিনিই হবেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। ওই সময় তিনি তার ভাই জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে মনোনীত করেন। পরদিন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছিলেন এরশাদ।

এরপর ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা ও জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন স্পিকার। একই বছরের ২২ মার্চ স্পিকারকে দেওয়া চিঠিতে জি এম কাদেরের পরিবর্তে রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় উপনেতা করার অনুরোধ জানান এরশাদ। পরদিন ২৩ মার্চ রওশনকে বিরোধী দলীয় উপনেতার স্বীকৃতি দেন স্পিকার।

এ সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতেই জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতার পারিতোষিক ও বিশেষ অধিকার সংক্রান্ত সামরিক আমলের সেই অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন আইন করতে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছিল। সেই বিলের প্রতিবেদন এতদিনে চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি পাসের সুপারিশ করা হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বলছেন, বিল পাসের পর আইনে পরিণত করার মাধ্যমে মূলত বিরোধী দলীয় নেতা উপনেতার পদ দুইটিকে আইনি ভিত্তি দেওয়া হচ্ছে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বিরোধী দলীয় উপনেতা বিরোধী দলীয় নেতা বিলের প্রতিবেদন চূড়ান্ত সংসদীয় কমিটি সংসদে বিল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর