‘দুর্গোৎসবে হামলার দায় সরকারকে নিতে হবে’
১৬ অক্টোবর ২০২১ ১৯:১৬
ঢাকা: বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেছেন, দেশব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব ও পুজামণ্ডপে হামলার দায় সরকারকে নিতে হবে। তিনি বলেন, অন্যের উপর দায় চাপিয়ে লাভ নেই। ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদেরই এই দায়দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের সংগ্রাম মাত্র শুরু হয়েছে। যেসব ঘটনা আমাদের সঙ্গে ঘটেছে, সেগুলো লজ্জাজনক!
শনিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজা মণ্ডপ/মন্দির, বাড়িঘরে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে মিলন কান্তি দত্ত বলেন, ‘যে ঘটনাগুলো এখন ঘটছে, এগুলো কিন্তু নতুন নয়। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২ সালেও দুর্গা পুজায় সাম্প্রদায়িক শক্তি হামলা করেছিল। এই ধারা এখনও অব্যাহত আছে।’
তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলো- আনন্দের দিনে আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে। আমাদের মায়েরা সিঁদুর খেলতে পারেনি। আমাদের কষ্টের জায়গাটুকু আপনি অ্যাড্রেস করবেন না, শুধু বলবেন— এসব কাজ দুষ্কৃতকারীরা করছে, অপশক্তিরা করছে! আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং করেছি, ডিএমপির সঙ্গে মিটিং করেছি, পুলিশের আইজিপির সঙ্গে মিটিং করেছি। তারা সবাই আমাদের আস্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু কী হয়েছে, আমরা তা দেখেছি!’
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ ভৌমিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ণ এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ণ করতে হবে এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে হবে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব যেভাবে চলে, ঠিক সেইভাবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। গণতান্ত্রিক শক্তিও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না।’
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়ে নিমচন্দ ভৌমিক বলেন, ‘যারা চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, জামায়েত-হেফাজত, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেফতার করে কেবল দু/তিন মাসের শাস্তি দিলে হবে না; বরং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের অধিকার সমান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস সমাবেশে বলেন, ‘বাংলাদেশ কেবল মুসলমানের রাষ্ট্র নয়। এই দেশে একজন মুসলমানের যে অধিকার, ঠিক একই অধিকার একজন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানের। আমার হৃদয় ভেঙে গেছে, আমার মন ভেঙে গেছে। এবারের বিজয়াকে আমি বিপন্ন বিজয়া বলেছি। আমাদের সমস্ত আনন্দ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় এর প্রতিবাদ হতে হবে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আগামী সোমবার চৌমুহনীতে দাঁড়াতে চাই৷ আমরা এই ব্যাপারে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যকে বলেছি।’
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপস্থিত মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিকে যাত্রা করেন উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জির সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল প্রমুখ।
সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম