জড়িতদের খুঁজে বের করতে ‘একটু সময়’ চাইলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৫:১৩
ঢাকা: দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মন্দির-মণ্ডপে হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ ঘটনার পেছনে যে যা যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবগুলো উইং বিষয়টি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। আমরা সব বের করে ফেলব, তবে একটু সময় চাইছি।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনাকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
রোববার (১৭ অক্টোবর) রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে মাঝিপল্লীতে অগ্নিসংযোগ, বাড়িঘরে লুটপাট চালানো প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এ হামলার উদ্দেশ্য হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা। রংপুরে আমাদের লোক কাজ করছে। আমাদের সমস্ত উইং কাজ করবে। ফেসবুকের যে সব লিঙ্ক থেকে গুজব ছড়ানো হয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করা হচ্ছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। এই হামলার উদ্দেশ্য হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা। এই হামলার উদ্দেশ্য হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে বাংলাদেশকে দূরে সরিয়ে রাখা।’
সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে অভিযোগ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনাটি আমরা শিগগিরই জানাব। আমার তদন্তে খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। কুমিল্লার ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলক, এটি সম্প্রীতির বন্ধন বিনষ্ট করার কৌশল; সেটি না বুঝেই অনেকে অনেক কিছু করে ফেলেছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পুলিশ বাধ্য হয়ে ফায়ার করেছে। সেখানে চারজন নিরীহ মানুষ মারা গেছেন। নোয়াখালীতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য খাবারের বিরতিতে থাকার সুযোগে কিশোর বয়সীরা এসে হামলা চালায়।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বেশকিছু টেলিফোন বার্তাও পেয়েছি। যেগুলো শুনছি। একটু সময় চাইছি। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা হামলাকারীদের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে পারব।’
সম্প্রতি, কুমিল্লার পূজামণ্ডপে ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, চাঁদপুর ও রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন, মন্দির ও মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
১৩ অক্টোবর রাত সোয়া ৮টায় হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে লক্ষ্মীনারায়ণ আখড়ায় ঢিল ছোড়া হয়। একপর্যায়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে চারজন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
হামলার ঘটনার পর রাত ১১টা থেকে হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন দুপুরে জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঞ্চনা গ্রামের জোট পুকুরিয়া বাজারে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, জামায়াত ও শিবিরের একদল নেতাকর্মী জড়ো হন।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সেখানে ৭০-৮০ জনকে দেখতে পান। তারা মিছিল করে জোট পুকুরিয়া এলাকায় সর্বজনীন শিবমন্দির পূজামণ্ডপে হামলার উদ্দেশে অগ্রসর হয়। পুলিশ বাধা দিলে তারা পূজামণ্ডপে ঢুকতে না পেরে গেইট ভাঙচুর করে।
ফেনীতে ১৬ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে ফেনী শহরের কালীমন্দির এলাকায় পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভে অংশ নিতে জড়ো হচ্ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এ সময় ফেনীর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়।
একপর্যায়ে দুইপক্ষের স্লোগানের কারণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ৫টার দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ফেনীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের একটি মিছিল ঘটনাস্থলে এলে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ৫০ জন আহত হন।
কুমিল্লার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটে জকিগঞ্জে ১৪ অক্টোবর মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এদিকে ১৭ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে মাঝিপল্লীতে অন্তত ২০ হিন্দু পরিবারের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
সারাবাংলা/একে
দাঙ্গা সম্প্রীতি বিনষ্ট সাম্প্রদায়িক হামলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী