‘জ্ঞানের বিষয়ে নিজেদের গবেষকদের আমরা দাম দিই না’
১৩ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৩২
আমরা জ্ঞানের ব্যাপারে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করি এবং নিজেদের গবেষকদের দাম দিই না বলে মন্তব্য করেছেন জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ। এই বিদেশমুখী প্রবণতা পরিবর্তন করতে ফাউন্ডেশন কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের অপ্রকাশিত পিএইচডি অভিসন্দর্ভ অষ্টম পর্বের বক্তৃতা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ পর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মানস চৌধুরী বক্তৃতা করেন।
স্বাগত বক্তৃতায় ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ বলেন, আমরা জ্ঞানের ব্যাপারে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করি এবং নিজেদের সমর্পণ করি। নিজেদের গবেষকদের আমরা প্রমোট করি না বা দাম দিই না। এই বিদেশমুখী প্রবণতা ও নির্ভরতা পরিবর্তন করা অপরিহার্য। সেটাই আমরা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করতে চাই।
স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এলে ফাউন্ডেশন আগের মতো শ্রোতাদের শারীরিক উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান আয়োজন করবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্যও গ্রন্থাগারটি শিগগিরই উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানান ড. আহরার।
অপ্রকাশিত পিএইচডি অভিসন্দর্ভ অষ্টম পর্বের বক্তৃতায় ড. মানস চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে জনপ্রিয় বানানোর একটা কারিগরি মডেল বিকশিত হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রের সনাতনি প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মিডিয়া ও রাষ্ট্রোর্ধ্ব প্রতিষ্ঠান, যেমন— স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা, বিশেষত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইত্যাদি। রাষ্ট্র এখানে মিডিয়েটর বা দালাল। বৃহৎ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে ‘জনগণে’র দোস্তির দালাল।
ড. মানস বলেন, রাষ্ট্রের এ ধরনের সম্পর্কে সামরিক বাহিনীর কথা আমি সঙ্গত কারণেই এড়িয়ে গেছি। বড় এজেন্সির মধ্যে করপোরেশন ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোই কেবল নয়, বড় বড় গণমাধ্যম ও সামরিক বাহিনীও রয়েছে। বাংলাদেশের কয়েকটি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক এলাকা চিহ্নিত করে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বলে উল্লেখ করেন বক্তৃতায়।
মানস চৌধুরী বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সারফেসে এমন সব ‘ডিকোটমি’ বজায় রাখা যেগুলোর মৌল গুরুত্ব নাই। ধরা যাক, আপনি যখন পাকিস্তানপন্থি-মুক্তিযুদ্ধ চেতনার তর্কে লিপ্ত, তখন বাস্তবে লাগাতার নয়া নয়া করপোরেশনের বন্দি হওয়া কিংবা নতুন ফাইন্যান্স টাইকুনের অভ্যুদয় হওয়া কিংবা মিলিটারির ব্যবসায়ী হয়ে সর্বস্ব দখল করার মতো বিষয়গুলো আড়ালে থাকছে।
সভাপতির বক্তব্যে লেখক ও গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, যেকোনো ঘটনার পেছনে যে কারিগরিটা থাকে, সেটি জনপ্রিয়তা হোক কিংবা জনপ্রিয়তা হরণ করা হোক, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বুঝা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ? বাংলাদেশে বিদ্যাচর্চাকে ‘পবিত্র বিদ্যা’ ও ‘অপবিত্র বিদ্যা’— এভাবে দেখা হয়। এর ফলে বিদ্যাচর্চায় আমরা হয় ডিফেন্ড করি বা আক্রমণ করি । আমরা বিদ্যাচর্চাকে প্রক্রিয়াগতভাবে দেখি না। আমরা যেকোনো পরিস্থিতির মধ্যে যে মধ্যবর্তী জায়গাগুলো আছে, সেগুলো আছে কি না, থাকলে কীভাবে আছে— সেদিকে তাকাই না।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফাউন্ডেশনের গবেষণা ও প্রশাসন বিভাগের নির্বাহী ইফতেখারুল ইসলাম।
সারাবাংলা/টিআর
অপ্রকাশিত পিএইচডি অভিসন্দর্ভ জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন ড. আহরার আহমদ ড. মানস চৌধুরী