ভোলা: অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ভোলার দৌলতখান উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পাকা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, টাকার বিনিময়ে এই ঘর অসচ্ছলদের পরিবর্তে সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা সেই ঘরের বরাদ্দ পাচ্ছেন। দৌলতখান উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ইউনিয়ন সমাজকর্মী গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
দৌলতখান উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, দৌলতখান উপজেলার অস্বচ্ছল/ভূমিহীন মুক্তিদ্ধোদের জন্য আবাসন বরাদ্দ সংক্রান্ত অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি যাচাইবাছায়ের মাধ্যমে ২১ জনের নাম চূড়ান্ত করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। মন্ত্রণালয় থেকে ২১ জনের বিপরীতে ১২ জনের নামে ঘর বরাদ্দ হয়ে এলেও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশই বাদ পড়েছেন তালিকা থেকে।
দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন হাওলাদার অভিযোগ করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বর্তমানে অর্থের অভাবে তিনি জরাজীর্ণ একটি ঘরে বাস করেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিয়েই চলে তার সংসার। কিন্তু অসচ্ছল মুক্তযোদ্ধাদের ঘরের তালিকায় ২ নম্বরে তার নামটি ছিলো।
তিনি আরও জানান, ওই সময় উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো. গিয়াস উদ্দিন তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চান। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় গিয়াস উদ্দিন তার নামটি পাঠানি। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে আসা ১২টি নামের মধ্যে তার নাম আসেনি।
মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন জানান, মেঘনা নদী ভাঙনের ঘর ভিটে হারিয়ে অসহায় হয়ে দৌলতখান উপজেলা পরিষদের প্রাচীরের সঙ্গেই পরিত্যক্ত সরকারি একটি ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছেন। অর্থের অভাবে আজও একটি ঘর নির্মাণ করতে পারেনি। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের তালিকার ২১ জনের মধ্যে ১ নম্বরে ছিলো তার নাম। ওই সময় তার কাছেও ঘর পাইয়ে দেওয়া কথা বলে গিয়াস উদ্দিন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তারও নাম পাঠানো হয়নি।
তিনি অভিযোগ করে আরও জানান, ২১ জনের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে ৯ জনকে বাদ দিয়ে ১২ জনের নামে ঘর এসেছে। এই ৯ জনকে যদি মন্ত্রণালয়ই বাদ দিতো তাহলে প্রথম ১২ জন রেখে শেষের ৯ জয় বাদ পড়তো। কিন্তু এখানে তা হয়নি, আমরা যারা টাকা দিতে পারিনি তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
তবে টাকা চাওয়া বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সমাজকর্মী মো. গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন মুক্তিযোদ্ধারা। যা কিছু হয়েছে কমিটির সদস্যদের মাধ্যমেই হয়েছে। আমার এখানে কোনো হাত নেই।’
দৌলতখান উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. তারেক হাওলাদার জানান, ঘর বরাদ্দ হয়ে টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখনও নির্মাণ কাজের অনুমতির বিষয় ছাড়াও দাফতরিক কিছু কাজকর্ম রয়েছে। তার আগে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ নতুন করে যাচাইবাছাই করে দেখবো। যদি তালিকায় সচ্ছল কোনো মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকেন, প্রয়োজনে তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর দেওয়া হবে।