চট্টগ্রামে প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধের নির্দেশ, শনিবার হরতাল
১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৮:১০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কুমিল্লায় কোরআন শরিফ অবমাননার খবরের জের ধরে চট্টগ্রামেও দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলা হয়েছে। জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই হামলার চেষ্টা চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে পুলিশকে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে, মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদ। হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার (১৬ অক্টোবর) আধাবেলা হরতালের ঘোষণা দিয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) জুমার নামাজ শেষে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের সামনে একদল মুসল্লি কুমিল্লার কোরআন শরিফ অবমাননার খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশ থেকেই শুরু হয় মিছিল। সেখান থেকে ৪০/৫০ জনের একটি দল এক-দেড়শ গজ দূরের বিপ্লবী যাত্রামোহন সেন হলের (জেএম সেন হল) পূজা মণ্ডপে হামলা চালায়। মণ্ডপে ঢিল ছোঁড়ার পাশাপাশি ব্যানার-পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ সময় পূজা মণ্ডপে উপস্থিত ব্যক্তিরা হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। তারা হামলাকারী দু’জনকে আটকও করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ শুরু করে। ওই দু’জনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় পুলিশ, কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে। এসময় মুসল্লিরা চেরাগি পাহাড়ের দিকে চলে যায়।
সবশেষ পরিস্থিতি বলছে, মুসল্লিদের একাংশ পুলিশের ধাওয়া গেছে চেরাগি পাহাড়ের দিকে অবস্থান নিয়েছেন। বাকিরা অবস্থান নিয়েছেন আন্দরকিল্লাহ শাহী মসজিদ এলাকায়। অন্যদিকে, আন্দরকিল্লা ও জেএম হলের মাঝামাঝি রহমতগঞ্জের প্রবেশমুখে অবস্থান করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ স্থানীয়রা। এলাকায় পুলিশও জলকামান নিয়ে অবস্থান করছে। মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ সদস্য।
এদিকে, এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। পরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্তও সেখানে উপস্থিত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতি ও হামলার প্রতিবাদে প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন রানা দাশ গুপ্ত। শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতালের ঘোষণা দেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকেও প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রতিমা নিরঞ্জনের কোনো পরিবেশ এখন নেই। তাই প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সবাইকে।’ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অঘোষিতভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাস্থল থেকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় কুমার বসাক সারাবাংলাকে বলেন, জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লায় একটি সমাবেশ হচ্ছিল। পুলিশ সেখানে সতর্ক অবস্থানে ছিল, যেন ব্যারিকেড ভেঙে কেউ বের না হতে পারে। পরে সমাবেশ থেকে ব্যারিকেড ভেঙে মণ্ডপে হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, কুমিল্লায় কোরআন শরিফ অবমাননার প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়েছে। এ নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছিল নগরীতে। আন্দরকিল্লা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গোটা চট্টগ্রামেই এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
আন্দরকিল্লা কোরআন অবমাননা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ প্রতিমা নিরঞ্জন প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রানা দাশ গুপ্ত হরতাল ঘোষণা