মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথোপকথনের পর মৃত্যু; অধরা সেই মাদক ব্যবসায়ী
১৫ অক্টোবর ২০২১ ২০:৪০
ঢাকা: রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল নাবিস্কো এলাকায় সড়কে পড়ে থাকা গাড়ি থেকে মৃত অবস্থতায় গাড়িচালক সজল কুমার ঘোষের (৩০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করা সজলের মোবাইলের কললিস্ট ঘেটে পুলিশ জানতে পারে সবশেষ একটি কল এসেছিল। সেই কলের রেকর্ড ঘেটে জানতে পারে পুলিশ, দুজনের মধ্যে মাদক কেনা বেচা সংক্রান্ত কথা হয়েছে।
পুলিশের ধারণা— অপর প্রান্তের ওই ব্যক্তি একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে মাদক কিনে তা সেবন করেছে গাড়িচালক সজল। ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারলে হয়ত মৃত্যুর রহস্য কিছুটা বাড়তে পারে।
সজলের মরদেহ উদ্ধারের এক সপ্তাহ হলে গেলেও পুলিশ ওই মাদক ব্যবসায়ীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে— সজলের পূর্ব পরিচিত ওই ব্যক্তিকে ধরতে বেশ কয়েক জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। ওই নম্বর বন্ধ থাকায় তাকে ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে। তার জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। চেষ্টা চলছে সব দিক থেকে তাকে ধরতে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) শরিফুল ইসলাম শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সজলের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে আমরা কাজ করছি। আমরা একজনকে শনাক্ত করেছি। তার সঙ্গে সবশেষ সজলের মোবাইলে কথা হয়েছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। এর বাইরেও আমরা তদন্তের অংশ হিসেবে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে কাজ চলছে। পাশাপাশি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করছি।’
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িচালক তার মালিককে ধানমন্ডিতে নামিয়ে দিয়ে মহাখালীতে গাড়ি পার্কিং করতে যাওয়ার আগে তেজগাঁও এলাকায় মাদক সেবন করেছেন। তার আগে একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে মাদক বেচাকেনার তথ্য রয়েছে। সজলের ফোনে অটো কল রেকর্ড থাকায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তি যে একজন মাদক ব্যবসায়ী তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। তাকে ধরতে পারলেও অন্তত কিছুটা রহস্য বের হতে পারে। আবার পুরো রহস্যই বেরিয়ে আসতে পারে।
পুলিশ বলছে, ওই মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও আরও অনেক তথ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তার অফিসের কথোপকথোন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে নানান তথ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। হয়ত কিছুটা সময় লাগছে। তবে রহস্য ঠিকই বের হবে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, সজল কুমার ঘোষ ধানমন্ডির এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন। ৭ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে টয়োটা ফরচুনা (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৭৯৮৬) গাড়িতে করে মহাখালী থেকে মালিককে নিয়ে ধানমন্ডিতে তার বাসায় নামিয়ে দেন। ধানমন্ডি থেকে চালক ফের গাড়িটি নিয়ে মহাখালীর ১০ তলা নাভানা টাওয়ারে পার্কিং করার জন্য রওনা হন। তবে ওইদিন বিকালে চালক নাভানা টাওয়ারে গাড়িটি পার্কিং করেননি। চালককে ফোন দিয়েও আর পাওয়া যাচ্ছিল না। রিং হলেও কল রিসিভ করা হচ্ছিল না। অনেক জায়গায় খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ৯ অক্টোবর সকালে তিনি ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নম্বর ৫৪৯।
পরে কললিস্টের লোকেশন অনুযায়ী ৯ অক্টোবর রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ৩৩৯/এ টিপারা আয়রন অ্যান্ড টিন ফ্যাক্টরি লিমিটেডের সামনে পাকা সড়কে টয়োটা গাড়িটি পড়েছিল। গাড়ির পেছনের সিটে চালকের অর্ধগলিত লাশ ছিল। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার এবং সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই আলয় কুমার ঘোষ বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আবুল কালাম শুক্রবার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সজল মারা গেছে নাকি তাকে কেউ হত্যা করেছে এ রহস্য উদঘাটনে জোর দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আশা রাখছি শিগগিরই এর রহস্য উদঘাটন হবে।’
মৃত সজলের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ধনপুর এলাকায়। তার বাবার নাম সুবল কুমার ঘোষ। রাজধানীর ভাটারা এলাকায় তার ভাই, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/একে