Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ অক্টোবর ২০২১ ২০:১৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকার নিজেদের এজেন্ট দিয়ে ‘কুমিল্লার ঘটনা’ ঘটিয়ে সারাদেশে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আন্দোলনকে ভিন্নপথে নিতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

শনিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি আয়োজিত কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব অভিযোগ করেন। নগরীর কাজির দেউড়ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভাস্থলের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন ছিল।

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘হিন্দু ভাইদের দুর্গাপূজায় এবার কী ঘটে গেল…। আমরা সবসময় এই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করি। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যারা আছেন তাদের পাশে আমরা ভাইয়ের মতো দাঁড়াই সবসময়। এখানে (সমাবেশে) বয়স্ক যারা আছেন, তারা জানেন। ভারতে বাবরি মসজিদের ঘটনা যখন ঘটে, তখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি তখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। যখন বাবরি মসজিদের ঘটনা ঘটল, ডিসি আমাকে ফোন করলেন, আপনারা দ্রুত একটু আসুন, আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ডিসি সাহেব বললেন, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক জেলায় জেলায় ফোন করে বলেছেন, বাংলাদেশে কোথাও যেন সাম্প্রদায়িক সমস্যার সৃষ্টি না হয়। কোথাও যেন পূজামণ্ডপ অথবা মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এভাবে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, আমাদের সফল অর্জন- সেদিন বাংলাদেশের কোথাও আমরা কোনো ঘটনা ঘটতে দিইনি। আর এরা (সরকার) কি করেছে ? এদের ভেতরে যেসব এজেন্ট আছে, তাদের এজেন্ট দিয়েই ঘটনা ঘটাবার জন্য কুমিল্লার কাজটি করেছে। ওইটার সূত্র ধরে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছে।’

বিজ্ঞাপন

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘এই চট্টগ্রামের লোক হাছান মাহমুদ সাহেব বারবার করে বলছেন, এর পেছনে নাকি বিএনপি আছে। আরে, এই ঘটনা ঘটাচ্ছ তোমরা। এসব ঘটনা যদি না ঘটাও তাহলে জনগণ তার অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করবে। জনগণের আন্দোলনকে ডাইভার্ট করার জন্য তোমরা এটা করছ। এটা করতে না পারলে তোমাদেরই সমস্যা।’

সাম্প্রতিক ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, এখানে বিরোধী রাজনীতির কোনো সুযোগ রাখা হচ্ছে না। আমাদের মিটিং করতে দেয় না। মিটিং করতে গেলে পুলিশ মারে, মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এবারও পুলিশ মিথ্যা মামলা দেওয়া শুরু করেছে। চৌমুহনীর ঘটনায় আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ-র‌্যাবের সামনে সন্ত্রাসীরা ভাংচুর করল, আর আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।’

সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-লুটপাটের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘দেড় বছর ধরে লকডাউন-লকডাউন খেলা করে সরকার মানুষের জীবিকা অর্জনের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। যারা হকারি করতেন, স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতেন, তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে। গরীব মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, সেই টাকা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা লুট করে খেয়ে ফেলেছে। আমার কথা নয়, পত্রপত্রিকা খুললেই দেখবেন- আওয়ামী লীগ কিভাবে সারাদেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ড্রাইভার, তার একাউন্টে ৪০০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছে তারা? আজ গরীব শুধু গরীব হচ্ছে। আওয়ামী লীগ মোটা থেকে আরও মোটা, তাজা থেকে আরও তাজা, আর বড়লোক থেকে আরও বড়লোক হচ্ছে।’

‘সরকারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা কোথাও নেই। এরা মিথ্যা কথা বলে। একটাও সত্য কথা কোথাও বলে না। জনগণের সঙ্গে সবসময় এরা প্রতারণা করে এসেছে। ২০০৮ সালে অবৈধ মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সহায়তা নিয়ে ক্ষমতায় গেল। তারপর আদালতকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করল। নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলে না। বলে সার্চ কমিটি। কীসের সার্চ কমিটি। সার্চ কমিটিকে তাদের লোকের একটা তালিকা দিয়ে বলবে, নির্বাচন কমিশন বানাতে। তারা সেটাই করবে।’

শুধু স্লোগান দিয়ে আন্দোলন হবে না- নেতাকর্মীদের এমন উপদেশ দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘মাথা ঠাণ্ডা করে বুদ্ধিমত্তার সাথে কৌশলে নিজেকে দৃঢ় করে আন্দোলন করতে হবে। আমাদের যৌবনে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। এখন আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই ফ্যাসিবাদি সরকার থেকে দেশকে মুক্ত করা। নেতারা যখন ডাক দেবেন, ঝাঁপিয়ে পড়বেন।’

‘আমরা খুব দ্রুত কাজ করছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিন-রাত কাজ করছেন। নেতা যারা আছেন, তারা কাজ করছেন। দলকে দ্রুত সংগঠিত করে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই দানবীয় সরকার, আওয়ামী লীগের সরকার, শেখ হাসিনার সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় কর্মীসভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, বর্তমান আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, নগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এম এ আজিজ, মো. মিয়া ভোলা, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান এবং আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন জিয়া, হারুন জামান, মাহবুব আলম, মফিজুল হক ভূঁইয়া, ইকবাল চৌধুরী, নুরুল আলম রাজু, এস এম আবুল ফয়েজ, নাজিম উদ্দীন আহমেদ, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাসেম, মন্জুর আলম মন্জু, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল্লাহ বাহার, নগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, নগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর